গাড়ির নম্বর প্লেট বদলে দিয়ে এবং ভুয়ো কাগজপত্র দেখিয়ে ট্রান্সপোর্টের লক্ষ লক্ষ টাকার মালপত্র চুরির এক চক্রের তিনজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। সোমবার দুপুরে বসিরহাটের বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার মালপত্র উদ্ধার করে। যার মধ্যে রয়েছে, কাগজের রিম, প্লাস্টিকের চেয়ার-টেবিল, ইলেকট্রনিক্সের জিনিসপত্র। চুরি চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে বসিরহাটের ওলাইচণ্ডী গ্রাম থেকে প্রবীর ওরফে লাল্টু ঘোষ এবং ইছামতী নদী লাগোয়া চৌরচর এলাকা থেকে আমিরুল ইসলাম ও রউফ আলিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “গাড়িতে ভুয়ো নম্বর প্লেট লাগিয়ে লাখ লাখ টাকার জিনিসপত্র চুরির অভিযোগে ওই তিনজনকে ধরা হয়েছে। চক্রে যুক্ত বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” |
পুলিশ সূত্রের খবর, গত কয়েক মাস ধরে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রান্সপোর্টের মালপত্র ভুয়ো নম্বরের গাড়িতে তুলে পাচার করার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল। শুধু তাই নয়, ওই সব মালপত্র বাংলাদেশে পাচার করা হচ্ছিল বলেও খবর আসে। পুলিশ সুপারের নির্দেশে ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। বসিরহাট থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন থানার আইসি এবং হাসনাবাদ থানার ওসি যৌথ ভাবে তল্লাশি চালানোর সময় বসিরহাটের স্মরনিয়া গ্রামের এক বিধবার বাড়ির ঠিকানা পায়। ওই মহিলা পুলিশকে জানান, কিছু দিন আগে লাল্টু মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি ছশো টাকা ভাড়ায় তাঁর বাড়িতে একটি ঘর নেয়। বিস্কুটের প্যাকেট বলে ওই ঘরে সে বেশ কয়েকটি বড় বড় পিচবোর্ডের বাক্স রাখে। এ দিন ওই ঘর থেকে প্রায় এক লরির মতো সাউন্ড সিস্টেম, কম্পিউটার, মাইক-সেট-সহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্সের জিনিসপত্র উদ্ধার হয়।
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে একই ব্যক্তি কখনও লাল্টু, কখনও লতিব, কখনও জাহাঙ্গির নাম নিয়ে সোলাদানা ও হিঙ্গলগঞ্জ এলাকায় বড় বড় কাগজের রিম, প্লাস্টিকের চেয়ার-টেবিল, ইলেকট্রনিক্সের জিনিসপত্র লুকিয়ে রাখত। এর পরেই ওই সব জায়গায় হানা দিয়ে প্রায় তিন লরি মালপত্র আটক করে পুলিশ। ওলাইচণ্ডী গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় প্রবীর ঘোষকে। তাকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, নিজের লরিতে করে আনা মালপত্র বিভিন্ন সময় নাম ভাঁড়িয়ে সে বাড়ি ভাড়া করে লুকিয়ে রাখত। পরে সুযোগ বুঝে বাংলাদেশে পাচার করত। প্রবীরের কাছ থেকে খবর নিয়ে তার দুই সঙ্গী আমিরুল ইসলাম ও রউফ আলিকে গ্রেফতার করা হয়। |
|
|
উদ্ধার হওয়া কাগজের রিম এবং ইলেকট্রনিক্সের সরঞ্জাম (ডানদিকে)।
|
|
পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, গত দু’বছর ধরেই তারা এ কাজ করছে। প্রবীর ও আমিরুল দু’জনেই শিক্ষত। প্রবীর বিএ পাশ এবং আমিরুল বিএ প্রথম বর্ষ পর্যন্ত পড়েছে। চাকরি বাকরির চেষ্টা করেও না পেয়ে তারা এই কাজে নামে বলে পুলিশকে জানায় প্রবীর।
প্রবীরের বাবার পোলট্রির ব্যবসা রয়েছে। দাদা বিএসএফ কর্মী। কাজের সুবিধার জন্য প্রবীর দাদার নাম, পরিচয় ব্যবহার করত কিনা তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
কী ভাবে কাজ করত তারা?
পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জানিয়েছে, তারা বসিরহাট থেকে লরিতে ইট ও অন্যান্য জিনসপত্র নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় যেত। সেখানে মাল খালাস করে ফেরার সময় গাড়ির নম্বর প্লেট বদলে দিত। এর পরে ভুয়ো কাগজপত্র দেখিয়ে ট্রান্সপোর্টের মালপত্র গাড়িতে তুলে তা অন্যত্র বিক্রি করত। বাংলাদেশেও পাচার করত। ট্রান্সপোর্টের মালিক মালপত্র না পেয়ে পুলিশকে জানালে ভুয়ো নম্বর ও কাগপত্রের কারণে লরির খোঁজ পাওয়া যেত না।
পুরো ঘটনার পরিকল্পনা করত প্রবীর। গাড়ির নম্বর প্লেট বদল ও ভুয়ো কাগজ তৈরির কাজ করত আমিরুল। কিছুদিন আগে প্রবীরের লরির চালক আতিয়ার মণ্ডল নম্বর প্লেট বদলে আসানসোল থেকে এক গাড়ি কাগজের রিম, পানাগড় থেকে প্লাস্টিকের চেয়ার-টেবিল ও ব্যারাকপুর থেকে ইলেকট্রনিক্সের সরঞ্জাম নিয়ে আসে। আতিয়ার ও লরির খালাসির খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
|