দুলালি মা। এসেছিলেন সেই আউশগ্রাম থেকে। আর তাঁর আবির্ভাবেই দুর্যোগ কেটেছিল রামকৃষ্ণপুরের। সেই কথাকে স্মরণ করেই একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে অকাল দোলে মেতে ওঠেন নানুরের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দারা। দুলালি মা বা দুলো মায়ের সৌজন্যে নির্ধারিত দিনের আট দিন আগেই রঙের খেলায় মাতেন গ্রামের অবালবৃদ্ধবণিতা। সমস্ত রীতি মেনে আজ, বুধবার দোল উৎসব হবে সেই রামকৃষ্ণপুরে।
উৎসবের পিছনে বহু দিনের পুরনো একটি সংস্কার কাজ করলেও, সেই সংস্কারই মিলিয়ে দেয় গোটা গ্রামকে। এখানকার জনশ্রুতি হল, শতাধিক বছর আগে কলেরার মড়ক লেগে উজাড় হয়ে যাওয়ার জোগার হয়েছিল ওই গ্রাম। তখন গ্রামবাসীরা নাকি স্বপ্নাদেশ পান বর্ধমানের আউসগ্রামের বুধুরার দুলালি মায়ের পুজো করলে গ্রাম থেকে কলেরার মড়ক কমবে। তারপরেই আউসগ্রাম থেকে দুলালি মাকে এনে শুরু হয় পুজো। রামকৃষ্ণপুরের বিশ্বাস, এরপর থেকেই নাকি গ্রামে আর কোনও দিন কলেরা হয়নি। প্রবীণ বাসিন্দা সুবল গড়াই, নবকুমার ভৌমিকদের কথায়, “ঠাকুরদাদের মুখেও শুনেছি মায়ের পুজো প্রচলনের পর থেকে গ্রামে আর কলেরা হয়নি। আমরা নিজেরাও কখনও দেখিনি।” |
গ্রাম থেকে কলেরা গিয়েছে। কিন্তু দুলো মায়ের আসা বন্ধ হয়নি। অন্যান্য বছরের মতো সোমবারই দুলো মাকে নিয়ে গ্রামে পৌঁছে গিয়েছেন সেবাইত বিশ্বনাথ দেবাংশী এবং ঢাকি নন্দলাল দাস। মঙ্গলবার ধুমধাম করে মায়ের পুজোও করা হয়েছে। বুধবার মা ফিরে যাবেন নিজের ঘরে। তারপরেই গ্রামবাসী মেতে উঠবেন অকাল দোলে। বিশ্বনাথবাবুরা বলেন, “পুরুষানুক্রমে মাকে নিয়ে আমরা এই গ্রামে আসছি। মায়ের পুজোর জন্য এই গ্রামের প্রতিটি পরিবারের বড়রা উপোস করে থাকেন। পুজোর শেষে সবাই প্রসাদ নিয়ে যান।”
দুলালি মায়ের পুজো হাসি এনেছে গ্রামের কচিকাঁচাদের মুখেও। পঞ্চম শ্রেণির চন্দনা প্রধান, অষ্টম শ্রেণির সুব্রত দেওয়াসী-রা বলল, “রাত পেরালেই আমরা বন্ধুরা মিলে আবির, পিচকারি নিয়ে দোল খেলতে নামব। আর আসল দোলের দিন বন্ধুদের গ্রামে গিয়েও ফের রঙ মাখব। আমাদের ডবল মজা!” |