পড়ে রয়েছে বরাদ্দ টাকা, রান্না তবু আকাশের নীচেই
রাদ্দ টাকা পড়ে রয়েছে বেশ কয়েক বছর, রয়েছে সরকারি নির্দেশ, পড়ুয়াদের প্রয়োজন সবই, তবুও সালানপুর ব্লকের অন্তর্গত চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানার আবাসন এলাকার ১৪টি স্কুলে রান্নাঘর নেই। মিড-ডে মিলের রান্নাঘর তৈরির সরকারি বরাদ্দের ২৪ লক্ষ টাকা খরচ করতে পারেনি পঞ্চায়েত সমিতি। কেন? পঞ্চায়েত সমিতি জানায়, এটা রেল ইঞ্জিন কারখানার নিজস্ব এলাকা। কারখানা কর্তৃপক্ষ রান্নাঘর নির্মাণের অনুমতি দেননি। আবার কারখানা কর্তৃপক্ষের যুক্তি, যে নিয়মে আবেদন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল তা মানা হয়নি। আর এই দু’তরফের ঠেলাঠেলিতে ১৪টা স্কুলের কয়েক হাজার পড়ুয়াদের কপালে জুটছে অস্বাস্থ্যকর খাবার। সালানপুর ব্লকের এই আবাসন এলাকায় রাজ্য সরকার অনুমোদিত ৯টি প্রাথমিক ও ৫টি মাধ্যমিক স্কুল আছে। সর্বশিক্ষা অভিযানের প্রকল্পের আওতায় এই ১৪টি স্কুলেই পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল দেওয়ার কথা। প্রতিটি স্কুলে একটি করে উপযুক্ত রান্নাঘর থাকাও আবশ্যক। কিন্তু বাস্তব একেবারেই উল্টো। মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে রান্না একেবারেই হয় না। ছাত্রছাত্রীদের বরাদ্দের চাল দেওয়া হয়।
মিড-ডে মিলের উনুন। সালানপুরের একটি স্কুলে তোলা নিজস্ব চিত্র।
প্রাথমিক স্কুলগুলিতে রান্না হয় ঠিকই, তবে কখনও ক্লাসঘরের মধ্যে, কখনও খোলা আকাশের নীচে, আবার কখনও প্লাস্টিকের ছাউনি টাঙিয়ে। এভাবে রান্না চলায় আপত্তি জানান অভিভাবকেরা ও স্থানীয় বাসিন্দারা। এরপরেই রাজ্য সরকার স্কুলগুলিতে রান্নাঘর বানানোর জন্য ২৪ লক্ষ টাকা সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির কাছে পাঠায়। কিন্তু তারপরে পেরিয়েছে বেশ কয়েক বছর। রান্নাঘর চলছে পুরনো উপায়েই। বরাদ্দের টাকা খরচ করতে পারেনি পঞ্চায়েত সমিতি। পঞ্চায়েত সমিতির জবাব, চিত্তরঞ্জন রেল আবাসন অঞ্চলটি চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানার নিজস্ব এলাকা। ফলে কারখানা কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে রান্নাঘর বানানো সম্ভব নয়। অনুমতি চাওয়া হয়েছিল কি না জানতে চাওয়া হলে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ কৈলাশপতি মণ্ডল বলেন, “কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছি। তবে ওরা আমাদের অনুমতি দেননি। তাই রান্নাঘর বানানো যায়নি।” এ বিষয়ে ব্লক প্রশাসনের তরফে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে সালানপুরের বিডিও প্রশান্ত মাইতি বলেন, “রেল কর্তৃপক্ষের কাছে নো অবজেকশন চেয়ে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু ওরা রাজি হননি।”
কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষই বা রান্নাঘর তৈরির অনুমতি দিচ্ছেন না কেন? চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানার জনসংযোগ আধিকারিক মন্তার সিংহের দাবি, “আমরা অনুমতি দিইনি একথা ঠিক নয়। এই শহরটি সংরক্ষিত এলাকা। শহরের নিজস্ব কিছু নিয়ম ও আইন আছে। আমরা সে সব মেনে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা তা করেননি।” কী নিয়ম মানার পরামর্শ দিয়েছিলেন রেল কর্তৃপক্ষ? মন্তার সিংহ জানান, যে স্কুলে রান্নাঘর হবে সেই স্কুলের তরফে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হবে। সঙ্গে দিতে হবে যেখানে রান্নাঘর হবে সেখানকার মানচিত্র। মানচিত্র-সহ আবেদন পত্রটি এরপরে রেলের বাস্তুকার দফতরে পাঠানো হবে। বাস্তুকাররা ঘটনাস্থলে গিয়ে সব মিলিয়ে দেখার পরে যদি মনে করেন সেখানে রান্নাঘর বানানো সম্ভব তা হলে তাঁরা ‘নো অবজেকশন’ দেবেন। এরপরেই সংশ্লিষ্ট স্কুল রান্নাঘর তৈরি করতে পারবে। পাশাপাশি স্কুলের তরফে নিশ্চিত করতে হবে যে কয়লার উনুন ব্যবহার করে রান্না করা হবে না। জনসংযোগ আধিকারিক আরও জানান, রেল শহর দূষণমুক্ত রাখার জন্য ও এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য এসব নিয়ম মানা জরুরি। কিন্তু সালানপুর ব্লক প্রশাসন এর কোনটাই করেন নি বলে তাঁর অভিযোগ।
এই পরামর্শ কেন মানা হয়নি তার কোনও উত্তর দিতে চাননি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ কৈলাশপতি মণ্ডল। তিনি শুধু বলেন, “প্রকল্পটি না হওয়ায় বরাদ্দ টাকা পড়ে আছে। আর কোনও কাজে না লাগলে ফেরত চলে যাবে।” তবে প্রকল্প সফল না হওয়ায় পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগের অভাবকেই দায়ী করেছেন এবিপিটি-এর জোনাল সম্পাদক দিলীপ মাজি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.