মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে চুরি হয়ে যাচ্ছে লালবাগের সন্ন্যাসীডাঙার কাছে কাটিগঙ্গার চরের মাটি। পাচার হচ্ছে ট্রাক্টর বোঝাই করে। পরে চড়া দামে তা স্থানীয় ইট ভাটাগুলিতে বিক্রি হচ্ছে। মাটি কাটার সঙ্গে এক শ্রেণির ভাটা মালিকও জড়িত রয়েছেন বলেও অভিযোগ। এ দিকে নতুনগ্রাম পঞ্চায়েতের ওই চর লাগোয়া বহরমপুর-লালবাগ যাওয়ার মোরাম রাস্তা রয়েছে। প্রতি দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাটি কেটে নেওয়ার ফলে ওই রাস্তার তলার দিকের মাটি আলগা হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলেই ওই রাস্তা ধসে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
লালবাগের মহকুমাশাসক চিরঞ্জীব ঘোষ বলেন, “আগেও মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। ব্যবস্থা নিয়েও ছিলাম। ফের তা শুরু হয়েছে। ব্যাপারটা খোঁজ নিয়ে দেখছি।” |
মোরাম রাস্তার ধার দিয়ে অবৈধ ভাবে কাটা হচ্ছে মাটি।—নিজস্ব চিত্র। |
এই অবস্থায় প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার বিস্তৃত ওই মোরাম রাস্তা প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা খাতে পিচ রাস্তা করা হবে বলে উদ্যোগী হয়েছে মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতি। সম্প্রতি ওই পিচ রাস্তার কাজের শিলান্যাস অনুষ্ঠানও হয়েছে। মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের রফিকুল ইসলাম জানান, “প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা খাতে ওই মোরামের বদলে পিচ রাস্তা তৈরি করা হবে। কাজও শুরু হওয়ার মুখে।” তাঁর অভিযোগ, “দুষ্কৃতীরা চরের মাটি কাটার ফলে ওই রাস্তার তলার দিকের মাটি আলগা হয়ে পড়বে। ফলে পিচ রাস্তা করলেও তা কত দিন টিকবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।”
তবে, মাটি মাফিয়াদের ভয়ে গ্রামবাসীরা প্রতিরোধ করার সাহস দেখাচ্ছেন না। এখনই ওই রাস্তা দিয়ে সাইকেল নিয়ে যাতায়াত করাও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় বর্ষায় ওই রাস্তার বেহাল দশার কথা ভেবে শিহরিত গ্রামবাসীরা। সন্ন্যাসীডাঙার বাসিন্দা বৃদ্ধা পুষ্পলতা বিশ্বাস বলেন, “আগে কাটিগঙ্গায় সারা বছরই জল থাকত। চড়া পড়ে যাওয়ায় এখন বর্ষার সময় ছাড়া তাতে জল থাকে না। এই সুযোগে রাস্তার ধার থেকে প্রায় ৬ ফুট গভীর করে চরের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে লোকজন। পাড়ার লোকজন হয়তো ভয়ে কিছু বলতে পারে না। এ ভাবে মাটি কেটে নিলে রাস্তা বলে আর কিছু থাকবে না।” একই অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দা কৃষ্ণচন্দ্র মণ্ডলও। তাঁর কথায়, “প্রতিবাদ করতে গেলে নিজের ক্ষতি ছাড়া কিছুই হবে না। রাজনৈতিক দল থেকে ভাটা মালিক সকলেই ওই মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত।” এলাকার প্রভাবশালী লোকজন ওই পাড়ের মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত। তাতে সব রাজনৈতিক দলের লোকজনের মদত রয়েছে। ফলে পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানাতে যেমন গ্রামবাসীদের সাহসে কুলোচ্ছে না, তেমনি পঞ্চায়েতে আমরা যারা সংখ্যালঘু তারাও কিছু করতে পারছে না। নতুনগ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান বিজন দাস বলেন, “প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাটি কাটা বন্ধ হয়নি।” |