মোদী-নীতীশ সংঘাতে ভরসা জেটলিই
ক দিকে নমো, অন্য দিকে নিকু!
নমো মানে নরেন্দ্র মোদী। নিকু অর্থাৎ নীতীশ কুমার।
আজকের রাজনীতির দুই সর্বাধিক আলোচিত ব্যক্তিত্বের ডাকনাম এটাই। তাঁদের সম্মুখ সমরে যখন জটিল হয়ে উঠেছে এনডিএ-র রাজনীতি, তখন জয়পুরে তিন দিনের চিন্তন বৈঠকে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত ফরমান জারি করেছেন, এই সংঘাত পরিহার করে সামনে এগোতে হবে বিজেপি-কে। সঙ্ঘ পরিবারের অধিকাংশ শীর্ষস্থানীয় নেতাই মনে করেন, হিন্দুত্ব বিজেপির কাছে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হলেও আপাতত ২০১৪ সালে ক্ষমতা দখল করাই তাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে, নমো-নিকুর বিরোধ মেটাতে দায়িত্ব দেওয়া হবে অরুণ জেটলিকে।
জেটলি কেন?
কারণটা সহজ। তিনি মোদী এবং নীতীশ, দু’জনেরই ঘনিষ্ঠ। পান থেকে চুন খসলে তাঁর গাঁধীনগরের বাসভবন থেকে মোদী প্রথম ফোন করেন দিল্লিতে জেটলির কৈলাশ কলোনির বাড়িতে। অন্য দিকে, বিহারকে বিশেষ আর্থিক মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে রামলীলা ময়দানে শক্তি প্রদর্শন করে মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ের সামনে চিনের প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে পড়ার দিনেই জেটলির বাড়িতে নৈশভোজ সারেন নীতীশ।
নিকুর কাছে নমো ‘সাম্প্রদায়িক’। আর নমোর কাছে নিকু ‘কাল কা যোগী’। এমন পরিস্থিতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন জেটলি। তাঁর কথায়, “সংঘাত রাজনীতির অঙ্গ। তাকে প্রশমিত করাও রাজনৈতিক দক্ষতা।”
সংঘাত প্রশমনের জন্য এ যাবৎ কী কী করেছেন জেটলি?
প্রথমত, সঙ্ঘের নির্দেশে মোদীর সঙ্গে কথা বলে গত রবিবার মহারাষ্ট্রে তাঁর সভা বাতিল করিয়েছেন। কারণ, ওই দিনেই রামলীলায় নীতীশের সভা ছিল। দ্বিতীয়ত, নীতীশ-ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা তথা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী গত শনিবার দলের রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকে নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, মোদীকে ছাড়া দল চলবে কী করে? তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেই বৈঠকে হাজির ছিলেন জেটলি। দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, পর্যবেক্ষক হিসেবে অনন্ত কুমারের যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত জেটলিকে পাঠানো হয়। কারণ, তিনি ছাড়া মোদী বনাম নীতীশ ম্যাও সামলানো মুশকিল। তৃতীয়ত, মোদীকে পটনায় এনে সভা করানোর যে পরিকল্পনা বিহার বিজেপি-র প্রাক্তন সভাপতি সি পি ঠাকুর করেছিলেন, তা নয়া সভাপতি মঙ্গল পাণ্ডেকে দিয়ে নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছেন জেটলি। মঙ্গল পাণ্ডে নীতীশ-সুশীলের ঘনিষ্ঠ। নীতীশের কৃপাতেই তিনি বিধান পরিষদের সদস্য। সভা পিছনোর ঘোষণায় ঠান্ডা হয়েছেন নীতীশ।
বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, সর্বভারতীয় রাজনীতির পরিস্থিতি এখন তাঁদের পক্ষে অনুকূল। তৃণমূল এবং ডিএমকে ইউপিএ ছেড়ে গিয়েছে। শাসক জোটের সমস্যা ক্রমশ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে এনডিএ-র ভাঙন কোনও অবস্থাতেই চান না তাঁরা। তাই জেটলি বারবার মোদীকে বোঝাচ্ছেন যে, তিনি অপ্রতিরোধ্য হলেও নিজের ক্ষমতার উপরে এতটা নির্ভরশীল হওয়া উচিত হবে না, যাতে এনডিএ ভেঙে যায়। মোদীও বলেছেন “আমার জন্য এনডিএ-তে ভাঙন ধরুক, তা চাই না। প্রধানমন্ত্রিত্ব নয়, আমার কাছে উন্নয়নই হল সব চেয়ে বড়। সেটা নিয়েই বিজেপি-র এগোনো উচিত।”এই পরিস্থিতিতে বিজেপি প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থীর নাম এখনই ঘোষণা করবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। জেডিইউ নেতা শরদ যাদবের কথায়, “বিজেপি-কে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে হলে এনডিএ-র সঙ্গে কথা বলেই করতে হবে।” তবে মোদীকে বিজেপি প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান করলে আপত্তির কারণ দেখছেন না তিনি। তাঁর মতে, এটা একান্ত ভাবেই বিজেপি-র নিজস্ব সিদ্ধান্ত। নীতীশও যাতে ওই পদে মোদীকে মেনে নেন, সে ব্যাপ্যারে তৎপর জেটলি।
তবে মোদীর বিরুদ্ধে সরব হলেও নীতীশের পক্ষে এনডিএ ছাড়া সহজ হবে না বলেই মনে করছেন বিজেপি নেতারা। কারণ, নিজস্ব কুর্মি এবং মুসলিম ভোটের পাশাপাশি বিজেপি-র সঙ্গে থাকার কারণে উচ্চবর্ণ হিন্দুদের যে বোনাস ভোটটি নীতীশ পান, তার মূল্য কম নয়। অতএব পরে কী হবে সে প্রশ্ন স্বতন্ত্র, কিন্তু ভোটের আগে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে এনডিএ ছাড়া সম্ভব নয় বলেই বিজেপি নেতাদের ধারণা। নীতীশ নিজেও জেটলিকে বলেছেন, তিনি এমন কিছু করবেন না। তবে বিজেপি যদি আগ বাড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী পদে মোদীর নাম ঘোষণা করে দেয়, তা হলে তাঁর পক্ষে সমস্যা হবে।
বিজেপি সূত্র মনে করছে, মোদী-নীতীশ লড়াই চলতে থাকলে প্রধানমন্ত্রী পদে তৃতীয় কোনও নাম উঠে আসতে পারে। বুড়ো হাড়ে ভেল্কি দেখাতে পারেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। আবার সুষমা স্বরাজ বা জেটলি নিজেও হতে পারেন দু’পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতা। তবে আপাতত দুই যুযুধান নেতাকে মেলানোই জেটলির চ্যালেঞ্জ।
কর্নাটক থেকে মধ্যপ্রদেশ এর আগে দলের অনেক ঝগড়া মিটিয়েছেন জেটলি। এ বার মোদী-নীতীশ দ্বন্দ্ব মিটিয়ে সেই সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে পারেন কিনা, সেটাই দেখার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.