ব্যাঙ্কঋণ বকেয়া রাখা নিয়ে এ বার কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন অর্থমন্ত্রী পালনিয়প্পন চিদম্বরম। তিনি বলেছেন, কোনও সংস্থা রুগণ হয়ে পড়লেও তার ধনী প্রোমোটারের কাছ থেকে বাকি পড়া ঋণ আদায় করতে হবে। এর জন্য ব্যাঙ্কগুলিকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও আর্থিক সংস্থার কর্ণধারদের সঙ্গে বৈঠকে তাঁদের বকেয়া ঋণের বিপুল বোঝা কমাতে সোমবার এই প্রস্তাব দেন চিদম্বরম। তাঁর কথায়, “সচ্ছল প্রোমোটার আর রুগণ সংস্থা, দু’টি একসঙ্গে চলতে পারে না। প্রোমোটারকে ঋণের দায় নিতেই হবে। কারণ ঋণ শোধ করা প্রতিটি সংস্থার কর্তব্য।” সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, বেশ কিছু এ ধরনের সংস্থার কর্ণধাররা ব্যাঙ্কঋণ মেটাচ্ছেন না বলেই এ প্রসঙ্গ তুলেছেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে রয়েছে বিজয় মাল্যের কিংফিশারের মতো সংস্থা, যার কাছ থেকে ঋণ আদায়ে নাজেহাল হচ্ছে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক। |
বৈঠকের পরে অর্থমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই |
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির অনাদায়ী ঋণের পাহাড়প্রমাণ বোঝা ক্রমেই আরও বাড়তে থাকার কারণেই এই কড়া মনোভাব নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ২০১১-র মার্চের ৭১,০৮০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে তা ২০১২-র ডিসেম্বরে ছুঁয়েছে ১.৫৫ লক্ষ কোটি টাকা। যার মধ্যে আবার বিভিন্ন শিল্প সংস্থার বাকি রাখা ঋণের অঙ্কই প্রায় ৫৪ শতাংশ। ১৭২টি এ ধরনের কর্পোরেট সংস্থার ফেলে রাখা ঋণের প্রতিটিই ডিসেম্বর শেষের হিসেবে ১০০ কোটি টাকার বেশি। মোট বকেয়া ৩৭,১৯৪ কোটি টাকা।
আর্থিক পরিষেবা সংক্রান্ত সচিব রাজীব টাকরু বলেন, “যাঁরা ইচ্ছা করে ঋণের টাকা ফেরত দিচ্ছেন না, এবং যাঁরা সত্যিই আর্থিক অনটনে পড়ে তা মেটাতে পারছেন না, এই দু’ধরনের ঋণগ্রহীতাকে খুঁজে বার করে তাঁদের আলাদা করার চেষ্টা চালাচ্ছি। একই ভাবে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক।” গত দু’এক মাসে ঋণ আদায় কিছুটা ভাল হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিদম্বরমও। তাঁর আশা ব্যাঙ্কগুলি আরও কড়া ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতি বদলাবে।
থমকে থাকা শিল্প প্রকল্প নিয়েও এ দিন উদ্বেগ জানান চিদম্বরম। ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে সেগুলি চালুর চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি। এই মুহূর্তে অসমাপ্ত আছে ২১৫টি প্রকল্প, যেগুলিতে লগ্নির পরিমাণ ৭ লক্ষ কোটি টাকা। এই সব প্রকল্প খাতে ব্যাঙ্কগুলি ইতিমধ্যেই ৫৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে।
রাস্তা তৈরি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো পরিকাঠামো ক্ষেত্রে নতুন প্রকল্প তেমন ভাবে শুরু না-হওয়ার কারণও এ দিন ব্যাখ্যা করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, “এ ধরনের প্রকল্পে দেরির কারণ কয়লার জোগানে ঘাটতি, পরিবেশগত ছাড়পত্র পেতে বাধা ও জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত অসুবিধা।” ১২৬টি এ ধরনের প্রকল্পে লগ্নির অঙ্ক ৩.৫৫ লক্ষ কোটি এবং মঞ্জুর করা ব্যাঙ্কঋণ ৪৩ হাজার কোটি টাকা। |