|
|
|
|
দাসেরবাঁধ কঙ্কাল-কাণ্ড |
অবশেষে শুনানি শুরু চার্জগঠনের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
তদন্ত শুরুর ৮৮ দিনের মাথায় চার্জশিট পেশ করেছিল সিআইডি। তার ১৮ মাসের মাথায় মেদিনীপুর আদালতে শুরু হল দাসেরবাঁধ কঙ্কাল কাণ্ড মামলার চার্জগঠনের শুনানি।
মঙ্গলবার মেদিনীপুরের চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক অভিজিৎ সোমের এজলাসে এই মামলার শুনানি শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে ঠিক কী কী অভিযোগ রয়েছে, কী ভাবে ঘটনাটি ঘটেছে, শুনানির শুরুতে তা আদালতের কাছে জানান সরকারপক্ষের আইনজীবী শক্তি ভট্টাচার্য এবং রাজদীপ মজুমদার। মামলার পরবর্তী দিন ধার্য হয়েছে আগামী ১৯ এপ্রিল। ওই দিন শুনানির শুরুতে সওয়াল করবেন অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীরা। তারপর চার্জগঠন হবে। শুরু হবে এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া।
মঙ্গলবারও শুরুতে চার্জগঠনের শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করেন অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীরা। যদিও আদালত সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি। এই নিয়ে দু’পক্ষের সওয়াল-পাল্টা সওয়াল চলার পর বিচারক জানান, বেলা দু’টো থেকে চার্জগঠনের শুনানি শুরু হবে। সেই মতোই শুনানি শুরু হয়।
রাজ্যে পালাবদলের পর প্রাক্তন মন্ত্রী তথা গড়বেতার বিধায়ক সুশান্ত ঘোষের আদি বাড়ি বেনাচাপড়ার অদূরে দাসেরবাঁধ থেকে মাটি খুঁড়ে হাড়গোড় মেলে। তার প্রেক্ষিতেই এই মামলা। অভিযোগ, ২০০২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ৭ তৃণমূল কর্মীকে খুন করেছিল সিপিএমের সশস্ত্র বাহিনী। উদ্ধার হওয়া হাড়গোড় তাঁদেরই। |
 |
আদালতে দুই ভাই সুশান্ত ঘোষ ও প্রশান্ত ঘোষ |
২০১১ সালের ৫ জুন গড়বেতার বিধায়ক-সহ মোট ৪০ জনের নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়ে। শুরুতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। পরে তদন্তভার যায় সিআইডি-র হাতে। তদন্তে নেমে ওই বছর ২৩ সেপ্টেম্বর মেদিনীপুর আদালতে চার্জশিট পেশ করে সিআইডি। চার্জশিটে সব মিলিয়ে ৫৮ জনের নাম রয়েছে। ২২ পাতার মূল চার্জশিটের কপির সঙ্গেই আরও প্রায় ৩ হাজার পাতার নথিও আদালতে পেশ করা হয়। এখনও পর্যন্ত সুশান্তবাবু-সহ ২২ জনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। এঁদের মধ্যে ১৮ জন জামিনে মুক্ত।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদই আদালতে চলে আসেন গড়বেতার বিধায়ক-সহ জামিনে-মুক্ত ১৮ জন। জেলবন্দি দু’জনকেও আদালতে হাজির করা হয়। এই মামলায় আরও যে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে অর্ণব ঘোষ ঘটনার সময় নাবালক ছিলেন। তাই তাঁর বিচার চলছে জুভেনাইল কোর্টে। কিরীটি রায় মারা গিয়েছেন। মামলার শুরুতে সরকারপক্ষের আইনজীবী শক্তি ভট্টাচার্য চার্জগঠনের শুনানি শুরু করার পক্ষে সওয়াল করেন। তিনি জানান, আজই চার্জগঠনের শুনানি শুরু হওয়ার কথা। এরপরই চার্জগঠনের বিরোধিতা করেন অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীরা। তাঁদের বক্তব্য, সুশান্ত ঘোষ মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন। পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ৯ এপ্রিল। এই পরিস্থিতিতে চার্জগঠন করা উচিত নয়। সঙ্গে আরও কয়েকটি দিক নিয়ে সওয়াল করেন তাঁরা। সরকারপক্ষের আইনজীবী পাল্টা জানান, হাইকোর্টের কোনও স্থগিতাদেশ নেই। ফলে, মামলা এগোতে অসুবিধে কোথায়? দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারক জানান, বেলা দু’টো থেকে চার্জগঠনের শুনানি শুরু হবে। সেই মতোই শুনানি শুরু হয়।
সরকারপক্ষের আইনজীবী আদালতে জানান, সুশান্ত ঘোষ ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত। তথ্যপ্রমাণ ইতিমধ্যে আদালতে পেশ করা হয়েছে। তিনি জানান, যে গরুর গাড়িতে করে সেদিন মৃতদেহ বহন করা হয়েছিল, তা-ও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সে দিন ৭ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের মৃত্যু হলেও আরও ৯ জনকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছিল। যাঁরা প্রহৃত হয়েছিলেন, তাঁদের নামও সাক্ষীর তালিকায় রয়েছে। সুশান্তবাবুদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২, ৩০৭, ১২০-বি-সহ আরও কয়েকটি ধারায় অভিযোগ রয়েছে। সাক্ষীদের বয়ান থেকে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট, প্রাক্তন মন্ত্রীর গাড়ির ‘কল-বুক’সব তথ্যপ্রমাণ ইতিমধ্যে আদালতে পেশ করা হয়েছে। সাক্ষীর সংখ্যা ১১৩। এঁদের মধ্যে ৭ জন আদালতের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন। সরকারপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্যে খেতুয়া রানিয়ড়, চড়কডাঙ্গা, বড়ডাঙ্গা, গোলক দে আইমা, দাসেরবাঁধ, বেলা মহারাজপুর প্রভৃতি জায়গার নাম উঠে আসে। তিনি আদালতে জানান, খুনের পর মৃতদেহগুলোকে প্রথমে চড়কডাঙার মাঠে রাখা হয়। সেখান থেকে বাঁশে ঝুলিয়ে বড়ডাঙায় নিয়ে আসা হয়। পরে গরুর গাড়িতে করে দাসেরবাঁধে আনা হয়। এখানেই মাটি খুঁড়ে মৃতদেহগুলো পুঁতে ফেলা হয়। |
|
|
 |
|
|