আক্রমণের মঞ্চ থেকে নামতেই নয়া চিন্তা
সিপিএম কি ফের ত্রাতা হবে মনমোহনদের, দ্বিধায় দল
রছিলেন কংগ্রেসের সমালোচনা। কাল হল করুণানিধির সমর্থন তোলায়! পায়ের নীচে জমি আগে না, আদর্শগত অবস্থান? ফের সেই একই দোটানায় পড়ে গেল প্রকাশ কারাট ও তাঁর দল।
সিপিএমের বিকল্প নীতির ধ্বজা তুলে ধরে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনের ডাক দেওয়ার পরেই প্রকাশ কারাটকে আজ প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়, মনমোহন সরকার থেকে ডিএমকে সমর্থন তোলার পরে সিপিএম কতটা তার সুযোগ নেবে? এর কোনও জবাব দেননি কারাট। বলেছেন, দলে আলোচনা হবে। বাকি বামেদেরও জবাব ছিল একই।
দলের অন্দরের আশঙ্কা ও আপত্তি উড়িয়ে আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আদর্শগত প্রশ্নে প্রথম ইউপিএ সরকার থেকে সমর্থন তুলেছিল দল। ভোট ভাগের অঙ্ক বদলে যাওয়ায় জমি খোয়াতে হয় পশ্চিমবঙ্গে। হারাতে হয় ৩৪ বছরের সরকার। পশ্চিমবঙ্গে পায়ের নীচে জমি এখনও কমেই চলেছে। সাম্প্রতিক তিন বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তার প্রমাণ মিলেছে। আজ বিকেল থেকে যার ময়নাতদন্তও শুরু করেছে পলিটব্যুরো। এরই মধ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে আরও এক বার জোরদার দোটানায় পড়ল সিপিএম।
আগামী লোকসভা নির্বাচনের পরে বামেদের সমর্থন নিয়ে তৃতীয় ইউপিএ সরকার গড়ার জল্পনা চলছিলই। সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে রাহুল গাঁধীর ঘনঘন বৈঠক সেই জল্পনাকে আরও উসকে দিয়েছিল। ডিএমকে-র সমর্থন প্রত্যাহারের পর এমনিতেই সংখ্যালঘু হয়ে যাওয়া ইউপিএ-সরকার যে কোনও দিন সংসদে ভোটাভুটিতে বিপদে পড়তে পারে। তখন সিপিএম মনমোহন সরকারের রক্ষাকর্তা হয়ে উঠবে, নাকি বসে বসে সরকারের পতন দেখবে, তা নিয়ে দলের মধ্যে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে।
সিপিএম নেতৃত্বের একটা বড় অংশের মত, অকাল ভোটের জন্য দল একেবারেই তৈরি নয়। তার থেকেও বড় যুক্তি হল, পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থের কথা ভেবে কংগ্রেসের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি। তাতে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে দূরত্ব বজায় থাকবে। ভোট বিভাজন হলে সিপিএমের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সহজ হবে। দলের কট্টরপন্থীরা কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও রকম আপসে যেতে রাজি নন। তাঁদের যুক্তি, ইউপিএ-র আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে দু’দিনের শ্রমিক ধর্মঘট হল। দেশ জুড়ে জাঠার আয়োজন হল। রামলীলা ময়দানে জনসভা হল। তার পরেই যদি সিপিএম সংসদে কংগ্রেসের সহায় হয়ে দাঁড়ায়, তা হলে এই গোটা আন্দোলনটাই জলে যাবে।

