মিউচুয়াল ফান্ড কম মেয়াদের রাজা
নোঙরে টান
কিন্তু যদি বলি, এমন ফান্ডও আছে, যেখান থেকে প্রায় যখন খুশি টাকা তোলা সম্ভব? যা চালানো সহজ। আবার রিটার্নও মন্দ নয় (অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেভিংস অ্যাকাউন্টের থেকে কিছুটা বেশি)। অন্তত তার পরে কি আপনার হাতে থাকা নগদের একটা অংশ ওই ফান্ডে লগ্নি করবেন আপনি?
একটু দাঁড়ান। তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে না-হয় এক বার লেখাটার বাকি অংশে চোখ রাখুন। তার পর ভেবেচিন্তে ঠিক করুন।

লিক্যুইড ফান্ড

যে ফান্ডকে হাতিয়ার করে সেভিংস অ্যাকাউন্টের সঙ্গে এমন পাঞ্জা কষা, তার নাম লিক্যুইড ফান্ড। নাম থেকেই স্পষ্ট, কম মেয়াদে (সাধারণত এক থেকে তিন মাস) টাকা রাখতে এর জুড়ি নেই। চাইলে টাকা তুলে নেওয়ার রাস্তাও এখানে খোলা। তাই বুদ্ধি করে টাকা খাটাতে পারলে, এখান থেকে ‘পড়ে পাওয়া’ প্রাপ্তিও লোভনীয় হয়ে ওঠার সম্ভাবনা।

ওঁদের মতো আপনিও?

লিক্যুইড ফান্ড ভীষণ ভাবে জনপ্রিয় কর্পোরেট সংস্থা, ব্যবসায়ী এবং উচ্চবিত্তদের (হাই-নেটওয়ার্থ ইন্ডিভিজুয়াল) মধ্যে।
কারণ সহজবোধ্য। এমনিতে ব্যবসা পরিচালনার জন্য ব্যাঙ্কের কারেন্ট অ্যাকাউন্টে টাকা রাখে কর্পোরেট সংস্থাগুলি। অনেক সময় একই পথে হাঁটেন বড় ব্যবসায়ীরাও। কিন্তু সেভিংস অ্যাকাউন্টে যা-ও বা ৪% সুদ পাওয়া যায়, কারেন্টে তা-ও মেলে না। সেখানে প্রাপ্তি বলতে মূলত যখন খুশি গচ্ছিত টাকা তুলে নেওয়ার সুযোগ আর চেক-বইয়ের মাধ্যমে ‘পেমেন্ট’ মেটানোর সুবিধা। ঠিক এই কারণেই সামান্য কিছু দিন (ধরুন সাত দিন বা এক মাস) টাকা ফেলে রাখার সুযোগ থাকলে, এখন অনেক ক্ষেত্রেই তা লিক্যুইড ফান্ডে লগ্নি করে বিভিন্ন সংস্থা। একই পথে হাঁটেন ব্যবসায়ী ও উচ্চবিত্তরাও।
আপনি যদি চাকরিজীবী হন, তাতেও কিন্তু লিক্যুইড ফান্ড আপনার জন্য মন্দ নয়। পুরো টাকাই সেভিংস অ্যাকাউন্টে ফেলে না-রেখে, যদি এখান থেকে বাড়তি দু’পয়সা হাতে আসে, তাতে মন্দ কী?

সুবিধার ধারাপাত

এই ফান্ডের মূল সুবিধা কী কী, তা আগেই আলোচনা করেছি আমরা। তবুও সুবিধার জন্য সে-সব একটু এক জায়গায় গুছিয়ে নেওয়া যাক
• এখানেও অনেকটা সেভিংস অ্যাকাউন্টের মতো প্রয়োজন হলে টাকা তুলে নেওয়ার সুযোগ থাকে। তার জন্য কোনও ‘পেনাল্টি’ গুনতে হয় না। শুধু তা-ই নয়, টাকা তুলে নেওয়ার আবেদন জানালে, তা সরাসরি জমা হয়ে যাবে আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। দুপুর তিনটের মধ্যে আবেদন জমা পড়লে, টাকা হাতে পেতে অপেক্ষা করতে হবে মাত্র একটি কাজের দিন (ওয়ার্কিং ডে)। অর্থাত্‌, সেভিংস অ্যাকাউন্টের মতো একেবারে চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই টাকা হয়তো পাবেন না। কিন্তু তেমনই আবার তা পেয়ে যাবেন এক দিনের মধ্যেই।
• ঋণপত্রের বাজার ভাল থাকলে, এখানে সেভিংস অ্যাকাউন্টের সুদের তুলনায় রিটার্ন কিছুটা বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা (সম্প্রতি খুব অল্প দিনের মেয়াদেও ৭.৫-৮ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে বেশ কিছু ফান্ড)।
• পেতে পারেন করমুক্ত ডিভিডেন্ডের সুবিধাও। চাইলে প্রতি সপ্তাহেই প্রাপ্য ডিভিডেন্ড তুলে নিতে পারবেন আপনি।

