|
|
|
|
শ্রীলঙ্কা প্রশ্নে কেন্দ্রের পাশে, সব পথ খুলে রাখছেন মমতা |
অগ্নি রায় • নয়াদিল্লি |
ডিএমকে মন্ত্রীরা যে দিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ছাড়লেন, সে দিনই কংগ্রেসকে কিছুটা স্বস্তি দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেত্রী জানিয়ে দিলেন, শ্রীলঙ্কা প্রশ্নে সরকারের পাশেই দাঁড়াচ্ছে তাঁর দল।
তার মানে অবশ্য এই নয় যে, তৃণমূল এখনই ইউপিএ-তে ফিরে আসছে। তবে সরকারকে সমর্থনের কথা বলে তাঁর কংগ্রেস বিরোধিতার ঝাঁঝ যে মমতা একটু হলেও কমিয়ে দিলেন, তাতে সন্দেহ নেই। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “এটা আসলে নরম-গরম নীতি। মমতা আসলে দু’রকমই বার্তা দিতে চাইছেন কেন্দ্রকে।” মালদহে প্রধানমন্ত্রী ও সনিয়া গাঁধীর সভায় মমতার অনুপস্থিতি এবং প্রতিরক্ষা কেলেঙ্কারি নিয়ে রাজ্যসভায় ডেরেক ও’ব্রায়েনের গাঁধী পরিবারকে আক্রমণ যদি কড়া বার্তা হয়, তা হলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বাংলাদেশ সফরে মুকুল রায়কে পাঠানো এবং আজকের সিদ্ধান্ত নরম অবস্থানের ইঙ্গিত।
কেন এই পথে চলছেন মমতা?
দিল্লির রাজনীতিকদের অনেকেরই মতে, কংগ্রেসকে ছাড়া আসন্ন লোকসভা ভোটে তৃণমূল নাস্তানাবুদ হবে। আর সাংসদ হাতে না-থাকলে জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্ব হারাবেন মমতা। সে ক্ষেত্রে লোকসভা ভোটের আগে ফের কংগ্রেসের হাত ধরতে পারলে সেটা তাঁর পক্ষে লাভজনকই হবে। কংগ্রেস নেতাদের একাংশ বলছেন, এত দিন ব্যক্তিগত স্তরে নরম অবস্থানের ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন মমতা। আজ প্রকাশ্যেই দিলেন।
তা হলে কড়া অবস্থান কেন?
লোকসভা নির্বাচনের পরে দিল্লির রাজনৈতিক ছবিটা কী দাঁড়াবে, সেটা বুঝে উঠতে পারছেন না তৃণমূল নেত্রী। তাই তিনি সব দরজাই খোলা রাখতে চাইছেন। বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, তৃণমূল নেত্রীর কাছ থেকে সঙ্কেত পাচ্ছেন তাঁরাও। শাহনওয়াজ হুসেন, রাজীব প্রতাপ রুডিরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন মমতার সঙ্গে। কংগ্রেসের একাংশের আশঙ্কা, লোকসভা ভোটে তাঁদের সঙ্গে জোট বাঁধলেও ভোটের পরে মমতা বিজেপি-র দিকে ঢলে পড়তে পারেন। |
‘‘আমরা তামিল ভাইবোনদের পাশে রয়েছি। তবে একই সঙ্গে আমাদের দল বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে নাক না গলানোর নীতি নিয়ে চলে। এই নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের উপরেই ছেড়ে দিই।’’— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
|
তবে আপাতত রাজ্যে পায়ের তলার মাটি ধরে রাখতে কিন্তু কংগ্রেসকেই দরকার মমতার। ইউপিএ ছাড়ার পরে তিনটি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে তৃণমূলের ফল আশানুরূপ হয়নি। মমতার নিজস্ব জনসমর্থনেও কোথাও কোথাও ভাটার ইঙ্গিত মিলছে। যেমন গত কাল বিনপুরের সভায়। মমতা মঞ্চে থাকা সত্ত্বেও কার্যত ফাঁকা মাঠ তৃণমূল নেতৃত্বকে বড় ধাক্কা দিয়েছে। উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি পূরণ না-করা এবং মুকুল রায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে মতবিরোধের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। দলের দুই শীর্ষ নেতার সংঘাত আরও তীব্র হলে কংগ্রেস সেই সুযোগ নিয়ে তৃণমূল ভাঙানোর চেষ্টা করতে পারে। যা মমতার বাড়তি দুশ্চিন্তার কারণ।
