শিশুকন্যাকে কেড়েও ফিরিয়ে দিল হস্তিনী
হু পুরনো একটি হিন্দি ছবির দৃশ্য। উন্মত্ত হাতির সামনে এসে ছেলের প্রাণ ভিক্ষে করছেন বৃদ্ধা। তাঁর ছেলেকে মারতে উদ্যত হয়েছে বেপরোয়া হাতি। শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধার কান্নায় ভুলে ছেলেকে ছেড়ে দেয় হাতিটি। হিন্দি ছবি ‘মা’-র সেই দৃশ্যই যেন ফের দেখলেন ধানবাদ জেলার টুন্ডি ব্লকের মনিয়াডিহি গ্রামের বাসিন্দারা। সেখানে ন’মাসের এক শিশুকন্যাকে শুঁড়ে করে উঠিয়ে নিয়েও শেষ পর্যন্ত মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিল একটি হাতি।
দুমকার জঙ্গল থেকে গত বৃহস্পতিবার ধানবাদের গোবিন্দপুর ব্লকে ঢুকে পড়ে ১৮টি হাতির একটি দল। গ্রামবাসীরা হাতিদের তাড়া করেন। তাড়া খেয়ে তারা গোবিন্দপুরের পাশের ব্লক টুন্ডিতে ঢুকে পড়ে সেখানকার কয়েকটি গ্রামে তাণ্ডব চালায়। শনিবার বিকেলে হাতির দল মনিয়াডিহিতে হানা দেয়। হাতি দেখতে গ্রামের মানুষ রাস্তায় জড়ো হন। ন’মাসের শিশুকন্যা চাঁদনিকে কোলে নিয়ে হাতি দেখতে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন পার্বতী দেবী নামে এক গৃহবধূও।
মেয়ে চাঁদনিকে কোলে নিয়ে পার্বতী। মনিয়াডিহিতে।—নিজস্ব চিত্র
টুন্ডির জঙ্গলের রেঞ্জার রাজেন্দ্র রাম জানাচ্ছেন, ভিড় দেখে গ্রামবাসীদের দিকে কয়েকটি হাতি তেড়ে আসে। একটি স্ত্রী-হাতি পাবর্তীর কোল থেকে বাচ্চাটিকে কেড়ে নিয়ে শুঁড়ে করে তাকে উপরে উঠিয়ে নেয়। তার পরে উল্টো দিকে দৌড়তে থাকে। হাতির তাড়া খেয়ে প্রথমে পার্বতীও পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পরমুহূর্তেই বুঝতে পারেন, তাঁর বাচ্চা হাতির জিম্মায় চলে গিয়েছে। কী করবেন বুঝতে না পেরে দিশেহারা মা কাঁদতে কাঁদতে হাতির পিছনে ছুটতে থাকেন। শিশুটিও তখন মায়ের কোল-ছাড়া হয়ে কান্না জুড়ে দিয়েছে।
কিছুটা গিয়ে হাতিটি দাঁড়িয়ে যায়। তার পরে পিছু ঘুরে ফের পার্বতীর দিকে এগিয়ে আসে। একটি বালির ঢিবির উপরে বাচ্চাটিকে ধীরে ধীরে নামিয়ে দিয়ে হাতিটি তার পর দলে ফিরে যায়।
পার্বতীর কথায়, “তখন কাঁদছি আর ভগবানকে ডাকছি। বাচ্চাকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি, হাতিটা ফিরে এসে বালির উপরে বাচ্চাটিকে নামিয়ে দিল।” ঘটনায় স্তম্ভিত টুন্ডির রেঞ্জার রাজেন্দ্র নিজেও। তাঁর কথায়, “শুনেছিলাম হাতি মানুষের অনুভূতি বুঝতে পারে। কখনও চোখে দেখিনি। বরং গত বছর এমনই একটি ঘটনায় একটি হাতি একটি দশ-বারো বছরের ছেলেকে পিষে মেরে দিয়েছিল। টুন্ডির ঘটনাটি সত্যিই খুব আশ্চর্যজনক।”
দরদি-দল
এই হাতির পালই মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিল শিশুকন্যাকে।
ধানবাদের মনিয়াডিহিতে। ছবি: চন্দন পাল
এমন ঘটনার কথা তাঁর হস্তি-অভিজ্ঞতাতে নেই বলেই জানিয়েছেন হস্তি-বিশারদ ধৃতিকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী। বললেন, “ঘটনাটি ঘটে থাকলে তা খুবই বিস্ময়কর। উত্তর, দক্ষিণ কিংবা উত্তর-পূর্ব ভারতের আনাচে-কানাচে হাতি নিয়ে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা থাকলেও এমন ঘটনার কথা শুনিনি।” কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের ‘প্রোজেক্ট এলিফ্যান্ট’-এর ডিরেক্টর এ এন প্রসাদও বলেন, “ঝাড়খণ্ডের ওই ঘটনার মতো ‘দয়ালু’ হাতির কথা আমার জানা নেই ঠিকই, তবে হাতিদের মতিগতি বোঝা দায়।
অনেক সময়ে ‘লোনার’ বা দল থেকে বহিষ্কৃত বদরাগী হাতিও এমন ব্যবহার করে, যার কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।”
বছর কয়েক আগে বাঁকুড়ার সোনামুখীর জঙ্গল-ঘেঁষা গ্রামে এমনই এক কাণ্ড ঘটিয়েছিল দলছুট এক হাতি। বছর আড়াইয়ের একটি শিশুকে নিয়ে জঙ্গলে পাড়ি দিয়েছিল সে। গ্রামবাসীদের চিৎকারে শেষ পর্যন্ত বাচ্চাটাকে নামিয়ে রেখে ধীরে সুস্থে ফিরে গিয়েছিল সে। যদিও শিশুটি বাঁচেনি, সম্ভবত ভয়েই মারা গিয়েছিল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.