আমিই সেরা
গোলটা বাঁধল বাড়িতে নতুন বৌ আসার পর। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে বছর দু’য়েক দিব্যি মানিয়ে নিয়েছিলেন তমালিকা। কিন্তু দেওরের বিয়ের মাস দু’য়েকের মধ্যেই সব কেমন গোলমাল হয়ে গেল। কারণে-অকারণে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া। শাশুড়ির সঙ্গেও যখন-তখন লেগে যায় খিটিমিটি। বাধ্য হয়ে তমালিকার স্বামী এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হন।
জানা গেল, জা-কে নিয়ে তমালিকা হীনমন্যতায় ভুগছেন! নতুন বৌটি সচ্ছল পরিবারের মেয়ে। তমালিকা মধ্যবিত্ত পরিবারের। এ নিয়ে শ্বশুরবাড়ির তরফে কোনও গঞ্জনাও দেওয়া হয়নি। আগে থেকেই নাকি হীনমন্যতা বোধ মনে বাসা বেঁধে ছিল। প্রথম প্রথম শ্বশুরবাড়িতে কাজেকর্মে ও সুন্দর ব্যবহারে সকলের মন জয় করে নিয়েছিলেন। বাড়িতে নতুন অতিথি আসার পর সকলের নজর স্বভাবতই তাঁর দিকে ঝুঁকেছিল। ব্যস, শুরু হয় তুলনা। নিজের মনেই।
‘কারণে-অকারণে অন্যকে মাপকাঠি ঠাউরে নিজের সঙ্গে তুলনা। তার থেকেই হীনমন্যতা বোধ, নিজের প্রতি নেতিবাচক ভাবনা। বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সব মিলিয়ে নিজের মধ্যেই গুটিয়ে যাওয়া। ‘‘কমপ্লেক্স-এর কবলে পড়ে অনেকেই দিশেহারা। খামতি যতটুকুই হোক না কেন, নেতিবাচক ভাবনা আরও বেশি টেনে নামায়। সহজে কারও সঙ্গে এঁরা মিশতে পারেন না। ঢুকে যান হতাশায়। কেউ বা আশ্রয় নেন নেশার,’’ জানাচ্ছেন মনোচিকিৎসক ডা. রিমা মুখোপাধ্যায়।
অনেক ক্ষেত্রেই এর বীজ পোতা হয়ে যায় খুব ছোট বয়সেই। মনোবিদ ডা. নীলাঞ্জনা স্যানাল বলছিলেন, ‘‘ক্লাস এইটের একটি ছেলের অভিযোগ ছিল, মা খালি বলে, অন্যরা কম পড়েও ভাল রেজাল্ট করে, আমি বেশি পড়েও পারি না। শুনতে শুনতে ছেলেটা ক্লান্ত,’’ নীলাঞ্জনা জানাচ্ছেন, “ক্রমাগত এ রকম তুলনা মনের স্বাভাবিক সুরটাই কেটে দেয়। নেতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে হীনমন্যতার জুড়ি নেই। কখনও কখনও বাবা-মায়েরা নিজেরাও এতে ভোগেন। সেটাই চাপিয়ে দেন সন্তানের ওপর। সবাই যে সব কিছু পারবে না, সেই বোধটাই তাঁরা হারিয়ে ফেলেন। অথচ ছেলেটি ভাল খেলে, তার মিষ্টি ব্যবহার, সে সব তাঁদের নজরে পড়ে না। বড়দের প্রত্যাশার চাপে অজান্তেই ছোটদের ভিতরে গড়ে ওঠে নিজেদের প্রতি নিচু ধারণা। ।’’
ঠিক যেমনটা ঘটেছিল শহরের এক নামকরা চিকিৎসক দম্পতির মেয়ে শ্রীপর্ণার জীবনে। ‘‘সকলেই জানত, আমি ডাক্তার হবই। আমার তো পড়তেই ইচ্ছে করত না। রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় সবাই হেয় করত। ক্লাস টিচার এগিয়ে না এলে আমি হয়তো হারিয়ে যেতাম,’’ বলছেন শ্রীপর্ণা।
ডা. রিমা মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ‘‘এ রকম কাউকে মেন্টর হিসেবে পেলে অনেকেই হীনমন্যতা কাটিয়ে বেরিয়ে আসতে পারেন। খুব লড়াই করে দাঁড়িয়েছেন, এ রকম মানুষের উদাহরণও হীনমন্যতা কাটাতে খুব কার্যকর। তবে ঘুরে দাঁড়ানোর ইচ্ছেটা থাকতে হবে।’’

