সংঘাতের পথ ছেড়ে এ বার রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনায় রাজি হওয়ার ইঙ্গিত দিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।
ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র চিঠি দিয়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতৃত্বকে পাহাড়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। মার্চের মাঝামাঝি এসে মঙ্গলবার মোর্চা নেতৃত্ব সেই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করে জানালেন, তাঁরা ‘খোলা মনে’ বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি এই দিন সাংবাদিকদের বলেন, “চিঠিটি অনেকদিন আগে পাঠানো হলেও আমরা তা সবে হাতে পেয়েছি।
রাজ্য সরকারের তরফে ওই চিঠিতে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি মেনে সব পক্ষকে চলার কথা বলা হয়েছে। আমরা খোলা মনেই সব কিছু দেখছি। শীঘ্রই দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।” মোর্চা সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রের তরফে ফের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হবে বলে তাঁদের আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু রাজ্য সরকারের সঙ্গে দূরত্ব না-কমালে কেন্দ্রের উদ্যোগে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হলেও তা ফলপ্রসূ না-ও হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা। সেই কারণেই তাঁরা সমঝোতার রাস্তা খুঁজছেন। সে জন্য দেরিতে হলেও ওই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মোর্চা সূত্রেই জানা গিয়েছে।
মুখ্যসচিবের চিঠিটি পাঠানো হয়েছিল মমতা-মোর্চা সম্পর্কের অবনতির পরে। গত ২৯ জানুয়ারি দার্জিলিঙের ম্যালে সরকারি অনুষ্ঠানে আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে স্লোগান শুনে মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ বলে তা থামিয়ে দিতে বাধ্য করান। তারপরেই দু’পক্ষের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। কয়েকদিনের মধ্যে রাজ্য সরকার মোর্চার আপত্তি অগ্রাহ্য করে পৃথক লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গঠন করে। এর পরে মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ নানা সভায় বারবারেই মমতার কড়া সমালোচনা করেন। পাহাড়ে লাগাতার আন্দোলনেরও হুমকি দেন। জিটিএ-এর প্রধান সচিব পদ থেকে সৌমিত্র মোহনকে অপসারণের দাবি জানানো হয়। রাজ্য তা-ও অগ্রাহ্য করে। পাহাড়ে সিআরপি-ও মোতায়েন করা হয়।
সেই সময়েই গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মুখ্যসচিব একটি চিঠি পাঠিয়ে জিটিএ পদাধিকারীদের ত্রিপাক্ষিক চুক্তি মেনে পাহাড়ে শান্তি ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রাখার আর্জি জানান। পাশাপাশি, আলোচনার মাধ্যমে যে কোনও সমস্যার সমাধানসূত্র খোঁজার কথা ভাবার পরামর্শ দেন মুখ্যসচিব। তবে সে সময়ে মোর্চা নেতৃত্ব সেই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার পর্যন্ত করেননি। তবে মোর্চা সূত্রের খবর, দিল্লিতে গিয়ে জিটিএ নেতারা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলে সকলেই গুরুঙ্গদের শান্তি বজায় রেখে জিটিএ চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন। প্রয়োজনে কেন্দ্রের তরফে ফের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হবে বলেও মোর্চা নেতাদের তখন আশ্বাস দেওয়া হয়। এরপরেই মোর্চা নেতারা ওই চিঠির সূত্র ধরে রাজ্যের সঙ্গে সমঝোতার পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
|