বিয়ে নিয়ে দুই পরিবারের বিবাদ মেটাতে তৃণমূল অফিসে ডেকে এক পক্ষের লোকজনকে মারধরের অভিযোগ উঠল বর্ধমান শহরে। ওই পরিবারের সদস্য এক শিক্ষিকার শ্লীলতাহানির চেষ্টাও হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ দায়ের করা সত্ত্বেও পুলিশ মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে দাবি করেছে অভিযোগকারী পরিবারটি। পুলিশ যদিও তা মানেনি। মারধরের কথা অস্বীকার করেছে তৃণমূলও। বর্ধমানের খোসবাগানের বাসিন্দা তপন ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন, সম্প্রতি তাঁর ভাই অরূপ শহরের মেহেদিবাগানের এক তরুণীকে বিয়ে করেন। কিন্তু মেয়ের বাড়ির লোকজন বিয়ে মেনে নিতে পারেননি। কিন্তু ওই তরুণীও বিয়ের ব্যাপারে অনড় থাকায় শেষ পর্যন্ত রবিবার তাঁর মা তুলসীদেবী লোকজন নিয়ে লক্ষ্মীপুরে অরূপবাবুর বাড়িতে চড়াও হন বলে অভিযোগ তপনবাবুদের। তাঁর দিদি, চিত্তরঞ্জন এমএস গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শ্যামলী ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন, ওই সব লোকজন বাড়িতে ঢুকে তাঁকে ও তপনবাবুকে মারধর করে। পুলিশ এসে তুলসীদেবীকে আটক করে। পুলিশে অভিযোগ জানাতে গেলে বর্ধমান থানা শুধু একটি জেনারেল ডায়েরি করে। তপনবাবুর অভিযোগ, “স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিকাশ মণ্ডলের ফোন পেয়ে তুলসিদেবীকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।” |
শ্যামলীদেবী জানান, ঘটনার পর দিন, সোমবার আপস-মীমাংসায় বিয়ে নিয়ে বিবাদ মেটাতে তাঁদের লক্ষ্মীপুর মাঠের তৃণমূল অফিসে ডেকে পাঠানো হয়। তাঁদের অভিযোগ, সেখানে গেলে আগের দিন বাড়িতে হামলায় থাকা দুই তৃণমূল কর্মী বাপ্পা পাসোয়ান ও সুরজ সাউ পার্টি অফিসে ঢোকেন। তাঁদের দেখে হামলার ঘটনার কথা তুলতেই তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মী ক্ষিপ্ত হয়ে তপনবাবুকে মারধর করে। তাঁর স্ত্রী রুমা ও শ্যামলীদেবীকে গালিগালাজ ও শ্লীলতাহানির চেষ্টাও হয় বলে অভিযোগ। তাঁরা বর্ধমান থানায় গিয়ে এ ব্যাপারে অভিযোগপত্র জমা দেন।
শ্যামলীদেবীর দাবি, ওই ঘটনায় কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা জানতে বর্ধমান থানায় গেলে পুলিশ দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখে। শ্লীলতাহানির চেষ্টার কথা অভিযোগ থেকে তুলে নেওয়ার জন্যও চাপ দেওয়া হয় বলে তাঁদের অভিযোগ। যদিও তাঁরা তাতে রাজি হননি।
পুলিশ অবশ্য এ কথা মানেনি। বর্ধমান থানার আইসি দিলীপকুমার গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “তপনবাবুদের বাড়িতে হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মেয়ের মাকে আটক করে। তপনবাবুদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা তা সময় মতো না দেওয়ায় ওই মহিলাকে থানা থেকে জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে তপনবাবুদের বাড়ির লোকজন যে অভিযোগ করেছেন, তার তদন্ত করা চলছে। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ঠিক নয়।”
তৃণমূল নেতা বিকাশবাবুর যদিও দাবি, “আমি কাউকে থানা থেকে ছাড়াতে ফোন করেনি। মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।” এলাকার আর এক তৃণমূল নেতা মহবুব রহমানের বক্তব্য, “আমি সে দিন লক্ষ্মীপুর মাঠের অফিসে ছিলাম না। তবে যা শুনেছি, চল্লিশ বছরের এক ব্যক্তির সঙ্গে বছর উনিশের মেয়ের বিয়ে মেনে নিতে পারেননি তুলসিদেবীরা। আমরা তাই শন্তিতে আলোচনা করে বিষয়টির বিহিত করতে চেয়েছি। তাই তাঁদের দলীয় অফিসে ডাকা হয়েছিল। তবে কাউকে মারধর করা হয়নি।” |