একটি টোলেই লোকসান বছরে দশ লক্ষ
য়ের থেকে ব্যয় বেশি!
ক্ষমতায় আসার পর থেকে বারবারই রাজ্যের বেহাল আর্থিক অবস্থার কথা মনে পড়িয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাজেট বক্তৃতাতেও একই দাবি করে থাকেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও। তাই অর্থনীতির হাল ফেরাতে রাজস্ব আদায়ে বেশি করে জোর দিতে চায় নতুন সরকার। কিন্তু একটা ময়ূরাক্ষী টোল ট্যাক্সেরই রাজস্ব আদায়ের যা হাল ধরা পড়েছে, তাতে প্রশ্ন উঠছে শুধু মাত্র রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা করেই কি রাজ্যের আর্থিক হাল ফিরবে? ওই টোল ট্যাক্স নিয়ে যে সব চমকপ্রদ তথ্য মিলেছে তাতে সংশয় তো থাকছেই।
কী সেই তথ্য?
সাঁইথিয়ায় ময়ূরাক্ষী নদীর উপরে তৈরি সেতুর (‘নতুন ব্রিজ’ নামে পরিচিত) ওই টোল থেকে বছরে যা আয় হয়, তার ছ’ গুন বেশি খরচ হয়ে যায় টোলের কর্মীদের বেতন মেটাতেই! পূর্ত দফতর থেকে পাওয়া তথ্যই বলছে, ওই সেতুর টোল আদায়ে থাকা কর্মীদের পিছনে বছরে ১২ লক্ষ টাকারও বেশি ব্যয় হয়। আর আয়? ২০১১-১২ আর্থিক বছরেই ওই টোল থেকে সরকারের আয় হয়েছে ১,৯৯,৩৬০ টাকা। অর্থাৎ কিনা শুধু একটি সেতুর টোল আদায়েই বছরে ১০ লক্ষ টাকার লোকসান! স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, লক্ষ লক্ষ টাকা যদি ঘাটতিই হয়, তা হলে এমন একটি টোল আদায় কেন্দ্রকে এখনও কেন টিকিয়ে রাখা হয়েছে?
ময়ূরাক্ষীর সেই টোল আদায় কেন্দ্র। —নিজস্ব চিত্র।
জেলা পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমের একাংশের সঙ্গে সাঁইথিয়া-সিউড়ি ও বর্ধমানের যোগাযোগ তৈরি করতে ১৯৬৬ সালে সাঁইথিয়ায় ময়ূরাক্ষী নদীর উপর সেতুটি নির্মাণ করেন তৎকালীন রাজ্য সরকার। খরচ হয় প্রায় ৪৩ লক্ষ টাকা। টোল ট্যাক্স নেওয়া শুরু হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। কয়েক মাস আগেও সাঁইথিয়া নতুন ব্রিজের টোল ট্যাক্স আদায়ের জন্য পাঁচজন ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট টোল কালেক্টর’ (এটিসি) কর্মী ছিলেন। ওই টোল থেকে আয় ও ব্যয়ের বহর দেখে ইতিমধ্যেই দু’জন এটিসি কর্মীকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।
এক জন গত ডিসেম্বরেই অবসর নিয়েছেন। বর্তমানে সেখানে দায়িত্বে আছেন দু’জন এটিসি কর্মী। এ ছাড়াও সেতুটির টোল আদায়ের জন্য সিউড়ি পূর্ত দফতরেও দু’জন ক্লার্ক আছেন। এই চার কর্মীর মাইনে বাবদ মাসে খরচ হয় প্রায় ৯৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া প্রতি মাসে সুইপার (আংশিক সময়ের) ২ হাজার টাকা, ও বিদ্যুৎবিল দিতে হয় গড়ে ১০০০-১২০০ টাকা। এখানেই শেষ নয়। সিউড়ি থেকে টোল ট্যাক্স আদায়ের টাকা নিতে মাসে ৩-৪ বার গাড়ি আসে সাঁইথিয়ায়। ব্যয়ের ভার বৃদ্ধি করে সেই গাড়িও!