মনে রাখুন
• জেনে রাখুন, লিক্যুইড ফান্ডে কিন্তু কোনও নিশ্চিত রিটার্ন নেই। পুরোটাই বাজার নির্ভর। সেখানে সেভিংস অ্যাকাউন্টে অন্তত ৪% সুদ কিন্তু আপনার বাঁধা।

• তবে এখানে ঝুঁকি কম। কারণ, এই ফান্ডের টাকা সাধারণত লগ্নি করা হয় সরকারি বন্ড, কর্পোরেট বন্ড, ট্রেজারি বিলের মতো নিরাপদ জায়গায়। শেয়ারে এর এক পয়সাও বিনিয়োগ করা হয় না।

• কোনও ফান্ডে লগ্নি কতটা নিরাপদ, তা বুঝতে টাকা ঢালার আগেই তার রেটিং (মূল্যায়ন) দেখে নিতে ভুলবেন না। জানবেন, ‘এএএ’ (ট্রিপল এ)-র তকমা সব থেকে নিরাপদ।

• এক থেকে তিন মাসের মতো স্বল্প মেয়াদে টাকা রাখার ক্ষেত্রে লিক্যুইড ফান্ডের জুড়ি নেই।

• এই ধরনের ফান্ড যে ব্যবসায়ী কিংবা বড় অঙ্কের টাকা সেভিংস অ্যাকাউন্টে ফেলে রাখা যে কারওর জন্যই বেশ ভাল, এতক্ষণে তা জেনে গিয়েছি আমরা। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এই ফান্ড আপনার মতো চাকরিজীবী কিংবা কম টাকা বিনিয়োগে আগ্রহী খুচরো লগ্নিকারীর উপযুক্ত নয়। আমার মতে, হাতে ৫০০০ টাকা থাকলেই, তা এই ফান্ডে লগ্নির পক্ষে যথেষ্ট।

• অবশ্যই আয়কর পরামর্শদাতার সঙ্গে কথা বলুন। বিশেষত যাঁরা করের সর্বোচ্চ বন্ধনীতে পড়েন। লিক্যুইড ফান্ডে টাকা ঢালার আগে করের যাবতীয় খুঁটিনাটি জেনে নিতে ভুলবেন না।

ভবিষ্যত্ ফান্ডেরই?

আপনি যদি এক জন চাকরিজীবী হন, তা হলে ধরে নেওয়া যায় আপনার বেতন অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। সেখান থেকেই বিভিন্ন মাসিক কিস্তি মেটান আপনি। রোজকার বাজার থেকে মুদিখানার মাসকাবারি সব কিছুর জন্যই টাকা তুলে নেন এটিএম কার্ডে।
কিম্তু কে বলতে পারে, আগামী দিনে এখানে জায়গা করে নেবে না লিক্যুইড ফান্ড? তখন হয়তো বেতনের টাকা সরাসরি জমা পড়বে বেছে নেওয়া কোনও ফান্ডে। সরাসরি সেখান থেকেই কার্ড ‘সোয়াইপ’ করে প্রয়োজন মতো টাকা তুলে ফেলতে পারবেন আপনি।
এখনও এমনটা করা যায় না ঠিকই। কিন্তু এই সম্ভাবনাটাই তো দারুণ লাগে। ব্যক্তিগত ভাবে আমার ধারণা, সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি ছাড়পত্র দিলে, এমন ব্যবস্থা চালু হওয়া একেবারে অসম্ভব নয়।
জানি, আজ এই কল্পনাকে স্রেফ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবেন আপনারা। দু’কথা শুনিয়েও দিতে পারেন মনগড়া রূপকথা বলে। কিন্তু ওই যে কথায় বলে, আশায় বাঁচে চাষা!
চুলে পাক ধরেছে। কিন্তু পড়ার বই সরিয়ে অরণ্যদেবে মুখ ডোবানোর অভ্যেস ছাড়তে পারলাম কই?

লেখক উইশলিস্ট ক্যাপিটাল অ্যাডভাইজার্সের ডিরেক্টর (মতামত ব্যক্তিগত)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.