এ বার আরপিএফের জুলুম।
ঘটনাস্থল অবশ্য সেই বহরমপুর কোর্ট স্টেশন। তবে এ বার মারধর নয়, রীতিমতো ছিনতাইবাজের ভূমিকায় রেলপুলিশ!
রবিবার গভীর রাতে যাত্রীকে মারধর করে টাকা কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আরপিএফের জওয়ানদের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ওই যাত্রী বহরমপুর স্টেশনে যে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তা-ও প্রায় জোর করেই প্রত্যাহার করিয়ে নেওয়া হয় তাঁকে দিয়ে।
রাতের ট্রেনে পুলিশকর্মীদের ওই আচরণে ‘অস্বস্তি’তে রেল দফতরও। রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেন, “অনভিপ্রেত ঘটনা। এমন ঘটনা কোনও ভাবে বরদাস্ত করা হবে না।” আর ডিআইজি (রেল) স্বপনকুমার মাইতি বলেন, “এমন ঘটনা বাঞ্ছনীয় নয়। আরপিএফ কর্মীরা যাত্রীদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য রয়েছেন। সে বিষয়ে কর্মীদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। যাত্রীদের সঙ্গে এমন কোনও আচরণ করা উচিত নয়, যাতে রেল দফতরেরই সম্মানহানি হয়।”
দিন সাতেক আগে, গত ১১ মার্চ বহরমপুর রেল পুলিশের কনস্টেবল পরিতোষ বিশ্বাস কোর্ট স্টেশন প্ল্যাটফর্ম থেকে এক যাত্রীকে মারধর করে ঠেলে ফেলে দিয়েছিলেন। লাইনে পড়েই মারা গিয়েছিলেন বনগাঁর বাসিন্দা দিলীপ ঘোষ। সাময়িক বরখাস্ত করা হয় ওই কনস্টেবলকে। আদালতের নির্দেশে আপাতত তিনি জেল হেফাজতে। ঘটনার তদন্ত করছে সিআইডি।
রবিবার গভীর রাতের লালগোলা প্যাসেঞ্জারের ‘ভেন্ডার’ কামরায় ঘটনাটি সেই জুলুমেরই চেনা ছবি। পরের দিন সকালে বহরমপুর জিআরপিতে রঞ্জিত দাস নামে ওই যাত্রী অভিযোগ দায়ের করেন। তবে এ ক্ষেত্রে অন্তত দায় এড়ায়নি বহরমপুর জিআরপি থানা।
রঞ্জিতবাবুকে নিয়েই লালগোলায় গিয়ে আরপিএফ ব্যারাক থেকে ছিনতাইবাজ আরপিএফ জওয়ানকে শনাক্ত করানো হয়। ‘ভুল’ স্বীকার করে রঞ্জিতবাবুর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন ‘অভিযুক্ত’ ওই আরপিএফ কর্মী। চাপের মুখে টাকাও ফেরত দেন তিনি।
তবে এরপরেই রেলপুলিশের চাপে পড়ে অভিযোগও তুলিয়ে নেওয়া হয় ওই যাত্রীর কাছ থেকে। রেলপুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, রঞ্জিতবাবুর কাছে আরপিএপের ‘আব্দার’ ছিল, টাকা পেরত পেয়ে গেছেন, আর কেন ভুল বোঝাবুঝি। অভিযোগ তুলে নিন। প্রথমে রাজি না হলেও রেলরক্ষীদের সমবেত চাপেই বহরমপুরের সেই যাত্রী শেষ পর্যন্ত তা করতে বাধ্য হন। বহরমপুর আরপিএফ ইন্সপেক্টর মানবেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এ ব্যাপারে কোনও কথা কথা বলতে চাননি।
কী হয়েছিল ওই রাতে?
রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতের লালগোলা প্যাসেঞ্জারের যাত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে শিয়ালদহ আরপিএফ। রবিবার গভীর রাতে পলাশি স্টেশন থেকে লালগোলা প্যাসেঞ্জারে বহরমপুরে ফিরছিলেন কাশিমবাজার কাটিগঙ্গা লেনের বাসিন্দা রঞ্জিত দাস। সঙ্গে ছিলেন তাঁর আত্মীয় রতন দাস। ভিড়ের জন্য সাধারণ কামরায় না উঠে রঞ্জিতবাবুরা ‘ভেন্ডার’-এ উঠেছিলেন। ভাবতা স্টেশনে ওই কামরায় ওঠেন আরপিএফের দু’জন কর্মী। তাঁদের মধ্যে এক জন রঞ্জিতবাবুদের টিকিট পরীক্ষা করতে চান। তাঁর দাবি, বৈধ টিকিট দেখানো সত্ত্বেও তাঁদের কাছ থেকে টাকা দাবি করেন সেই রেল পুলিশ। তিনি বলেন, “ভেন্ডার কামরায় ওঠার জন্য আমাদের দু’জনের কাছ থেকে সাড়ে চারশো টাকা করে মোট ন’শো টাকা জরিমানা করেন ওই আরপিএফকর্মী। কিন্তু অত টাকা জরিমানা দিতে পারব না বলে জানাই। তখন আরপিএফের এক কর্মী কলার ধরে আমায় চড়-থাপ্পড় মারতে শুরু করেন। এমনকী ট্রেনের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে লালগোলা জিআরপিতে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখারও হুমকি দেন তাঁরা।”
তিনি জানান, সেই সময় ওই কামরায় থাকা অন্য হকাররা তাঁকে পুলিশের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেয় এবং চা-বিস্কুট খাওয়ার জন্য কিছু টাকা দিতে বলে। রঞ্জিতবাবুর কথায়, “হকারদের কথা মত পকেট থেকে টাকা বের করতেই ওই আরপিএফ কর্মী আমার হাত থেকে টাকা কেড়ে নিয়ে আমাকে বহরমপুর কোর্ট স্টেশনে ঠেলে নামিয়ে দেয়। বহরমপুরের স্টেশন মাস্টারকে পুরো ঘটনাটি জানাই। তিনিই বহরমপুর রেল পুলিশে অভিযোগ জানাতে বলেন। সেই মত গোটা বিষয়টি জানিয়ে রেল পুলিশে লিখিত অভিযোগ জমা দিই।” অভিযোগ পেয়ে বহরমপুরের রেল পুলিশ এবং আরপিএফ তদন্ত শুরু করে। সোমবার তাঁরা রঞ্জিতবাবুকে লালগোলার কৃষ্ণপুর হল্ট স্টেশনে নিয়ে যান। সেখানে ওই দু’জন আরপিএফ কর্মী তখন ‘বিশ্রাম’ করছিলেন। তাঁদের এক জনকে দেখেই চিনতে পারেন রঞ্জিতবাবু।
কিন্তু জোর করে অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য হন তিনি।
পুলিশকে কী অত সহজে ভাঙে? |