পশ্চিমবঙ্গে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা কী হওয়া উচিত সেই বিষয়ে মৈত্রীশ ঘটকের সাক্ষাৎকারভিত্তিক (২৭ ও ২৮-২) নিবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্র।
কৃষিজমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনও মডেলকে আদর্শ হতে হলে প্রথমেই তাকে অধিকাংশ চাষির বিশেষত মাঝারি ও ছোট চাষির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে গেলে দীর্ঘমেয়াদে চাষির নিত্যকার ও আপৎকালীন আর্থিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা চাই। সে জন্য জমির বিনিময়ে এককালীন টাকা দেওয়ার পরিবর্তে নিয়মিত পেনশন দেওয়া ভাল। এই পেনশনের ভিত্তি হবে জমির পরিমাণ, উৎপাদনশীলতা ও তার দাম। ভবিষ্যতে ওই পেনশন বাড়া উচিত মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। ছোট চাষির কাছে এই ব্যবস্থা লাভজনক কারণ, মাঝেমধ্যেই চাষি ফসল বেচে চাষের খরচ তুলতে পারে না। সরকার যদি জমির বাজারচলতি দামের উপরে সরকারি ব্যাঙ্ক প্রদত্ত সুদের সমাহারে নিয়মিত পেনশন দেয়, তবে চাষি সরকারের প্রস্তাব বাতিল করার আগে দু’বার ভাববে। উদাহরণ দেওয়া যাক। মুণ্ডেশ্বরী অববাহিকার অধিকাংশ জমিই তিন ফসলি। পর্যায়ক্রমে চাষ হয় ধান, আলু ও তিল। একর পিছু জমির গড় দাম নয় লাখ টাকার কাছাকাছি। সুতরাং প্রস্তাবিত পেনশন প্রকল্পে এক একর জমির বিনিময়ে চাষি পেতে পারে প্রায় পঁচাত্তর হাজার টাকা। অথচ ওই একই জমিতে তিনটে ফসল ফলিয়ে বছরে পঁচিশ হাজার টাকা আয় করতে চাষির কালঘাম ছুটে যায়। অনেক চাষি অবশ্য তবুও সরকারকে ফিরিয়ে দেবে, যতক্ষণ না প্রস্তাবিত প্রকল্প বিপদে-আপদে জমি বিক্রি করার মতো রক্ষাকবচযুক্ত হয়।
জমি অধিগ্রহণের এই কৃষককেন্দ্রিক মডেল শুধু কৃষককেই সুবিধা দেয় না, সরকারকেও দেয়।
প্রথমত, অধিগৃহীত জমির জন্য সরকারকে এককালীন অর্থ ব্যয় করতে হয় না। জমির দামের ভগ্নাংশ হাতে থাকলেই চলে। ভবিষ্যতে শিল্পায়ন সফল হলে সরকারের হাতে বাড়তি রাজস্ব আসবে এবং তা দিয়ে ওই অধিগৃহীত জমির জন্য দীঘর্র্মেয়াদে আর্থিক দায় মেটানো সহজ হবে। দ্বিতীয়ত, এই পেনশন প্রকল্প মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে রক্ষাকবচযুক্ত হওয়ায় এবং চাষিকে আপৎকালীন বড় খরচের সুযোগ দেওয়ায়, সরকার হয়তো বাজারদরের চেয়ে খানিকটা কম দামেই চাষির কাছ থেকে জমি পেতে পারে। তৃতীয়ত, সরকারের প্রাথমিক আর্থিক দায় যেহেতু সামান্যই, সরকার বাজারমূল্যের চেয়ে কিছুটা কম দামে জমি দিয়ে খ্যাতনামা শিল্পগোষ্ঠীকে নিয়ে আসতে পারে। চতুর্থত, এর মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ পরোক্ষে শিল্পগোষ্ঠী সমূহের কাছে বার্তা পাঠায় যে, শিল্প গড়তে গিয়ে শিল্পসংস্থাকে স্থানীয় মানুষের অসহযোগিতার মুখে পড়তে হবে না। পঞ্চমত, কৃষককেন্দ্রিক এই মডেলের মাধ্যমে জমি নিলে শহুরে মানুষ সঙ্গত কারণেই তার বিরোধিতা করবে না। সুতরাং এই মডেল কৃষকের স্বার্থরক্ষাকারী হয়েও শিল্পের সহায়ক।
মানসেন্দু কুণ্ডু। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, সান্টা বারবারা।
|
পশ্চিমবঙ্গে রাস্তাঘাটের বর্তমান অবস্থা সম্বন্ধে বিভাগীয় প্রধানদের অবগতি কত দূর জানি না। তবে মন্ত্রীরা কোনও এলাকা পরিদর্শনে গেলে রাতারাতি সেই এলাকার রাস্তাটির ভোল পাল্টে যায়। এতে মন্ত্রী-মশাই মনে করেন, আহা! রাস্তার অবস্থা কত সুন্দর! কিন্তু বাস্তব অবস্থা কি তাই? পাড়ার রাস্তার কথা বাদ দিলাম। যাকে আমরা রাজপথ বলি, অর্থাৎ পথের রাজা সেগুলোর হাল কী? মনে হয়, দাঁত খিঁচিয়ে পথচারীকে বিদ্রুপ করছে। এই বিদ্রুপ হজম করে এক ঘণ্টার রাস্তা পার হতে ৩-৪ ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। বহু রাস্তা দেখেছি। যশোর রোড, বম্বে রোড, দিল্লি রোড, চৌত্রিশ নম্বর জাতীয় সড়ক একই হাল। |
রাস্তা পি ডব্লিউ ডি এবং সি পি ডব্লিউ ডি দুইয়েরই অধীনে রয়েছে। সব দফতরের রাস্তাই করে ঠিকাদার। টেন্ডার ডেকে বরাত দেওয়া হয়। মূল ঠিকাদারের অধীনে রয়েছে সাব-ঠিকাদার। বিভিন্ন ভাবে এবং ভাগে এই সব সাব-ঠিকাদার কাজ করে। পরিচালনা করে মূল ঠিকাদার। কাজ ঠিক ভাবে হচ্ছে কি না, তা দেখভাল করার জন্য রয়েছে সরকারি পরিদর্শক। গণ্ডগোলটা এখানেই। একটি রাস্তা সম্পূর্ণ হওয়ার পর পরিদর্শক সেই রাস্তার কাজ নিয়ম মেনে হয়েছে কি না, তার ছাড়পত্র দেন। তার উপর বিল পেমেন্ট হয়। সব কিছু ঠিক ভাবে হলে একটি রাস্তার যা আয়ুষ্কাল হওয়া উচিত, তার অনেক আগেই দাঁত খিঁচোতে শুরু করে। তার পর চলে তাপ্পি দেওয়ার জন্য টেন্ডার।
এতে কি রাস্তার হাল ভাল হতে পারে? ভোগান্তি হয় জনগণের। তাদের পয়সা এ ভাবেই নয়ছয় হয়।
অমরনাথ মুস্তাফী। শ্যামনগর |