ঠিক এক দিন আগে ক্রিকেট বিশ্ব কুর্নিশ করেছে ধোনি-বাহিনীর ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের হ্যাটট্রিককে। আর আজ সেই ধোনি ব্রিগেডই সেলাম জানাল আর এক যোদ্ধাকে। যাঁর লড়াই নিছকই ক্রিকেটীয় গণ্ডির মধ্যে আটকে নেই। যাঁর লড়াই জন্ম দিয়েছে নতুন এক রূপকথার। যে রূপকথাকে দু’মলাটের মধ্যে আবদ্ধ করে রাজধানীতে প্রকাশিত হল যুবরাজ সিংহের ক্যানসার-যুদ্ধের ইতিকথা ‘দ্য টেস্ট অব মাই লাইফ’।
“ও যে আমাদের সঙ্গে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে এখানে বসে আছে, এটা স্বপ্নের মতো লাগছে,” বলছিলেন শবনম সিংহ। ছেলের বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে। সামনে তখন ভারতীয় ক্রিকেটের মহাতারকার মেলা। নামগুলো চেনা সচিন, ধোনি, কোহলি, সহবাগ। তবে এঁরা আজ যেন বড্ড অচেনা। পেশাদারিত্বের পোশাকটা খুলে ফেলে সবাই পাশের বাড়ির ছেলে। কখনও খোলামেলা হাসি, কখনও তুলে আনা টুকরো টুকরো স্মৃতি। ছোট্ট ছোট্ট ফ্রেমগুলো বড় ক্যানভাসে ফেললে একটা ছবিই ধরা পড়ছে এক মহানায়কের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা আর শ্রদ্ধা। |
যুবরাজের রাজসভায়
|
এক টিম, নানা মুহূর্ত। মাইক হাতে ধোনি ধামাকা, শ্রোতা যুবরাজ। |
|
সচিন যেমন বললেন, “বিশ্বকাপে ঢাকায় প্রথম ম্যাচ খেলতে গিয়েছি। ডিনারের সময় যুবির সঙ্গে গল্প করতে গিয়ে বুঝলাম, ও পুরো সুস্থ নয়। তখনও ওর অসুখটা সম্পর্কে জানতাম না। ও-ও জানত না। ওকে বলেছিলাম, একটা সময় আসবে যখন গোটা দল আর দেশ তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবে।” বিশ্বকাপেই সেই সময়টা এসেছিল। যুবরাজ সেই আস্থার মর্যাদা রেখেছিলেন। সেই সোনার মুহূর্তে ফিরে গিয়ে যুবরাজ বলছিলেন, “সচিন আমাকে বলেছিল, ‘এমন এক জনের জন্য বিশ্বকাপটা উপহার দেওয়ার কথা ভাবো, যে তোমার জীবনে অনেক গুরুত্ব রাখে।’ তখন নিজেকে বলি, সে সচিন ছাড়া কে হতে পারে? ছোটবেলা থেকে সচিন আমাকে উদ্দীপ্ত করে এসেছে। সে দিন থেকে আমি সচিনের জন্যই কাপ জিততে ঝাঁপিয়েছিলাম।”
এ তো গেল কাহিনির একটা পর্ব। অন্য পর্বটা শুরু হয়েছিল যুবরাজের ক্যানসার ধরা পড়ার পর। লন্ডনে যুবরাজকে দেখতে গিয়েছিলেন সচিন। “যুবির সঙ্গে লন্ডনে দেখা করতে যাওয়ার আগে অঞ্জলিকে বলি, ওর সামনে আমাকে শক্ত থাকতে হবে। ভেঙে পড়লে চলবে না। তার পর যুবরাজকে দেখে আমি খানিকটা নিশ্চিত হই। ওকে খুব কুল দেখাচ্ছিল। ও আমার ছোট ভাইয়ের মতো। ঈশ্বরকে প্রশ্ন করতাম, কেন যুবির ক্যানসার হল?”
|
খোশমেজাজে বীরু-সচিন-ধোনি। নয়াদিল্লিতে মঙ্গলবার যুবরাজের বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে। |
তাঁর অসুস্থতার ওই সময় একটা ঘটনা নাকি যুবরাজকে দারুণ অবাক করে দেয়। কী সেটা? “একটা এসএমএস পেয়ে চমকে যাই। ওটা পাঠিয়েছিল এমএস। বিশ্বাসই করতে পারিনি। ও তো সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। তাই জিজ্ঞাসা করছি, ওটা সত্যিই তুমি ছিলে ধোনি?” প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন যুবরাজ। “হ্যাঁ আমিই,” মাইক তুলে নিয়ে এ বার আসরে ভারত অধিনায়ক, “যুবরাজের অসুখের কথা ও বলার আগেই জেনেছিলাম। বিশ্বাস করতে পারিনি। নিজেকেই বলতাম, রিপোর্টগুলো ঠিক তো? ও যে তার পরে এত তাড়াতাড়ি মাঠে ফিরে আসতে পারবে, সত্যিই অবিশ্বাস্য।”
বিশ্বাস আর অবিশ্বাসটা যেন একে অপরের পরিপূরক হয়ে গিয়েছে যুবরাজের জীবনে। তিনি যে ফিরে আসবেন, বিশ্বাস করতে চাননি অনেকেই। একটা সময় অনেকেই বিশ্বাস করতে চাননি, তিনি মারণ রোগের শিকার হয়েছিলেন। “যে দিন যুবরাজ আমাকে বলেছিল, ওর ক্যানসার হয়েছে, বিশ্বাসই করতে পারিনি। ও ঠাট্টা করছে মনে করে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম,” বলছিলেন কোহলি। আর যুবরাজ? তিনি নিজে কী বিশ্বাস করতেন? “বিশ্বাস করতাম, ক্রিকেট মাঠে আবার ফিরে আসব।”
নিজের বিশ্বাসের মর্যাদা নিজেই দিয়েছিলেন যুবরাজ সিংহ।
|