‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্প গতিহীন হুগলিতে |
হুগলি জেলায় ১০০ দিন প্রকল্পের আওতায় সবচেয়ে অবহেলিত হয়ে আছে ছাদের বৃষ্টির জল সংরক্ষণের জন্য ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্প। পঞ্চায়েত, ব্লক এবং জেলা প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবেই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি রূপায়িত হয়নি বলে প্রশাসনেরই একটি অংশের অভিযোগ। অথচ ২০০৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় সরকারের ১০০ দিন কাজ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সময় থেকেই জল সংরক্ষণ ও জল সঞ্চয় কর্মসূচির উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে প্রচার শুরু হয়। ওই কর্মসূচির অন্তর্গত পুকুর সংস্কার ও খনন এবং চেক বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে অগ্রগতি দেখা গেলেও, ছাদের বৃষ্টির জল সংরক্ষণ প্রকল্পটি প্রায় অধরাই রয়ে গেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ছাদে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ প্রকল্পটি নিয়ে হুগলির ২০৭টি পঞ্চায়েত এবং ১৩টি পুর এলাকার মধ্যে মাত্র ৭টিতেই কাজ হয়েছে। ওই ৭টির মধ্যে ৬টিতে আবার খালি কাঠামো নির্মাণ হয়েছে, প্রকল্পের রূপায়ণ হয়নি। রূপায়িত হয়েছে কেবল মাত্র আরামবাগ মহকুমা অফিসে নির্মিত ছাদের বৃষ্টির জল ধরে রাখার প্রকল্পটি। বাকি ৬টি কাঠামোও আরামবাগ মহকুমাতেই। পুড়শুড়া-২ পঞ্চায়েতের উদ্যোগে পুড়শুড়া ব্লকে ২টি, খানাকুল-৫ ব্লকের অধীন খানাকুল-২ পঞ্চায়েতের উদ্যোগে রামনগর অতুল বিদ্যালয়ে ১টি, মহকুমা প্রশাসনের উদ্যোগে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ১টি এবং মান্দারন পঞ্চায়েতের উদ্যোগে গোঘাট ব্লক অফিস চত্বরে ২টি।
এ দিকে, ২০১০ সাল থেকে প্রকল্পটির গতি আনতে সচেষ্ট রাজ্য সরকার। সমস্ত পঞ্চায়েত অফিস, সরকারি অফিস, শিশু-শিক্ষাকেন্দ্র, মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র ইত্যাদি যে ভবনগুলিতে বড় পাকা বা টিনের ছাদ রয়েছে এবং যেখানে বৃষ্টির জল জমা হয়, সেই জলের সংরক্ষণের জন্য সুবিধাজনক জায়গায় জলাধার নির্মাণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ভবিষ্যত্ জলসংকটের সমাধানের লক্ষে প্রকল্পটির গুরুত্ব বুঝিয়ে প্রচার শুরু হয়। বৃষ্টির ধরে-রাখা ওই জলে রাসায়নিক পদার্থ থাকে না এবং জীবাণুমুক্ত। পানীয় হিসাবে ব্যবহার ছাড়া অন্যান্য দৈনন্দিন কাজেও ওই জল ব্যবহার করা যাবে ইত্যাদি তথ্য জানাতে পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে কিছু কর্মশালাও হয়।
প্রকল্পটি রূপায়ণেও ‘মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ কর্ম নিশ্চয়তা তহবিল’ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ দেওয়ার নিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও কেন কোনও উদ্যোগ নেই?
বিভিন্ন পঞ্চায়েত প্রধানের বক্তব্য, কাজটি নানান সরঞ্জাম নিয়ে নির্মাণের কাজ। ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে মাটির কাজে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ টাকা সময় মতো পাওয়া যাচ্ছে না। এর পর জিনিসপত্র ব্যবহার করে কাজ হবে কী করে? যেমন আরামবাগের আরান্ডি-১ পঞ্চায়েতে মাস দেড়েক ধরে শ্রমিকদের প্রাপ্য প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে মালপত্র ব্যবহার করে কাজ করালে শ্রমিকদের বিক্ষোভ সামলানো যাবে না বলে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের দাবি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিডিওদেরও মত, প্রকল্পটি নিয়ে উপযুক্ত ভাবনা-চিন্তার অভাব আছে। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে বিশেষ উদ্যোগী হলে বা চাপ সৃষ্টি করলে সাফল্য না-মেলার কারণ ছিল না। এর খরচও বেশি নয়। ১০ হাজার লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন একটি জলাধার-সহ প্রকল্পটির সম্পূর্ণ খরচ বড়জোর ৩০ হাজার টাকার মধ্যে।
এ বিষয়ে ১০০ দিন কাজ প্রকল্পের জেলা নোডাল অফিসার পুলক সরকার বলেন, “১০০ দিন প্রকল্পের মূল কাজই জল ধরো, জল ভরো। পুকুর খনন ইত্যাদির মাধ্যমে সেই কাজ জোরকদমে চলছে। তবে ছাদের জল ধরে রাখার প্রকল্পটিতে এত দিন গতি ছিল না। সেটি এ বার শুরু হতে চলেছে। অনেকগুলি জায়গার পরিকল্পনা হয়েছে।” |