আগাম টাকা নিয়েও বিয়ের অনুষ্ঠানে খাবার সরবরাহ না করায় ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের নির্দেশে এক হোটেল মালিককে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হল। সম্প্রতি ওই হোটেল মালিক সুদ-সহ জরিমানার টাকা জমা দেন। মঙ্গলবার অভিযোগকারী মালদহ মহিলা মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বাণী মিশ্র আদালতের মাধ্যমে ওই টাকা পেয়েছেন। এ দিকে পাঁচ বছর পর ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের সৌজন্যে জরিমানার টাকা পেয়েও খুশি নন বাণীদেবী। তিনি বলেন, “একমাত্র ছেলের বউভাতে অতিথিদের আপ্যায়ন করে ডেকে খাওয়াতে না পেরে অপমানিত হয়েছিলাম। তা ভোলার নয়। প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছিলাম। সেই অপমান কোনও দিন ভুলব না।” হোটেল মালিক মানস চৌধুরী শুধু বলেন, “আদালত যা রায় দিয়েছে তা মাথা পেতে নিয়েছি।”
ঘটনাটি ঘটে ২০০৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর। বউভাতে অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য মালদহ মহিলা মহাবিদ্যালয়ের ওই শিক্ষিকা মানসবাবুর হোটেলের বিরাট হলঘর ভাড়া করেন। সেই সঙ্গে ৪৫০ অতিথিদের খাবারের জন্য ১৮১ টাকা প্রতি প্লেট হিসাবে দুই দফায় ৫০ হাজার টাকা দেন। অনুষ্ঠানের সন্ধ্যায় অতিথিরা যখন হোটেলে আসতে শুরু করেছেন তখন দেখা যায় খাবারের ব্যবস্থা নেই। চিৎকার চেঁচামেচির পর হোটেল মালিক মাছ ও মাংস এনে খাবারের ব্যবস্থা করেন। অভিযোগ, রাত ৯টায় আধসেদ্ধ মাংস, মাছ ২০০ জন অতিথিকে খাওয়ানোর পর খাবার শেষ হয়ে যায়। বাকি ২৫০ অতিথিকে না খেয়েই ফিরে যেতে হয়।
ঘটনার পর শিক্ষিকা বাণীদেবী মানসবাবুকে টাকা ফিরিয়ে দিতে বলেন। কিন্তু তিনি তা দিতে অস্বীকার করেন। ২০০৯ সালে বাণীদেবী ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন। ওই বছরই ডিসেম্বর মাসে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত হোটেল মালিককে ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করে অভিযোগকারীকে টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। নির্দেশের বিরুদ্ধে মানসবাবু রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত, জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন। কিন্ত দুই জায়গায় জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায়কে বহাল রাখা হয়। তার পরে তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও মামলা খারিজ হয়ে যায়। তিন বছর পর শেষ পর্যন্ত জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের নির্দেশ মেনে সুদ-সহ জরিমানার টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন ওই হোটেল মালিক। ওই শিক্ষিকার হয়ে মামলা লড়েন আইনজীবী তড়িৎ ওঝা ও মহম্মদ জিয়াউল্লাহ। |