গাড়িতে পুলিশ, মুক্তিপণ নিতে এসে গ্রেফতার |
অপহরণকারীরা ভেবেছিল, মুক্তিপণের টাকা নিয়ে গাড়িতে একাই এসেছেন অপহৃতের স্ত্রী। কিন্তু বড় গাড়িটির পিছনের অংশে তখন ঘাপটি মেরে আছেন দুই পুলিশ অফিসার। মাঝের আসনের তলায় গুটিসুটি মেরে আরও দু’জন। অপহরণকারীদের এক জন গাড়ির কাছাকাছি আসতেই পিছনের আসন থেকে লাফ মেরে বেরিয়ে ওই দুষ্কৃতীর মুখ চেপে ধরেন এক পুলিশ কর্মী। তাকে সঙ্গে নিয়ে কাছেই দুষ্কৃতীদের ডেরা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অপহৃত যুবককে। ধরা পড়েছে ছয় অপহরণকারী। সোমবার রাত ১২টা নাগাদ এমনই নাটকীয় ঘটনা ঘটে শ্রীরামপুরের বাঙ্গিহাটি এলাকায়। |
বছর আঠাশের যুবক অমল মজুমদার নদিয়ার শান্তিপুরের বাঘাযতীন পাড়ার বাসিন্দা। শ্রীরামপুরে এক ঠিকাদারের অধীনে কাজ করেন তিনি। কর্মসূত্রেই মাস কয়েক আগে তাঁর পরিচয় সোলেমান মিস্ত্রি নামে বাংলাদেশের এক যুবকের। পুলিশ জানিয়েছে, অমলের কাছ থেকে হাজার দশেক টাকা পেত সোলেমান। সেই টাকা ফেরত দিতে পারছিলেন না অমল। তাঁর স্ত্রী পিঙ্কি জানান, টাকা ফেরত চেয়ে কিছু দিন ধরেই স্বামীকে ফোনে হুমকি দিচ্ছিল সোলেমান।
শেষমেশ টাকা ফেরত না পেয়ে অপহরণের ছক কষে। গত শনিবার সন্ধ্যায় কাজের সূত্রেই পুণে যাওয়ার ট্রেন ধরতে হাওড়া যান অমলবাবু। অভিযোগ, স্টেশন চত্বর থেকে সোলেমান ও তার সঙ্গীরা অমলকে একটি গাড়িতে জোর করে তোলে। সোলেমান থাকে বাঙ্গিহাটির অদূরে একটি স্টিল কারখানার কাছে। সেখানেই আনা হয় অমলকে। পিঙ্কির কাছে টেলিফোনে ২ লক্ষ টাকা চায় অপহরণকারীরা।
মুক্তিপণ নিয়ে দর কষাকষি চলতে থাকে। পিঙ্কি জানান, টাকা দিতে না পারলে স্বামীকে খুন করা হবে বলে হুমকি দেয় দুষ্কৃতীরা। অমলকে আটকে রেখে মারধর চলে। ফিল্মি কায়দায় টেলিফোনে অমলের স্ত্রীকে তাঁর চিৎকার শোনায় অপহরণকারীরা।
সোমবার সকালে শান্তিপুর থানায় বিষয়টি জানান পিঙ্কি। কিন্তু সেখানে সাহায্য পাননি বলে অভিযোগ। ২৫ হাজার টাকা জোগাড় করে সোমবার রাতে গাড়ি ভাড়া নিয়ে শ্রীরামপুরে আসেন পিঙ্কি। সঙ্গে ছিলেন এক আত্মীয়। সেখানে এসে যোগাযোগ করেন থানায়। অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। আইসি তথাগত পাণ্ডে তখনই চার পুলিশ কর্মীকে পিঙ্কিদেবীর গাড়িতে তুলে দেন। কিন্তু ওই বধূকে মুক্তিপণ নিয়ে একাই আসার নির্দেশ দিয়েছিল অপহরণকারীরা। সাদা পোশাকের পুলিশ কর্মীরা গাড়ির ভিতরেই লুকিয়ে পড়েন।
পুলিশ জানায়, রাত ১২টা নাগাদ সোলেমানের বাড়ির কাছেই একটি বন্ধ কারখানার মাঠে গাড়ি দাঁড়ায়। সেখানেই টাকা নিতে আসার কথা ছিল অপহরণকারীদের। এক জন গাড়ি কাছে এগিয়ে আসতেই গাড়ির পিছন থেকে নেমে এক পুলিশ কর্মী তাকে ধরে ফেলেন। তত ক্ষণে আরও পুলিশ ঘিরে ফেলেছে এলাকা। সোলেমানের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় অমলবাবুকে। দলের পাণ্ডা সোলেমান ছাড়াও ধরা পড়েছে গোলাম হোসেন, সাদ্দাম হোসেন, শেখ জলিল, শেখ কওসর ও শেখ গিয়াসুদ্দিন। মঙ্গলবার সকলকে আদালতে তোলা হলে সোলেমানকে ৩ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন শ্রীরামপুরের এসিজেএম রতন দাস। বাকিদের ১৪ দিনের জন্য জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। |