জলপাইগুড়ি শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া করলা নদী সংস্কার প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমতি মিলেছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী আর্থিক বছরের প্রথম মাস অর্থাৎ এপ্রিলেই শুরু হয়ে যেতে পারে করলা অ্যাকশন প্ল্যানের কাজ। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর থেকে ওই প্রকল্প রূপায়ণে বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ১৭ কোটি টাকা। ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে করলা নদীতে বিষকাণ্ডের পরেই নদী সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। সেই মত বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে তৈরি করা হয় করলা আকশন প্ল্যান। সেচ দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার অসীম চৌধুরি বলেন, “খুবই গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর থেকেও বারেবারে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। শীঘ্রই প্রকল্পটি চালু হবে বলে আশা করছি।”
কী থাকছে করলা আকশন প্ল্যানে? সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত নদীর জলবদ্ধতার দশা কাটাতেই এই পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি নদীর পাড় সৌন্দর্যায়নের পরিকল্পনাও রয়েছে। করলা নদীর দৈর্ঘ প্রায় ৭ কিলোমিটার বাড়ানো হবে। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া যেখানে করলা নদী তিস্তায় গিয়ে মিশেছে, সেখানে বাঁধ তৈরি করে আরও প্রায় আড়াই কিলোমিটার টেনে নিয়ে যাওয়া হবে নদীকে। তৈরি করা হবে তিনটি স্পার। বর্তমানে যেখানে তিস্তা-করলার মোহনা রয়েছে সেখানে করলার নদী খাত থেকে তিস্তার নদী খাত অনেকটাই উঁচু। তার ফলে তিস্তা নদীর অতিরিক্ত জল করলায় প্রবাহিত হতে না পারায় নদীর নাব্যতা কমে গিয়েছে। এই সমস্যা দূর করতেই নদীর মোহনা আড়াই কিলোমিটার দূরে নিয়ে যাওয়া হবে।
নতুন মোহনায় করলা নদীর খাত তিস্তার থেকে সামান্য উঁচুতে রাখা হবে। যার ফলে করলার জল সহজেই তিস্তায় মিশতে পারায় নদীর জলবদ্ধতার সমস্যা মিটবে। বর্ষার সময়ে শহরে জমা বৃষ্টির জল করলা নদী দিয়ে তিস্তায় গিয়ে পড়বে। এর ফলে জলপাইগুড়ি শহরের নিকাশি সমস্যাও মিটবে বলে আশা করছে সেচ দফতর। আকশন প্ল্যানে শহরের দিনবাজার এবং হাসপাতাল পাড়া এলাকায় করলার খাত থেকে ড্রেজিং করে মাটি তোলার প্রস্তাব রয়েছে। কিংসাহেবের ঘাট, সমাজপাড়া, বাবুপাড়ায় করলা নদীর পাশে এলাকার সৌন্দর্যায়নের জন্য পার্কও তৈরি করা হবে।
জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “বিষয়টি নিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। উনিও বিষয়টি নিয়ে খুবই আগ্রহী। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় নদী সংরক্ষণ বিভাগের কাছে করলা নদীর পূর্ণাঙ্গ সংস্কার চেয়ে একটি পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছে। পরিকল্পনাগুলি রূপায়ণ হলে করলা নদী প্রাণ ফিরে পাবে।” |
