সরকার পড়বে না, দাবি কংগ্রেসের
কেন্দ্রে সঙ্কট বাড়িয়ে সমর্থন তুলল ডিএমকে
তৃণমূল কংগ্রেসের পর এ বার দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাজাঘাম!
শ্রীলঙ্কায় তামিল হত্যার প্রতিবাদে এই দ্বীপরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংসদ ও রাষ্ট্রপুঞ্জে কঠোর প্রস্তাবের দাবিতে অনড় থেকে ইউপিএ থেকে আজ সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা করলেন ডিএমকে প্রধান করুণানিধি। রাতেই রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে আনুষ্ঠানিক ভাবে সমর্থন প্রত্যাহারের চিঠি দিলেন ডিএমকে সাংসদ টি আর বালু। লোকসভা ভোটের আগে সংসদে খাদ্য নিরাপত্তা ও জমি বিল পাশ করিয়ে কংগ্রেস যখন রাজনৈতিক রসদ সংগ্রহে তৎপর, তখন এ ভাবেই সনিয়া-মনমোহনকে সঙ্কটে ফেলে দিলেন এই দ্রাবিড় নেতা। সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি এই দক্ষিণী ঝঞ্ঝা আগাম ভোটের জল্পনাও উস্কে দিল।
ডিএমকে-র এই সমর্থন প্রত্যাহারের পরেও সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে এখনই আশঙ্কার কারণ দেখছেন না রাজনৈতিক দলগুলির শীর্ষ নেতৃত্ব। অনেকেই মনে করেন, মুখে যা-ই বলুন, বিজেপি নেতারা এখনই ভোটে যাওয়ার ব্যাপারে কিছুটা দ্বিধায়। তবে এই ঘটনায় তাঁদের খুশি হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারণ নরেন্দ্র মোদীর পথে কাঁটা বিছোতে কংগ্রেস যখন নীতীশ কুমারকে অক্সিজেন যোগাচ্ছে, তখন তাদেরই ছেড়ে যাচ্ছে পুরনো বন্ধুরা! শুধু তা-ই নয়, লোকসভা ভোটের আগে আরও স্পষ্ট হয়ে গেল শাসক জোটের করুণ দশা। ইউপিএ-তে সংখ্যার হিসেবে ২০৩ সদস্যের কংগ্রেসের পারে দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক শরদ পওয়ারের ৯ সদস্যের এনসিপি!
এ দিন সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা করে সরকারের সঙ্কট বাড়ালেও সরাসরি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কিন্তু সরব হননি অশীতিপর করুণানিধি। চেন্নাইয়ে ডিএমকে-র সদর দফতর ‘আন্না আরিভালামে’ বসে করুণানিধি বলেন, “শ্রীলঙ্কায় তামিলদের গণহত্যার প্রতিবাদে কঠোর প্রস্তাবে এখনও সম্মত নয় ভারত সরকার। এর পরেও সেই সরকারে সামিল থাকলে তা ইলম তামিলদের প্রতি অবিচার করা হবে। সেই কারণেই কেন্দ্রে সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ডিএমকে।” করুণানিধি এ-ও জানান, আজকালের মধ্যেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেবেন তাঁর বড় ছেলে আলাগিরি-সহ ডিএমকে-র পাঁচ মন্ত্রী। ডিএমকে-র পাশাপাশি আজ ইউপিএ ছাড়ার ঘোষণা করেছে ১ সাংসদের তামিল আঞ্চলিক দল ভিসিকে-ও।
