জয়ন্তবাবু তাঁর ল্যাপটপ না হারালে ঘটনাটি জানা যেত না।
জানা যেত না, কলকাতার নতুন টার্মিনালে ৪০০ ক্যামেরা বসিয়ে যে নজরদারি চালানো হচ্ছে, তাতে অনেক জায়গাই রয়ে যাচ্ছে অধরা। এমন সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গার ছবি ক্যামেরায় ধরা পড়ছে না, যেখানকার ছবি থাকাটা নিরাপত্তার খাতিরেও প্রয়োজন।
কলকাতা বিমানবন্দরকে ‘হাই-সেনসিটিভ’ বলে ধরা হয়। এই ধরনের বিমানবন্দরে ঠিক যে মুহূর্তে এক জন যাত্রী ঢুকছেন, সেখান থেকে তিনি টার্মিনাল ছাড়া পর্যন্ত তাঁর প্রতিটি গতিবিধি ক্যামেরাবন্দি থাকা উচিত। এক অফিসারের কথায়, “এটা অ্যান্টি-সাবোতাজ-এর প্রাথমিক শর্ত।” কিন্তু নতুন টার্মিনালে যাত্রীর বেশ কিছু গতিবিধি থেকে যাচ্ছে ক্যামেরার নজরদারির বাইরে। যার অর্থ, আপস করা হচ্ছে নিরাপত্তার সঙ্গেই! জানা গিয়েছে, যে সমস্ত জায়গায় ক্যামেরার নজরদারি সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন, কলকাতায় তার মধ্যেই কয়েকটি জায়গা থেকে যাচ্ছে অন্ধকারে। জয়ন্তবাবুর ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পরে নড়েচড়ে বসেছেন কর্তৃপক্ষ। এক অফিসারের কথায়, “এখন মনে হচ্ছে, কিছু কিছু জায়গায় যেমন ক্যামেরার অবস্থান বদল করতে হবে, তেমনই কোথাও নতুন করে ক্যামেরা বসাতেও হবে।” বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মা এ দিন বলেন, “নতুন টার্মিনাল চালু হওয়ার পরেও আমরা তিন মাস হাতে রেখেছি অন্তর্বর্তীকালীন সময় হিসেবে। কারণ আমরা জানি, এই সময়ে বিভিন্ন দিক থেকে সমস্যা আসবে। টার্মিনাল চলাকালীনই সেগুলির সমাধান করে ফেলতে হবে। সিসিটিভি ক্যামেরা নিয়েও সে রকম কিছু সমস্যা আছে।” |
বিমানবন্দরে ঠিক কী হয়েছিল জয়ন্তবাবুর সঙ্গে?
এক সফ্টওয়্যার সংস্থার সিইও জয়ন্ত সাহা সোমবার সকালে গুয়াহাটি যাচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিল ল্যাপটপ। নিয়ম মতো, নিরাপত্তা-বেষ্টনীতে দেহ তল্লাশির সময়ে ল্যাপটপ, মোবাইলও এক্স-রে করাতে হয়। প্লাস্টিকের বাক্সে ল্যাপটপ ও মোবাইল রেখে বাক্সের ভিতরে রাখা নম্বরটি তুলে নেন যাত্রী। একসঙ্গে বেশ কিছু যাত্রীর বাক্স এক্স-রে হওয়ার পরে এক জায়গায় এসে জমা হয়। দেহ তল্লাশির শেষে টোকেন নম্বর মিলিয়ে বাক্স থেকে নিজেদের জিনিস ফেরত নেন যাত্রীরা।
জয়ন্তবাবুর বাক্সের নম্বর ছিল ১১। নিয়মমাফিক দেহ তল্লাশির পরে ভিতরে ঢুকে তিনি দেখেন, ১১ নম্বর বাক্সটির ভিতরে তাঁর ল্যাপটপ নেই, ৯ নম্বর টোকেন রাখা। ৯ নম্বর লেখা বাক্সে অন্য একটি ল্যাপটপ পড়ে রয়েছে। সেটিকে দেখতে তাঁর ল্যাপটপেরই মতো। জয়ন্তবাবুর কথায়, “বুঝতে পারি, ভুল করে অন্য যাত্রী আমার ল্যাপটপ নিয়ে গিয়েছেন।” নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ-কে বিষয়টি জানাতে এক অফিসার জয়ন্তবাবুকে কন্ট্রোল রুমে নিয়ে যান। সেখানে মনিটরে সিসিটিভি-র ছবি থেকে দেখা যায়, অন্য এক ব্যক্তি জয়ন্তবাবুর ল্যাপটপ তুলে নিয়ে গিয়েছেন।
জয়ন্তবাবু বলেন, “আমি অনুরোধ করি, যে গেট পেরিয়ে যাত্রীরা বিমানে উঠছেন, সেখানকার ছবি দেখতে। তা হলে জানা যেতে পারে ওই ল্যাপটপ নিয়ে যাত্রী কোন বিমানে উঠেছেন। সেই বিমানের ভিতরে ঘোষণা করিয়ে ল্যাপটপটি উদ্ধার করা সম্ভব। ওই যাত্রীও তো তাঁর নিজের ল্যাপটপটি ফেলে গিয়েছেন।”
আর তখনই ঝুলি থেকে বেরিয়ে পড়ে বেড়াল। সিআইএসএফ জানায়, নতুন টার্মিনালের যে গেট দিয়ে যাত্রীরা বেরিয়ে গিয়ে বিমানে উঠছেন, সেই গেটগুলি নজরদারির আওতায় নেই! নতুন টার্মিনালে এ রকম আরও কিছু জায়গা রয়েছে, যা ক্যামেরার নজরবন্দি নয়। এই ‘শ্যাডো’ বা ছায়াঘেরা এলাকা কোথায় কোথায় রয়েছে, এখন তারই খোঁজে নেমেছেন কর্তৃপক্ষ।
জয়ন্তবাবু সোমবার ল্যাপটপ ছাড়াই গুয়াহাটি যান। দুপুরে আগরতলা থেকে পলাশ সরকার নামে এক ব্যক্তি কলকাতা বিমানবন্দরে ফোন করে জানান, সকালে ভুল করে তিনি অন্য এক জনের ল্যাপটপ নিয়ে এসেছেন। নিজের ল্যাপটপটি ফেলে এসেছেন কলকাতায়। পলাশবাবু ওএনজিসি-তে চাকরি করেন। মঙ্গলবার যে যাঁর নিজের ল্যাপটপ ফেরত পেয়েছেন। তবে, তার আগে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন নতুন টার্মিনালের নিরাপত্তার হালও। |