মুলায়মের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী, মমতাকে ফোন
সংখ্যা ধরে রাখাই এখন মাথাব্যথা সরকারের
রকার হয়তো এখনই পড়ছে না। কিন্তু ডিএমকে সমর্থন প্রত্যাহারের ২৪ ঘণ্টা পরে পরিষ্কার, সংখ্যার জোর কমে যাওয়ায় কতটা বেকায়দায় কংগ্রেস! সরকারকে সমর্থন জানিয়েও কেন্দ্রীয় ইস্পাতমন্ত্রী বেণীপ্রসাদ বর্মার ইস্তফার দাবিতে আজ নতুন করে গোল পাকাতে নেমে পড়েছে সমাজবাদী পার্টি। যে মুলায়ম সিংহের জন্য একদা ১০ জনপদের দরজা ভেজিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাঁর কাছে গিয়েই হাত জোড় করে দুঃখ প্রকাশ করতে হল সনিয়া গাঁধীকে। যোগাযোগ করতে হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও।
বেণীপ্রসাদ বর্মা মুলায়মকে সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে তুলনা করার পর থেকেই ক্ষুব্ধ ছিল সমাজবাদী পার্টি। সে জন্য গত পরশু সংসদে ক্ষমাও চেয়ে নেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমল নাথ। কিন্তু ডিএমকে সরকার ছাড়ার পরক্ষণেই মুলায়মের পুরনো ‘গুস্সা’ আজ ফের জেগে ওঠে। লোকসভায় মুলায়মকে শান্ত করতে এক দিকে যেমন সনিয়া মার্জনা চেয়ে নেন, তেমনই সপা প্রধানকে ডেকে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও। এমনকী, বেণীকে ডেকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন মনমোহন-সনিয়া। বেণী ইস্তফা দেননি ঠিকই, কিন্তু দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশে প্রকাশ্যে বলেছেন, “আমার মন্তব্যে যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন, তবে আমি দুঃখিত।”
তবে বেণীকে কেন্দ্র করে আজ যা ঘটল, তাকে বড় ছবির ছোট অংশ বলে মনে করছেন রাজনীতির লোকজনেরা। আসল কথা, হাতি কাদায় পড়েছে। ফলে লোকসভা ভোটের আগে তাকে হেনস্থা করার সুযোগ এখন ছাড়ছে না কেউই। বিশেষ করে মুলায়ম, মায়াবতী এবং শরদ পওয়ার। তাই সরকার টিকিয়ে রাখতে তাদের তোয়াজ করেই চলতে হবে কংগ্রেসকে। তাই মমতার মতো পুরনো শরিক, নীতীশ কুমার এবং বামেদের শরণাপন্নও হতে হচ্ছে কংগ্রেসকে। রাহুল গাঁধী যখন সংগঠন সাজাতে ব্যস্ত, তখন সেই দৌত্য সঞ্চালনায় প্রধান ভূমিকা নিয়েছেন সনিয়া গাঁধী। তাঁর হয়ে কখনও কমল নাথ, কখনও চিদম্বরমরা যোগাযোগ স্থাপন করছেন বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের সঙ্গে।
ঘরোয়া আলোচনায় এ ব্যাপারে কংগ্রেসের একাধিক বর্ষীয়ান নেতা আজ দাবি করেন, এতে দলের মর্যাদাহানির প্রশ্ন নেই। কোমরে যখন জোর নেই, তখন ঝুঁকতেই হবে। রাজনীতির সেটাই দস্তুর। কেউ কেউ বলছেন, জোট রাজনীতির স্বার্থে বুড়ো বয়সে অটলবিহারী বাজপেয়ীকেও ছুটে আসতে হয়েছিল মমতার বাড়িতে। ওই নেতাদের কথায়, বরং আগামী দিনে এমন সমস্যা অহরহ সামলাতে মানসিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে কংগ্রেস।
কেন্দ্রে শাসক দলের এই বিপাকের সুযোগ বিজেপিও যে নিচ্ছে, তার নমুনা আজ দেখা গিয়েছে সংসদে। বিজেপিকে রাজনৈতিক ভাবে কার্য ‘অচ্ছ্যুৎ’ বলে মনে করেন মুলায়ম। অথচ কংগ্রেসের অস্বস্তি বাড়াতে আজ বিজেপি আগ বাড়িয়ে মুলায়মের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছে। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মুলায়মকে খেপিয়ে দিতে লোকসভায় বেণীর মন্তব্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ। পরে সুষমার সঙ্গে দেখা করে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি মুলায়মও। আজ মুলায়মের সঙ্গে বৈঠক করেন শরদ পওয়ার। এই দুই ঝানু রাজনীতিকের বৈঠক, কৌশল এবং আলোচনার পরিণতি ভবিষ্যতে যাই হোক, বর্তমান পরিস্থিতিতে জল্পনায় রঙ দেওয়ার জন্য যথেষ্ট বলে মনে করছেন অনেকেই।