নির্দিষ্ট হারে ব্যয় বাড়লেও, আয় কিন্তু ক্রমশই কমেছে। অথচ ১৯৭৪-৭৫ সালের তুলনায় গাড়ি বেড়েছে কয়েকশো গুন। কিন্তু টোল আদায়ের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, আয়ে তেমন কোনও বৃদ্ধিই আসেনি। ১৯৭৪-৭৫ সালে আয় প্রায় ১ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা। ২০১১-১২তেও কতকটা তা-ই ১ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা! ২০১২-১৩ সালের হিসেব পূর্ত দফতর এখনও করেনি। প্রশ্ন, গাড়ির সংখ্যা কয়েকশো গুন বাড়লেও সে হারে টোল ট্যাক্স আদায় কেন বাড়ল না? পূর্ত দফতর কিন্তু দোষ চাপিয়েছে এটিসি কর্মীদের উপরেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক বলেন, “ওই টোল ট্যাক্সের এটিসি কর্মীরাই ঠিক মতো ডিউটি করেননি।”
কী বলছেন এটিসি কর্মীরা?
এটিসি স্বপন পালচৌধুরি-র কিন্তু যুক্তি, ওই সেতুর বদলে অধিকাংশ গাড়িই এখন আরেক প্রান্তের ফেরিঘাট বা ভাসা ব্রিজ ব্যবহার করে। এ ছাড়া স্থানীয় কোনও গাড়িই টোল দিতে চায় না বলেও তাঁর দাবি। সেতুর টোল আদায়ে কর্মীদের ‘অসহায়’ অবস্থার কথা ধরা পড়েছে অন্য এটিসি প্রণব গুঁইয়ের কথায়। প্রণববাবু জানালেন, “আমি অসুস্থ। আমাদের দু’জনেরই বয়স হয়েছে। সন্ধ্যার পর নিরাপত্তার অভাবে অফিসে তালা লাগিয়ে চলে আসতে বাধ্য হই। ওখানে একার পক্ষে টোল ট্যাক্স আদায় করা বা ডিউটি করা সুরক্ষিত নয়। একাধিক বার আমাদের মারধর করে টাকাপয়সা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।”
টোল আদায়ের বহর
সাল আদায়
১৯৭৪-৭৫
১ লক্ষ
২০০২-০৩ ১০ লক্ষ
২০০৯-১০ ৩ লক্ষ
২০১০-১১ ২ লক্ষ
২০১১-১২ ২ লক্ষ

তথ্য: জেলা পূর্ত দফতর।
এ ব্যাপারে সাঁইথিয়া থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তাঁরও দাবি, “স্থানীয় কোনও গাড়িই টোল-ট্যাক্স দিতে চায় না। তা ছাড়া টোল আদায়ের ব্যবস্থা থাকায়, ট্রেড ইউনিয়নগুলি-সহ অনেকেই এখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে জোর করে টাকা আদায় করে। ফলে অধিকাংশ গাড়ি চালকেরা (বহিরাগত) সরকারকে টোলের টাকা না দিয়েই চলে যায়।” তাঁর দাবি, দু’জন এটিসি কর্মী দিয়ে ওখানে টোল আদায় করা সম্ভব নয়। আধিকারিকদের কাছে নিজেদের অন্যত্র বদলি করে দেওয়ার আবেদনও জানিয়েছেন প্রণববাবুরা।
লোকসানে চলা ওই টোল আদায় কেন্দ্রের অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে সাঁইথিয়ার পুরপ্রধান বীরেন্দ্রকুমার পারখের অভিযোগ, “রাজ্য সরকারের ভুল সিদ্ধান্তেই টোল আদায়ে লোকসানের বহর বাড়ছে।” তাঁর পরামর্শ, “সরকারের উচিত টেন্ডার ডেকে টোলগুলি জনসাধারণকে দিয়ে দেওয়া। সরকারের কোনও মাথা ব্যাথা থাকে না, কিছু বেকার ছেলেমেয়েরও রুটি রোজগারের ব্যবস্থা হয়।” ময়ূরাক্ষীর টোল আদায়ের এই হাল হলেও বীরভূমে পূর্ত দফতরের হাতে থাকা অন্য সেতুটির (ইলামবাজারে অজয় নদের উপরে) টোল আদায় কেন্দ্র থেকে কিন্তু আয় হয় দেড় কোটিরও বেশি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জেলা পূর্ত দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার অর্নিবাণ দে বলেন, “নানা প্রতিকূলতার কারণেই ময়ূরাক্ষী ব্রিজের টোল আদায়ে ঘাটতি হচ্ছে। কী ভাবে সমস্যা মেটানো যায়, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.