নাগরিক (সিভিক) পুলিশের পরীক্ষার জন্য চিকিত্সকের কাছ থেকে ফিট সার্টিফিকেট নিতে গিয়ে চরম হয়রানির শিকার হতে হল পরীক্ষার্থীদের। শুধু তাই নয়, সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে সার্টিফিকেটের বিনিময়ে এক-একজনের কাছ থেকে তিনশো থেকে চারশো টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠল বসিরহাটের মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার সকালে এর প্রতিবাদে হাসপাতালের সুপারকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান পরীক্ষার্থীরা। খুলে ফেলা হয় সুপারের ঘরের সামনে তাঁর নেমপ্লেট। বিক্ষোভকারীদের দাবি, সার্টিফিকেট বাবদ নেওয়া টাকার কোনও রসিদও তাঁদের দেওয়া হয়নি। প্রতিবাদ করলে পুলিশ ডাকার হুমকি দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে বসিরহাট থানার পুলিশ যায় হাসপাতালে। বিক্ষোভকারীদের কোনওরকমে বুঝিয়ে শান্ত করেন তাঁরা। যদিও বেশি টাকা নেওয়া ও রসিদ না দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন সুপার সুব্রত মণ্ডল।
মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত পাণ্ডে বলেন, “টাকা নিলে তার রসিদ দেওয়া বাধ্যতামূলক। এ ক্ষেত্রে রসিদ দেওয়ার যে অভিযোগ সুপারের বিরুদ্ধে উঠেছে সে ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের ঘোষণামতো গত কয়েক দিন ধরে সিভিক পুলিশের চাকরির জন্য আবেদনপত্র দেওয়া ও জমা নেওয়ার কাজ চলছে বিভিন্ন থানায়। চাকরির জন্য আবেদনপত্রের সঙ্গে সরকারি হাসপাতাল থেকে প্রার্থীর মেডিক্যাল ফিট সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই ফিট সার্টিফিকেট নিতেই নিয়মের বাইরে বেশি টাকা দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন পরীক্ষার্থীরা। যদিও এই ঘটনায় কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার বেলা ১১টা নাগাদ ফিট সার্টিফিকেট নিতে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য সুপারের ঘরের সামনে লম্বা লাইন পড়ে। একটু পরেই অভিযোগ ওঠে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে ও রসিদও দেওয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে গোলমাল শুরু হয়ে যায়। চলে ধাক্কাধাক্কি। সুপারের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া এবং খারাপ আচরণের প্রতিবাদে পরীক্ষার্থীদের একাংশ সুপারকে ঘিরে এবং বাকিরা তাঁর ঘরের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে রবি বিশ্বাস, সুমন মণ্ডলরা বলেন, “গরিব পরীক্ষার্থীরা কী ভাবে টাকা জোগাড় করবেন তা চিন্তা না করে ইচ্ছামত টাকা নেওয়া হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমে জানাজানির পরে টাকা নেওয়া বন্ধ হয়েছে। তা ছাড়া জমা টাকার রসিদও দেওয়া হয়নি।”
বসিরহাট মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরকারি নির্দেশের প্রতিলিপি দেখিয়ে জানান, ২০০৯ সালের অগস্ট মাসে স্বাস্থ্য দফতরের এক নির্দেশে বলা আছে, ফিট সার্টিফিকেট নিতে গেলে প্রার্থীকে ১০০ টাকা জমা দিতে হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেডিক্যাল বোর্ড বসিয়ে ফিট সার্টিফিকেট দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। হাসপাতালের সহকারী সুপার সোহিনী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া ১০০ টাকার মধ্যে মেডিক্যাল বোর্ড ৭৫ টাকা পাবে এবং বাকি ২৫ টাকা সরকারকে পাঠানো নিয়ম। এ জন্য রসিদ পাবেন সংশ্লিষ্ট প্রার্থী।”
এ ক্ষেত্রে কি নির্দেশ মেনেই দেওয়া হচ্ছিল রসিদ?
প্রশ্নের উত্তরে সোহিনীদেবী কিছু বলতে না পারলেও পরীক্ষার্থীদের দাবি, তাঁরা রসিদ তো পাচ্ছেনই না, উল্টে দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। অভিযোগ অস্বীকার করে সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, “সরকারি নির্দেশ মেনে প্রত্যেকের কাছ থেকে একশো টাকা নিয়েই রসিদ দেওয়া হচ্ছে। একা হাতে কয়েক’শো পরীক্ষার্থীকে ফিট সার্টিফিকেট দেওয়ার কারনে ভিড় জমে যায়। সে জন্য কিছ সময় বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল। তাই সেই সময় কাউকে কাউকে রসিদ দেওয়া সম্ভব হয়নি।’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, যাঁরা রসিদ পাননি তাঁদের সার্টিফিকেট দেখিয়ে হাসপাতাল থেকে রসিদ নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।” |