এক সময়ে এই গ্রাম থেকেই উঠে এসেছেন বহু বিখ্যাত কবাডি খেলোয়াড়। রাজ্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করেছে তাঁদের অনেকেই। ‘কবাডি গ্রাম’ নামে বিখ্যাত হয়ে ওঠা কালনার এই কালীনগর গ্রাম এখন দিন কাটাচ্ছে ভাগীরথীর ভাঙনের শঙ্কা নিয়ে। কালনা ১ ব্লকের এই কালীনগরের বাসিন্দাদের দাবি, ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত প্রশাসন উদ্যোগ শুরু না করলে ভিটেমাটি হারিয়ে বিপদে পড়তে হবে তাঁদের।
ধাত্রীগ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এই গ্রামেতে ঢুকতে গেলে কিছুটা ভাগীরথীর উপর দিয়ে যেতেই হবে। নদীপথ পেরোনোর উপায় একমাত্র নৌকো। তা পেরিয়ে গ্রামে ঢুকতেই একটি সরু মেঠো পথ নজরে পড়বে। রাস্তার দু’পাশে বিস্তীর্ণ চাষের জমি। বাসিন্দাদের দাবি, ভাগীরথীর পাড় ঘেঁষা চাষের জমি গত দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে ভাঙনের কবলে। ইতিমধ্যে বহু জমি তলিয়ে গিয়েছে। |
ভাঙনের প্রধান কারণ হিসেবে গ্রামবাসীরা জানান, জলোচ্ছ্বাস তীব্র গতিতে আছড়ে পড়ায় ভাঙছে পাড়। এ ছাড়াও রাতের অন্ধকারে দুষ্কৃতীরা নদীর পাড় থেকে মাটি কেটে নেওয়ায় ভাঙনের চেহারা ভয়াবহ আকার নিয়েছে। গ্রামের চাষি মনিম শেখের কথায়, “ছোট থেকে দেখছি পাড় এখনও ভেঙেই চলেছে। অনেক জমি চোখের সামনে তলিয়ে গেল। কোনও দিন হয়তো আমার জমিটাও চলে যাবে।” ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে নব্বইয়ের দশকের শুরু পর্যন্ত এই গ্রাম বহু ভাল কবাডি খেলোয়াড় উপহার দিয়েছে। গ্রামের মানুষের প্রধান জীবিকা চাষবাসই। মনিম শেখের দাবি, কবাডি খেলে খ্যাতি পেলেও চাকরি পেয়েছেন কিছু সংখ্যক মানুষ। ভাঙনের কবলে পড়ে গোটা গ্রামই যদি তলিয়ে যায়, তা হলে মানুষ বাঁচবে কী করে। অতীত দিনের কবাডি খেলোয়াড় হাবিব শেখের কথায়, “গ্রামে মসজিদ, প্রাথমিক স্কুল, মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, জল প্রকল্প-সহ নানা সরকারি প্রকল্প রয়েছে। সেগুলি বাঁচাতে গেলে অবিলম্বে ভাঙন ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।” তিনি জানান, ভাঙনের কারণে তাঁদের প্রায় ১০ বিঘা কৃষি জমি তলিয়ে গিয়েছে। আরও জমি তলিয়ে যেতে বসেছে। প্রশাসনের সাহায্যে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
কালীনগর গ্রামের ভাঙনের কথা স্বীকার করেছে কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতি। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শান্তি চাল বলেন, “ভাঙন ঠেকাতে গ্রামবাসীরা আমাকে লিখিত আবেদন করেছে। এ ব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” কালনার মহকুমাশাসক শশাঙ্ক শেঠির আশ্বাস, কালীনগরের ভাঙনের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে। |