বন দফতরের উদ্যোগে শিলিগুড়ির অদূরে শাল, সেগুনের জঙ্গল ঘেরা কারখানায় তৈরি হচ্ছে ভেষজ আবির। রাসায়নিকের বদলে ওই আবিরে থাকছে কমলালেবুর খোসার গুড়ো কিংবা সবুজ পালং শাকের পাতার রস। রয়েছে গাঢ় খয়েরি লাল রঙের বিটের রস। আর তার সঙ্গে মেশানো হচ্ছে পরিমাণ মত ভুট্টার গুড়ো এবং হলুদ গুড়ো। সুগন্ধি হিসাবে গোটা মিশ্রণে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে লেবুর তেল, জেসমিন তেল কিংবা গোলাপ জল। মিশ্রণের শেষে যোগ হবে পরিমাণ মত বিশেষ ভাবে পরীক্ষা করা ট্যালকম পাউডার। আর তাতেই তৈরি হচ্ছে ভেষজ আবির। যা কি না পরীক্ষামূলক ভাবে বাজারে বিক্রি করা হবে। উত্তরবঙ্গে তো বটেই, দক্ষিণঙ্গের বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় ওই আবির পাঠানো হবে। ঝাড়খণ্ডেও পাঠানো হবে ভেষজ আবির।
শিলিগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে ত্রিহানা চা বাগান লাগোয়া তাইপু এলাকায় বন বিভাগের নন টিম্বার ফরেস্ট প্রোডিউস ডিভিশনের (এনটিএফপি) কারখানায় কর্মীরা এখন ব্যস্ত ভেষজ আবির তৈরিতে। কমলালেবুকে ব্যবহার করে কমলা রং, সবুজ পালং শাক ব্যবহারে তৈরি হচ্ছে সুবজ রঙের আবির আর বিট দিয়ে লাল আবির। আগামী সপ্তাহেই দোল উৎসব। তার আগেই বাজারে এই ভেষজ আবির পৌঁছে দিতে রাতদিন কাজ করে চলেছেন বন কর্মীরা। |
আপাতত প্রায় দুই কুইন্টাল আবির তৈরির কাজ চলছে ওই সরকারি কারখানায়। কাঁচামাল গুড়ো করা, রোদে শুকানো, প্যাকেট করার কাজও চলছে সমানতালে। আবিরটির বাজারজাত করার জন্য বিজ্ঞাপন এবং একটি স্লোগানও ঠিক করা হয়েছে। তাতে বলা হচ্ছে, ‘প্রকৃতির রং নিয়ে আসুন আপনার প্রিয়জনের শরীরে ও মনে’। আপাতত অল্প অল্প করে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, লাটাগুড়ি, পুরুলিয়া এবং ঝাড়খন্ডে ওই আবার সরবরাহ করা হচ্ছে। বাজারে চাহিদা ভাল মিললে আগামীবার আরও বেশি করে ভেষজ আবির তৈরি করা হবে বলে ওই কর্মীরা জানিয়েছেন।
এনটিএফপি-র ডিএফও অরুণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “কয়েকমাস আগেই কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে ভেষজ আবির তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এই আবির বানানো খুবই সোজা। প্রক্রিয়াটি জানলে বাড়িতেও তৈরি করা যায়। তবে বাজারে সাধারণ যে আবির মেলে তা রাসায়নিক দ্রব্য এত বেশি থাকে যে তা শরীরের ক্ষতি করে থাকে। সেই ক্ষেত্রে এই ভেষজ আবিরের কোনও তুলনা হবে না।” মানুষের সচেতনতা আর প্রচার বাড়তে পারলে সরকারি উদ্যোগে তৈরি এই আবির বাজারে বিশেষ জায়গা তৈরি করে নেবে বলে ডিএফও অরুণবাবুর আশা।
বন দফতরের কর্তাদের সঙ্গে একমত চিকিৎসকেরাও। তাঁরা জানাচ্ছেন, বাজারে সাধারণ যে আবির মেলে তাতে ডলেমাইট-এর গুড়ো ছাড়াও জিঙ্ক, লেড, মার্কারি, সিলিকা মত নানা ধরণের রাসায়নিক দ্রব্য থাকে। যা শরীর তো বটেই চামড়ার জন্য খুবই ক্ষতিকারক। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ শেখর চক্রবর্তী বলেন, “দোলের পরে অনেক সময়ে চর্মরোগের প্রকোপ বাড়ে। কারণ অনেক আবিরেই নানা রাসায়নিক থাকে। তা থেকে অনেকের অ্যালার্জি হয়। সে জন্য জৈব উপাদান সমৃদ্ধ আবিরের চাহিদা বাড়ছে। সে দিক থেকে বন দফতরের উদ্যোগ সচেতন মানুষের কাছে সমাদৃত হবে।” |