তবে চলতি অস্বস্তিকে পাশ কাটিয়ে ওঠার একটা আপ্রাণ চেষ্টাও আজ দেখা গিয়েছে কংগ্রেস শিবিরে। তার কৌশল নির্ধারণের জন্য গত কাল প্রায় মধ্য রাত পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে দলের কোর গ্রুপের বৈঠক চলে। তার পর আজ সকালে সংসদ বসার আগেই সাংবাদিক বৈঠক করে চিদম্বরম বলেন, “সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে কোনও সঙ্কট নেই। সব কাজই যে ঠিকঠাক চলছে তার প্রমাণ হল, গত কাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে খাদ্য নিরাপত্তা বিল পাশ হয়েছে, লোকসভায় পাশ হয়েছে ফৌজদারি আইন সংশোধন বিল।” চিদম্বরম আরও জানান, শ্রীলঙ্কার তামিলদের ওপর অত্যাচার ও তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কংগ্রেস ও সরকার যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। সংসদে এ ব্যাপারে একটি প্রস্তাব আনার কথা করুণানিধিকে পরশু রাতেই জানানো হয়েছিল। কিন্তু সরকারের সেই প্রস্তাবের খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার আগেই ডিএমকে কেন সমর্থন প্রত্যাহার করে নিল, বোঝা যাচ্ছে না, জানালেন তিনি। তা সত্ত্বেও শ্রীলঙ্কায় তামিলদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের জন্য একটি প্রস্তাব পাশ করতে চাইছে কেন্দ্র। সে জন্য রাতে একটি সর্বদল বৈঠকও ডাকা হয়। কিন্তু সেখানে দেখা যায়, মুলায়ম, নীতীশ এবং বিজেপি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। তারা জানিয়ে দেয়, কূটনীতির স্বার্থেই কোনও নির্দিষ্ট দেশের নামে প্রস্তাব আনার বিরোধী তারা।
রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, মুলায়ম বা বিজেপি প্রস্তাবের বিরোধিতা করে প্রকারান্তরে কংগ্রেসের সুবিধাই করে দিল। কী ভাবে? ওই সূত্রের ব্যাখ্যা, প্রস্তাবে সরাসরি শ্রীলঙ্কার নাম করে কংগ্রেস বোঝাতে চাইল, তামিল আবেগকে গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করেছে তারা। এমনকী, ডিএমকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরেও সেই অবস্থান থেকে সরেনি। এর ফলে তামিলদের মধ্যে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করার একটা চেষ্টা তো হলই, তা ছাড়াও পরবর্তী সময়ে ডিএমকে বা এডিএমকে যদি জোটে আসতে চায়, তার জন্য বার্তাও দেওয়া রইল। অন্য দিকে, সর্বদলে প্রস্তাবটি নিয়ে সর্বসম্মতি না হওয়ায় কংগ্রেসের আর বিষয়টি নিয়ে এগোনোর দায়ও রইল না। তবে ডিএমকে সংসদে গোল পাকাতে পারে, এই আশঙ্কাও রয়েছে। এ দিনের বৈঠকে সংসদের কাজ ঠিকঠাক ভাবে চালানো নিয়েও কথা হয়েছে।
কাঁটা অবশ্য অন্য জায়গায়। সনিয়ার দুঃখপ্রকাশ সত্ত্বেও মুলায়মের অবস্থান এ দিন স্পষ্ট নয়। কাল তিনি দলের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক ডেকেছেন। তার আগে দলের কাউকে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে বারণ করেছেন। আবার কেন্দ্রকে খোঁচা দিয়ে বলেছেন, “মনমোহনের থেকে বাজপেয়ীর নেতৃত্ব ভাল ছিল।” অন্য দিকে, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী মায়াবতী চুপ করে রয়েছেন। কাল যে তিনি নতুন কিছু নিয়ে ফোঁস করবেন না, তা কে বলতে পারে!
তাই উদ্বেগের মেঘ আজ পুরোপুরি কাটেনি। প্রশ্ন উঠেছে পেনশন ও বিমা বিলের মতো সংস্কার কর্মসূচি এবং খাদ্য নিরাপত্তার মতো জনদরদী বিলের ভবিষ্যৎ নিয়েও। অনেকেই মনে করছেন, সে সব আপাতত জলে গেল। বরং কংগ্রেসকে এখন অনেকটাই শক্তি ক্ষয় করতে হবে সংসদে সংখ্যা ধরে রাখার জন্য।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.