তৃণমূল সমর্থন প্রত্যাহারের পরেই খাতায়কলমে সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছিল ইউপিএ সরকার। সেই দুর্বল ইউপিএ আজ আরও রুগ্ণ হয়ে পড়ল। করুণানিধি অবশ্য কিছুটা ধন্দ রেখে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “এখনও দু’দিন সময় রয়েছে সরকারের হাতে। এর মধ্যে তামিল গণহত্যার বিরুদ্ধে সংসদে প্রস্তাব পাশ হলে সিদ্ধান্ত বিবেচনা করা যেতে পারে।” বস্তুত করুণানিধির এই বক্তব্য মাথায় রেখেই ডিএমকে-কে তুষ্ট করতে সংসদে শ্রীলঙ্কা প্রশ্নে প্রস্তাব আনতে চলেছে কেন্দ্র। এ দিন কংগ্রেস কোর গ্রুপের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।ডিএমকে যে শেষ পর্যন্ত সমর্থন তুলে নিতে পারে, সেই অশনিসংকেত গত কালই পেয়েছিলেন কংগ্রেস নেতারা। চেন্নাইয়ে করুণানিধির সঙ্গে বৈঠকের পর চিদম্বরম, এ কে অ্যান্টনি এবং গুলাম নবি আজাদরা বুঝে যান হাওয়া খারাপ। করুণানিধিকে শেষ বারের মতো বার্তা দিতে আজ সকালে সক্রিয় হন সনিয়া গাঁধী। কংগ্রেস সংসদীয় দলের বৈঠকে তিনি বলেন, “শ্রীলঙ্কায় তামিলদের দুর্গতি নিয়ে আমরাও উদ্বিগ্ন। যে ভাবে তাঁদের প্রাপ্য রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। বিশেষ করে ২০০৯ সালের সংঘাতে নিরীহ শিশু ও নাগরিকদের ওপর যে অত্যাচার করা হয়েছে, তা উপেক্ষা করা যায় না। সেই কারণেই শ্রীলঙ্কায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে একটি নিরপেক্ষ এবং বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি আমরাও করছি।”
তবে ডিএমকে নেতৃত্বের বক্তব্য, সনিয়ার মতো এই ধরনের কঠোর অবস্থান কেন্দ্রকে রাষ্ট্রপুঞ্জেও নিতে হবে। তা ছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো লঘু শব্দের ব্যবহার করলে চলবে না, গণহত্যার প্রসঙ্গটিও উল্লেখ করতে হবে। তাই সনিয়া কথায় চিঁড়ে ভেজেনি। বরং কংগ্রেস সংসদীয় দলের বৈঠকে সনিয়ার বক্তৃতার এক ঘণ্টার মধ্যেই সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা করে দেন করুণানিধি।
এই পরিস্থিতিতে অবশ্য সাহসী মুখ দেখাতে চেয়েছে কংগ্রেস। করুণানিধির সমর্থন তোলার পরপরই কংগ্রেস কোর গ্রুপের বৈঠক হয়। তার পরেই চিদম্বরম বলেন, “সংসদে প্রস্তাব আনার বিষয়টি এখনও বিবেচনা করা হচ্ছে। ডিএমকে নেতৃত্বকে বোঝানোর চেষ্টাও করা হচ্ছে। তবে সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে কোনও সঙ্কট নেই।”
কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়ে একই কথা বলেছেন বসপা নেত্রী মায়াবতীও। দলিত নেত্রী জানিয়েছেন, ইউপিএ-র উপর তাঁর সমর্থন অটুট রয়েছে। আর ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস নেতারা বলেছেন, লোকসভা ভোটের আগে ইউপিএ ছাড়ার সুযোগ খুঁজছিলেন করুণানিধি। অতীতে পোটা আইনের বিরোধিতার অজুহাতে এক সময় তাঁরা এনডিএ ছেড়েছিলেন। কারণ, লোকসভা ভোটে শ্রীলঙ্কা তথা তামিল আবেগের বিষয়টিকেই তাঁরা এ বার মূলধন করতে চান। পাশাপাশি কেন্দ্রে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার দায় লোকসভা ভোটে এড়াতে চান করুণানিধি। সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলেও আপাতত সংসদে সরকারের বিরুদ্ধে ডিএমকে ভোট দেবে না বলে আশাবাদী কংগ্রেস।