সেই সঙ্গে রয়েছে প্রশাসনিক এবং আর্থিক সমস্যা। বাড়তি অর্থ সাহায্য চেয়ে কেন্দ্রের কাছে বারবার আর্জি জানিয়েও ফল হয়নি। কংগ্রেসের থেকে দূরে থাকলে সেই আবেদনে সাড়া মেলার সম্ভাবনা খুবই কম।
ফলে আজ খোলাখুলিই কেন্দ্রের পাশে দাঁড়িয়েছেন মমতা। বিকেলে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমল নাথের সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয়। তার পরেই লোকসভায় তৃণমূল দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে মমতা নির্দেশ দেন, শ্রীলঙ্কা সংক্রান্ত প্রস্তাবে সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে তার পাশেই থাকার জন্য। আজ স্পিকারের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে গিয়ে সুদীপবাবু বলেন, “স্থানীয় আবেগকে আমরা সব সময়ই মর্যাদা দিই। কিন্তু যখন আন্তর্জাতিক নীতির প্রশ্ন আসে, তখন আমরা মনে করি সরকারের ভূমিকাকে সমর্থন করা উচিত। কোনও বিদেশি রাষ্ট্র সম্পর্কে কেন্দ্র যদি কোনও অবস্থান নিতে চায়, তা হলে সেটা নেওয়ার অধিকার তাদের আছে।”
মমতা নিজেও ফেসবুকে লিখেছেন, “আমরা তামিল ভাই-বোনদের পাশে রয়েছি। তবে একই সঙ্গে আমাদের দল বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে নাক না-গলানোর নীতি নিয়ে চলে। এই নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের উপরেই ছেড়ে দিই।”
তবে এই নরম অবস্থানের বিপরীতে রাজ্যের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তুলে সংসদে সরকারের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার জন্য দলীয় সাংসদদের নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। আগামিকাল সকালে গাঁধী মূর্তির সামনে ধর্নায় বসবেন তৃণমূল সাংসদেরা। তার পর সংসদ অচল করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সুদীপবাবুর কথায়, “পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার
কোনও ইঙ্গিত কেন্দ্রের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে না। বরং রেল বাজেটে রাজ্যের প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অর্থ কেটে নেওয়া হয়েছে। আমরা রেল এবং সাধারণ বাজেট নিয়ে যে সব প্রশ্ন তুলেছিলাম, তারও কোনও উত্তর দিচ্ছে না কেন্দ্র। পাটকলগুলির অবস্থা শোচনীয়। মাওবাদী এলাকার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ ঢিমেতালে দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে এই বৈষম্যের প্রতিবাদ করব আমরা।”
এ দিকে, শ্রীলঙ্কার প্রশ্ন সামনে রেখে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে নতুন করে যোগাযোগ তৈরি হওয়ায় আগ বাড়িয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে সখ্যের ইচ্ছা প্রকাশ করতে চাইছেন না সিপিএম নেতৃত্ব। কংগ্রেস-তৃণমূল ঘনিষ্ঠতা শেষ পর্যন্ত যদি বাড়ে, তা হলে সিপিএম কংগ্রেস-বিরোধিতার সুর চড়াবে। ডিএমকে-র সমর্থন প্রত্যাহারের পর বামেদের সমর্থন কংগ্রেসের কতটা দরকার হবে, তা আর একটু সময় নিয়ে বুঝে নিতে চাইছেন প্রকাশ কারাট-সীতারাম ইয়েচুরিরা।
গত কাল সন্ধ্যায় পলিটব্যুরোর বৈঠকে ঠিক হয়, আরও ক’দিন পরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা হবে। আজ আর তাই পলিটব্যুরোর বৈঠক হয়নি। ঠিক হয়েছে, আগামী ১২-১৪ এপ্রিল পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।
|
পুরনো খবর: কেন্দ্রে সঙ্কট বাড়িয়ে সমর্থন তুলল ডিএমকে |
|
|
|
|
|