রামলীলায় আক্রমণে কারাট

ভরসা জোগালেন মানিক

লাল শেরের সাফাই
কারাটের এই বামে থাকি না সরকার রাখি সমস্যা আজ স্পষ্ট হয়ে ওঠে রামলীলা ময়দানে দলের ‘সংঘর্ষ সন্দেশ জনসভা’ শেষ হতে না হতেই। সভার শুরুতে কংগ্রেসের আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক। মঞ্চ থেকে কংগ্রেসের নীতির বিরুদ্ধে নতুন আন্দোলনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেছেন পূর্বপরিকল্পনা মতো। দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন, মে মাসের দ্বিতীয়ার্ধে চাঁদিফাটা গরম হজম করেও সমস্ত সরকারি দফতরের সামনে পিকেটিং, আইন অমান্য আন্দোলন করতে হবে। সভা শেষ হতেই প্রশ্ন করা হল, ডিএমকে-র সমর্থন প্রত্যাহারের পরে তাঁদের ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে। মঞ্চে যে রূপে ছিলেন তেমন করেই তিনি মনমোহন সরকারের দ্রুত পতন কামনা করবেন, এমনটাই আশা ছিল। কারাট কিন্তু জানালেন, এখনও কোনও মন্তব্য করবেন না এ নিয়ে। আজ বিকেল থেকেই পলিটব্যুরোর বৈঠক বসছে। বুধবারও এই বৈঠক চলবে। সেখানে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। তার পরেই দলীয় অবস্থান জানানো হবে বলে ঘোষণা করলেন সিপিএমের কাণ্ডারী।
শুধু সিপিএম নয়, সিপিআইয়ের মতো অন্য বাম দলগুলির তরফেও আজ কেউ হলফ করে বলতে চাননি যে, ডিএমকে-র সমর্থন প্রত্যাহারের পর মনমোহন সরকার বিপদে পড়লেও তাঁরা বাঁচাতে যাবেন না। সকলেরই বক্তব্য, দলে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। বাম নেতারা নিজেদের মধ্যেও এ বিষয়ে কথা বলর পরেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের প্রশ্ন। সিপিএমের সাংসদদের বক্তব্য, ভোটাভুটিতে সরকার বিপদে পড়লে বামেদের যে সরকারের পক্ষেই ভোট দিতে হবে, এমন নয়। ভোটদানে বিরত থেকেও সরকারের সুবিধা করে দেওয়া সম্ভব।
সিপিএমের এই পরস্পরবিরোধী অবস্থানের মূলে এখনও পশ্চিমবঙ্গে দলের করুণ পরিস্থিতি। আজ রামলীলায় রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর বক্তৃতার আগে তাঁকে বাংলার ‘লাল শের’ বলে অভিহিত করেছিলেন সভার সঞ্চালক। ‘লাল শের’ কিন্তু দিল্লিতে দাঁড়িয়ে উত্তর ভারতের সমর্থকদের জন্য কোনও আশার কথা শোনাতে পারেননি। বামফ্রন্ট সরকারের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে সেই ভূমি সংস্কার, জমির পাট্টা বিলিতেই আটকে থেকেছেন। এমনকী কলকাতা থেকে কারাটের নেতৃত্বে শুরু করা জাঠাকে ঘিরেও পশ্চিমবঙ্গে কেন বিশেষ উন্মাদনা চোখে পড়েনি, সেই ব্যাখ্যাও দিতে হয়েছে তাঁকে। বিমান বলেছেন, রাজ্যে পরীক্ষা চলছিল। তাই লাউডস্পিকার বাজানো যায়নি। আইন মানতে গিয়ে প্রকাশ্য সভার বদলে সভাঘরে বৈঠক সারতে হয়েছে।
শেষে ছিলেন সেই মানিক সরকারই। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ভরসা দিয়েছেন, বিকল্প নীতিতে বিশ্বাস রাখুন। ত্রিপুরায় সিপিএমের জয় এই বিকল্প নীতিরই জয়। এমনকী রাহুল গাঁধী ত্রিপুরায় গিয়ে বামেদের উৎখাত করার ডাক দিলেও লাভ হয়নি। পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসানের ফলে তাঁর লড়াই যে আরও কঠিন হয়ে গিয়েছিল, তা-ও জানাতে ভোলেননি মানিক সরকার। সিপিএমের অনেক নেতা কিন্তু বলছেন, “ত্রিপুরায় বড় জয় এলেও পশ্চিমবঙ্গই আসল ঘাঁটি। দুর্গ রক্ষার জন্য যদি দিল্লিতে আপাতত আপস করতে হয়, তা করতে হবে।”

—নিজস্ব চিত্র


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.