বেরিয়ে আসতে হবে নিজেকেই
“নিজেকেই প্রশ্ন করুন, সমস্যাটা ঠিক কী। যা কিনা অন্য পাঁচ জনের কাছে আপনাকে সহজ হতে দেয় না। ঘাটতি থাকলে সেটা মেরামত করার চেষ্টা করতে হবে,’’ বলছেন নীলাঞ্জনা। তাঁর কথায়, হতে পারে কাজের জায়গায় ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছেন বা কোনও ব্যাপারে যতটা এগোতে পারবেন ভেবেছিলেন, তা পারলেন না। সে ক্ষেত্রে সমস্যাটা খুঁজে বার করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন। তবে এটাও মাথায় রাখুন সব জিনিস যে সবার দ্বারা হবে তা নয়। ক্ষমতার বাইরের কিছু হলে, সে দিকে সময় নষ্ট না করে অন্য পথ দেখা দরকার।

কমজোরি মেনে নিন
মেধাবী ছেলেটি মুখ তুলে তাকাতে পারত না ক্লাসের মেয়েদের দিকে। সমস্যা একটাই। উচ্চতা কম। ল্যাবরেটরিতে টুলের ওপর দাঁড়িয়ে কাজ করতে হত তাকে। লম্বা হওয়ার আশায় বিজ্ঞাপন দেখে ওষুধ খাওয়া থেকে শুরু করে চেষ্টার কোনও খামতি রাখেনি। যথারীতি কিছুই হয়নি। শুধু আত্মবিশ্বাস কমেছে। ছেলেটিকে কাউন্সেলিং-এর সময় পরিষ্কার জানানো হয় লম্বা সে হবে না। তাই বলে জীবন থমকে থাকবে না। যেমন যায়নি নেপোলিয়ন থেকে শুরু করে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের জীবন। এই ঘটনা শুনিয়ে নীলাঞ্জনা বললেন, ‘‘অনেক কিছুই নিজেদের হাতে থাকে না। সেটাকে বরং নিজের কমজোর বলে মেনে নিন। তা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে খুঁজে বের করুন নিজের ইতিবাচক দিক। সে দিকেই সময় আর সামর্থ্য দিন।’’

প্রতিযোগিতা হোক নিজের সঙ্গে
‘তুলনা’ শব্দটা মন থেকে মুছে ফেলুন। সহকর্মী, বন্ধু, কারও সঙ্গে তুলনা করার অভ্যেসটা ঝেড়ে ফেলুন। বাড়িতে কেউ এ ধরনের তুলনা টানলে, সে কথায় গুরুত্ব দেবেন না। তুলনার মাপকাঠি করুন নিজেকেই। পরামর্শ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অমিতাভ মুখোপাধ্যায়ের।

এড়িয়ে চলুন নেতি-কথা
‘ওরে তুই তোর মায়ের রূপ কিছুই তো পেলি না, গায়ের রংটাও যদি পেতিস...’ রূপের দিক থেকে খামতি আছে, এমন অনেকেরই এই ধরনের কথা শোনার অভিজ্ঞতা আছে। সহজ ভাবে নিতে না পারলে এই অপ্রয়োজনীয় কথাটিই মারাত্মক পরিণতি তৈরি করতে পারে। শিরায় শিরায় ঢুকিয়ে দেয় ‘পাপ বোধ’। যার থেকেই ভাবনার গরু চলে যায় বহু দূর। আত্মবিশ্বাসের ঝুলি হয়ে পড়ে শূন্য। এ রকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেলে এড়িয়ে চলুন সে সব মানুষকে, যাঁরা এ ধরনের কথায় অভ্যস্ত। নিজেকে বলুন, ‘আমি আমার মতো’।

নজর নিজের দিকে
• মনে মনে না গুমরে কাছের কাউকে মনের কথা খুলে বলুন।

• প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।

• পড়তে পারেন এমন মানুষদের জীবনী, যাঁরা কঠিন লড়াইয়ের পর প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন।

• কেউই নিঁখুত নন। প্রত্যেকেই দোষেগুণে ভরা। তাঁরা নিজেদের ওপর থেকে হাল ছেড়ে দেননি। সুতরাং আপনিও পারবেন।

• নিজেকে ভালবাসুন। নিজের কোনও গুণকে প্রশংসা করতে শিখুন। হীনমন্যতা দূর হয়ে যাবে। আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.