|
|
|
|
মুখ্যমন্ত্রীর সভার জের |
বাস নেই, ২৪ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে পরীক্ষায় |
কিংশুক গুপ্ত • ঝাড়গ্রাম |
আশঙ্কাই সত্যি হল। মঙ্গলবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার দিনে বিনপুরে মুখ্যমন্ত্রীর সভার জেরে চরম নাকাল হল পরীক্ষার্থীরা। কেউ পরীক্ষাকেন্দ্রে এল মোটরবাইকে, কেউ আবার পৌঁছল দীর্ঘ পথ সাইকেল চালিয়ে।
এ দিন প্রথমার্ধে (সকাল ১০টা থেকে দুপুর সওয়া একটা) উচ্চ মাধ্যমিকের রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব ও সমাজবিজ্ঞানের পরীক্ষা ছিল। ওই তিনটি বিষয়ে একাদশ শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা ছিল দ্বিতীয়ার্ধে (দুপুর দু’টো থেকে বিকেল পাঁচটা)। তবে সকাল থেকেই ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বাস উধাও হয়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রীর সভায় লোক নিয়ে যাওয়ার জন্য অধিকাংশ বাস নিয়েছিল শাসকদলের নেতা-কর্মীরা। নিরাপত্তারক্ষীদের যাতায়াতের জন্য কিছু বাস নিয়েছিল প্রশাসনও। বাসের অভাবে ঝাড়গ্রাম মহকুমার ২১টি পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে হিমসিম খেতে হয় পরীক্ষার্থীদের। ঝাড়গ্রাম মহকুমা বাস মালিক সংগ্রাম কমিটির সম্পাদক প্রশান্ত দাস বলেন, “মহকুমার বিভিন্ন রুটে ৮০ জোড়া বাস চলে। এ দিন সকালের দিকে ৮টি বাস চলেছে।” |
|
বাস কম। মালবাহী গাড়িতেই সওয়ার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দেবরাজ ঘোষের ছবি। |
দুধকুণ্ডির বিদ্যুৎ মাহাতো এ দিন দীর্ঘ ২৪ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে ঝাড়গ্রাম শহরের পরীক্ষা কেন্দ্রে এসে পৌঁছয়। তার কথায়, “আমাদের বাড়িতে মোটরবাইক নেই। তাই নিজেই সাইকেল চালিয়ে এসেছি।” বাস না পেয়ে চন্দ্রির সুকুমার ধাউড়িয়া, চিত্তরঞ্জন দাসের মতো অনেক পরীক্ষার্থী চড়া রোদে সাইকেল চালিয়ে আঠারো-কুড়ি কিলোমিটার দূরে ঝাড়গ্রাম শহরের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছয়। তাদের বক্তব্য, “বাস পাইনি। তাই এ ছাড়া আর উপায় ছিল না।” সম্পন্ন পরিবারের পরীক্ষার্থীরা অনেকে ভাড়া গাড়িতে যাতায়াত করেছে। ঝাড়গ্রাম শহরের একটি পরীক্ষাকেন্দ্রের সম্পাদক অনুপ দে বলেন, “বাস কম চলেছে। সাইকেল ও মোটরবাইকে করে বেশির ভাগ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে এসেছিল।”
বিনপুরের পালইডাঙার সঞ্জয় আহির, সিমপুরের মির্জা মনজুর, আঁধারিয়ার রাজু সাউ, দয়াল সর্দাররা অবশ্য সকালে পরীক্ষাকেন্দ্রে আসার সময় বাস পেয়েছিল। কিন্তু দুপুরে পরীক্ষা শেষে ঝাড়গ্রাম শহরের পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ফিরতে তাদের কালঘাম ছুটে যায়। হেঁটেই ফেরে ওই পরীক্ষার্থীরা। সঞ্জয়, রাজুরা জানায়, “হাত দেখাচ্ছি, তবু কোনও লরি দাঁড়াচ্ছে না। অনেক কষ্টে একটা লরি থামিয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পর লরিটি আমাদের নামিয়ে দেয়। তাই হেঁটেই বাড়ি ফিরছি।” ওদের সকলেরই মত, মুখ্যমন্ত্রী ছুটির দিনে সভা করতে পারতেন।
সভাস্থলের শব্দসীমায় অবশ্য খুব একটা সমস্যা হয়নি। বক্স বাজলেও দেড় কিমি দূরে বিনপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রের ১৪২ পরীক্ষার্থীর অসুবিধা হয়নি বলে দাবি করেন প্রধান শিক্ষক সুনীতিকুমার আখুলি। তাঁর বক্তব্য, “পরীক্ষা হয়েছে চার দেওয়ালের মধ্যে। কখন সভা শুরু হল আর কখন শেষ হল তা বুঝতেই পারিনি।” তবে গোটা এলাকা ঘেরার যে দাবি প্রশাসন করেছিল, তা করা হয়নি।
এ দিন দুপুরেই বাঁকুড়া পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ, বুধবার রানিবাঁধে প্রশাসনিক জনসভা করবেন তিনি। আজ রয়েছে উচ্চ মাধ্যমিকের দর্শন ও গণিত পরীক্ষা। ফলে, এ বার উৎকণ্ঠায় দক্ষিণ বাঁকুড়ার পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। বাস মালিকেরা জানিয়েছেন, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ইতিমধ্যেই বাস চেয়ে আবেদন করেছেন। বাস চেয়েছে পুলিশ-প্রশাসনও। যদিও তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা কো চেয়ারম্যান অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “আমরা বাস কম নিয়ে ট্রেকার, ট্রাক বেশি পরিমাণে নিয়েছি। পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থেই এই সিদ্ধান্ত।” |
|
|
|
|
|