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, ডিএমকে সমর্থন তুলে নিলেও স্থায়িত্বের সমস্যা নেই। কারণ, প্রথমত, বাইরে থেকে এখনও সরকারকে সমর্থন জানাচ্ছে সপা ও বসপা। তা ছাড়া মায়াবতী, করুণানিধি বা বামেরা কেউই লোকসভার অকাল ভোট চান না। তাঁরা চান সময়েই লোকসভা ভোট হোক, যাতে নিজেদের ঘর গোছাতে তাঁরা আরও সময় পান। তাই সংসদে ভোটাভুটিতে তাঁরা এমন কোনও অবস্থান নেবেন না, যাতে সরকার পড়ে যায়।
তবে কংগ্রেসের ওই নেতা মেনে নেন, সরকার না পড়লেও কংগ্রেসের অবস্থা আরও করুণ হল। গোটা দেশে বার্তা গেল যে, ক্রমশই জীর্ণ ও দীর্ণ হয়ে পড়ছে ইউপিএ এবং কংগ্রেস। ডুবন্ত জাহাজ ছেড়ে তাই একের পর এক শরিক বেরিয়ে যেতে চাইছে।
সেই ভাবমূর্তি রক্ষার দায়েই তাই আজ সক্রিয় হয়ে কোর গ্রুপের বৈঠকে কংগ্রেস নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেন, শ্রীলঙ্কা নিয়ে সংসদে আলোচনা ও প্রস্তাব আনতে চাইবে সরকার। কংগ্রেসের এক মুখপাত্রের কথায়, সংসদে শ্রীলঙ্কা নিয়ে আলোচনা হলে বিজেপিকেও তাদের অবস্থান জানাতে হবে। সেখানেই এটাও স্পষ্ট হবে যে, ডিএমকে যে ধরনের প্রস্তাবের দাবি জানাচ্ছে, সর্বভারতীয় স্তরে কোনও দলই তা মানছে না। ফলে কংগ্রেস একা দায়ী নয়। কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, অন্তত সে টুকু বার্তা গেলেও কিছুটা ক্ষত নিরাময় হতে পারে।

দ্রাবিড় দাপট
৩১ মার্চ, ১৯৯৯: বাজপেয়ী সরকারের শরিক হয়েও সনিয়ার সঙ্গে প্রথম বৈঠক জয়ললিতার।
১৪ এপ্রিল, ১৯৯৯: এনডিএ ছাড়লেন জয়ললিতা। বাজপেয়ীর ১৩ মাসের সরকারের পতন।
২ জুন, ১৯৯৯: এনডিএ-তে এলেন করুণানিধি।
২৯ অগস্ট, ২০০২: বিদেশিনি প্রশ্নে সনিয়াকে আক্রমণ জয়ললিতার। পোটা-কে সমর্থন। বার্তা বিজেপি-কে।
২০ ডিসেম্বর, ২০০৩: পোটা-র বিরোধিতায় এনডিএ ছাড়লেন করুণানিধি।
১২ ফেব্রুয়ারি, ২০০৪: চেন্নাইয়ে করুণানিধি-সনিয়া বৈঠক। কংগ্রেসের সঙ্গে এল ডিএমকে।
১৯ মার্চ, ২০১৩: ইউপিএ ছাড়ার ঘোষণা করুণানিধির।
লোকসভায় দলগত অবস্থান
ইউ পি এ বাইরে থেকে সমর্থন এন ডি এ ইউপিএ থেকে যারা বেরিয়ে গেছে
কংগ্রেস ২০৩
এনসিপি ৯
আর এল ডি ৫
জাতীয় কনফারেন্স ৩
অন্যান্য ১৩
সপা ২২
বসপা ২১
আরজেডি ৩
জেডিএস ৩
বিজেপি ১১৫
জেডিইউ ২০
শিবসেনা ১১
অকালি ৪
তৃণমূল ১৯
ডিএমকে ১৮
ভিসিকে ১
ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চা ২
এআইএমআইএম ১
মোট ২৩৩ মোট ২৮২ মোট ১৫০ মোট ৪১
• বাম ২৪ • অন্যান্য ৩৬


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.