মহেশতলার ষোলো বিঘা বস্তিতে কী ভাবে আগুন লাগল, তার তদন্ত করবে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। দশ দিনের মধ্যে কমিশনের পুলিশ সুপার এবং রেজিস্ট্রারকে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর মহেশতলার ষোলো বিঘা বস্তির অগ্নিকাণ্ড নিয়ে তদন্তের আবেদন করে কমিশনের কাছে। কমিশনের যুগ্মসচিব সুজয়কুমার হালদার জানিয়েছেন, এপিডিআর-এর আবেদনের ভিত্তিতে কমিশনের চেয়ারম্যান, বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় ওই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
ঘটনার তিন দিন পরে এ দিন সকাল থেকে ওই বস্তিতে পুনর্বাসনের কাজ শুরু করে প্রশাসন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহকুমাশাসক (সদর)-এর নেতৃত্বে বস্তিবাসীদের জন্য ওই বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়। প্রশাসন সূত্রে খবর, দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে এক মাসের মধ্যেই পুড়ে যাওয়া বস্তির সব ঘর তৈরির কাজ শেষ হবে। মহকুমাশাসক (সদর) তনভির আজমল এ দিন বলেন, “পুড়ে যাওয়া বস্তিতে নতুন যে ঘর তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে, তার ভিত থেকে দু’ফুট হবে ইটের তৈরি। বাকিটা হবে বাঁশ ও টিনের। আট-দশটি ঘরের পরে থাকবে কিছুটা ফাঁকা জায়গা। এই ভাবেই তৈরি হবে ব্লকগুলি। প্রতিটি ব্লকে থাকবে একটি করে সাধারণ শৌচাগার।” |
পোড়া বস্তির পুনর্নির্মাণ সূচনা করলেন এসডিও।—নিজস্ব চিত্র |
সোমবার দলের তরফে বস্তিবাসীদের বাড়ি তৈরির জন্য একশোটি মতো বাঁশ পাঠিয়েছিলেন কলকাতা পুরসভার ১৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জিত শীল। কিন্তু সেই সাহায্য নেননি বস্তিবাসীরা। তবে এ দিন তাঁরা সরকারি কাজে কোনও বাধা দেননি। মহেশতলার ষোলো বিঘা বস্তির বাসিন্দারা সরকারের ওই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও তাঁদের দাবি, গত নভেম্বরে আগুনে পুড়ে যাওয়া বস্তির অন্য অংশেও বাড়ি তৈরি করে দিতে হবে সরকারকে। ষোলো বিঘা বস্তি কমিটির সম্পাদক সইদ আলি বলেন, “প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বস্তির পুড়ে যাওয়া সব ঘর তৈরি করে দেবে সরকার।”
মঙ্গলবার পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম জানান, পুড়ে যাওয়া বস্তির পিছনেই ‘বেসিক সার্ভিস ফর আর্বান পুওর’ (শহরের দরিদ্র শ্রেণির বাড়ি তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় প্রকল্প) প্রকল্পে ১১০০টি পাকা বাড়ি তৈরি হচ্ছে। এটি হবে মূলত সংখ্যালঘুদের জন্য। ওই বাড়ি তৈরির কাজ শেষ হলে ষোলো বিঘা বস্তির বাসিন্দাদের সেখানে চলে যেতে বলা হবে। তবে তাঁরা যাবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত তাঁরাই নেবেন।
মন্ত্রী জানান, পরিকল্পনা ও নকশা তৈরি করবেন পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারেরা। পানীয় জলের ব্যবস্থার জন্য প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা খরচ করে সেখানে একটি গভীর নলকূপ বসানো হবে।
কেন এলাকার বস্তিবাসীরা ঠিক সময়ে ত্রাণ পাননি? এর উত্তরে এ দিন মন্ত্রী দাবি করেন, রবিবার তিনি সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, পুড়ে যাওয়া বস্তির বাসিন্দাদের জন্য সরকার থেকে যে ত্রাণ ও কাপড়-জামা দেওয়া হয়েছিল, বস্তির একদল লোক নিয়ে লুকিয়ে রাখে। তা বস্তিবাসীদের মধ্যে বিলি করা হয়নি। মন্ত্রীর দাবি অনুযায়ী, বস্তির লোকরাই তাঁকে ওই ঘটনা জানিয়েছেন। পরে অবশ্য সেগুলি বস্তিবাসীদের মধ্যে বিলি করে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়। মঙ্গলবারও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দু’বেলা রান্না করা খাবার বিলি করা হয়েছে ওই এলাকায়।
এ দিকে, এ দিন এআইইউডিএফ নেতা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী এই অগ্নিকাণ্ডের সিবিআই তদন্ত দাবি করেছেন। এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, “প্রোমোটার-রাজ কায়েম করতেই সমাজবিরোধীরা ওই বস্তিতে আগুন দিয়েছে।” প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
শনিবার মহেশতলার ষোলো বিঘা বস্তির প্রায় কয়েকশোর বেশি ঘর পুড়ে যায়। অভিযোগ, তার পর থেকে বস্তিতে মন্ত্রী-নেতাদের আনাগোনা লেগে থাকলেও আশ্বাসের বেশি কিছুই জুটছিল না বস্তিবাসীদের। এ দিনে কাজ শুরু হওয়ায় স্বভাবতই খুশি তাঁরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই বস্তির পুনর্বাসনের কাজ তদারকি করার জন্য বস্তির মধ্যে শিবির করে থাকবেন কর্মীরা। এই সপ্তাহে বস্তির ভিতরে পুলিশ-শিবিরও চালু করা হবে বলে জানান পুলিশের কর্তারা। |