সিবিআই অফিসার সেজে বেপরোয়া ডাকাতি ব্যাঙ্কে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • চুঁচুড়া |
গ্রাহকেরা ব্যাঙ্কে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হল। বলা হল, এক কোণে মাথা নিচু করে বসে থাকতে। কারণ জানতে চাইলে হিন্দিতে উত্তর ভেসে এল, “বহুত ঘাপলা হুয়া হ্যায় ইস ব্যাঙ্ক মে (এই ব্যাঙ্কে নানা দুর্নীতি হয়েছে)। ভিজিল্যান্স চেকিং চল রহা হ্যায়।” কাউকে আবার বলা হল, “সিবিআই ছাপা (তল্লাশি) মার রহা হ্যায়।” পরে ব্যাঙ্ক কর্মীদের রিভলভার, ভোজালি দেখিয়ে ভল্ট থেকে প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।
মঙ্গলবার সকাল সওয়া ৯টা থেকে ঘণ্টা খানেক ধরে চুঁচুড়ার আখনবাজারের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় এমন নিখুঁত অপারেশন চালায় তিন দুষ্কৃতী। যার সঙ্গে সদ্য মুক্তি পাওয়া স্পেশাল-২৬ ছবিটির মিল খুঁজে পাচ্ছেন জেলা পুলিশ কর্তাদেরই একাংশ। সেখানেও দুষ্কৃতীদের দল নিজেদের সিবিআই অফিসার পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সংস্থা থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে পালাত।
মঙ্গলবার ডাকাতির ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে, সেখান থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে হুগলি জেলা পুলিশের সদর কার্যালয়। একশো মিটার দূরে চুঁচুড়া সদর থানা। জেলাশাসকের অফিস। স্বভাবতই এই ঘটনায় আতঙ্কিত শহরবাসী। জেলা পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী এ দিন তদন্তে আসেন। তিনি বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদ হচ্ছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।”
কী হয়েছিল এ দিন সকালে?
ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, সওয়া ৯টা নাগাদ চতুর্থ শ্রেণির ঠিকাকর্মী কার্তিক ক্ষেত্রপাল ব্যাঙ্কের তালা খুলে ঢুকে সাফাইয়ের কাজ সারছিলেন। সে সময়ে তিন জন দুষ্কৃতী ঢুকে পড়ে ওই কর্মীর মাথায় রিভলভার ঠেকায়। হুমকি দিয়ে ব্যাঙ্কের এক কোণে তাঁকে মাথা নিচু করে বসিয়ে রাখে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই একে একে চলে আসেন ব্যাঙ্কের অন্য কর্মীরা। তাঁদের সকলকে রিভলভার, ভোজালি দেখিয়ে একই ভাবে মাথা নিচু করে বসে থাকতে বলা হয়। কেড়ে নেওয়া হয় মোবাইল ফোন। ডাকাতদের এক জন আগাগোড়া ব্যাঙ্কের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। বাকি দু’জনই ভিতরে থেকে মূল অপারেশন চালায়। ব্যাঙ্কের ম্যানেজার দেবাশিস ঘোষ ঘটনার পরে আসেন। তিনি জানান, ক্লোজড সার্কিট টিভির যন্ত্রাংশ বের করে সেগুলিকে অকেজো করে দেয় দুষ্কৃতীরা। ব্যাঙ্কের অতিরিক্ত ম্যানেজারকে ভল্ট খুলতে বাধ্য করে নোটের বান্ডিল নিয়ে পালায়। ঘড়ির কাঁটায় তখন ১০টা ১৫ মিনিট। যাওয়ার আগে ব্যাঙ্কের দরজা বাইরে থেকে তালা মেরে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ব্যাঙ্কের নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষীরা আসেন। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। তারা এসে তালা ভেঙে সকলকে উদ্ধার করে।
কার্তিকবাবু বলেন, “ওরা তিন জন হঠাৎই ব্যাঙ্কে ঢুকে পড়ে। রিভলভার ঠেকিয়ে জানতে চায়, ব্যাঙ্ক কর্মীরা কে কখন আসে।” ব্যাঙ্কের গ্রাহক রাজীব গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “সকাল ১০টা নাগাদ ব্যাঙ্কে ঢুকেছিলাম। এক যুবক জানতে চাইল, কোথায় যাব। উত্তর দেওয়ার আগেই মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে হুকুম করল, সকলের সঙ্গে এক কোণায় গিয়ে বসে থাকতে। আওয়াজ করলে গুলি চালিয়ে দেবে বলেছিল ওরা।” সনৎ ঘোষ নামে এক গ্রাহক জানান, ব্যাঙ্কে ঢোকা মাত্র এক যুবক এগিয়ে এসে বলে, “সিবিআই রেড চল রাহা হ্যায়।” ঘরের এক কোণ দেখিয়ে বলা হয়, সেখানে গিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকতে।
রাজীবের কথায়, “এটা যে ডাকাতি হচ্ছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ ছিল না আমাদের কারও। কিন্তু ডাকাতেরা যে ভাবে নিজেদের কখনও সিবিআই কখনও ভিজিল্যান্সের লোক বলে পরিচয় দিচ্ছিল, তাতে তাজ্জব বনে যেতে হয়।” |