লোগোর রং বদল ঘিরে শুরু বিতর্ক
নীল-সাদা এ বার প্রেসিডেন্সিতেও!
রাজ্যে সরকার বদলের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছেয় শহরের বিভিন্ন সেতুর রেলিং, আলোকস্তম্ভ, থানা এবং বিভিন্ন সরকারি ভবনের (ঐতিহ্যবাহী বাড়িগুলি ছাড়া) রং হয়েছে নীল-সাদা। এ বার সেই রঙের ছোঁয়া প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোতেও।
রবিবার প্রেসিডেন্সির কাউন্সিলের বৈঠকে কলেজের পুরনো লোগো বদলে গিয়ে আত্মপ্রকাশ করল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন লোগো। প্রেসিডেন্সি কলেজের লোগোটি ছিল সাদা-কালো। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল-সাদা লোগোটি হল লরেল গাছের (যা কিনা চিরসবুজ) পাতায় ঘেরা প্রদীপের শিখা। এ দিন থেকেই এই লোগো কার্যকর হল বলে জানিয়েছেন উপাচার্য মালবিকা সরকার।
মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের রং বলেই প্রেসিডেন্সির লোগোতে নীল-সাদার ছোঁয়া লাগল কি না, সেই প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উঠেছে। যদিও উপাচার্য মালবিকাদেবী এবং মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগত বসু জানান, রং বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দ-অপছন্দকে কোনও ভাবেই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। উপাচার্যের বক্তব্য, “নীল আমার খুবই প্রিয়। তাই লোগো যখন তৈরি হচ্ছিল, তখন আমি নীল রংটি পছন্দ করে দিই। পরে দেখা যায়, লোগোর সঙ্গে এবং প্রেসিডেন্সির ঐতিহ্যের সঙ্গে ‘ওয়েজউড’ নীলটি খাপ খেয়ে গিয়েছে।” উপাচার্যের সংযোজন, “আমার পছন্দের দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় কেমব্রিজ এবং অক্সফোর্ড। তাদেরও লোগো নীল আর সাদার সংমিশ্রণে তৈরি।”
সুগত বসু বলেন, “লোগোর ডিজাইনের সঙ্গে সব রকম রং মিলিয়েই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু দেখা গেল নীলের এই ‘শেড’টিই বেশি ভাল খুলেছে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক কোনও বিষয় জড়িত নয়।” তাঁর মন্তব্য, শুধু রং দেখলেই হবে না। লোগোর নকশাও ভেবেচিন্তে করা হয়েছে। পশ্চিম এবং পূর্বের মেলবন্ধন ঘটাতেই লরেলের ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রাচীন গ্রিসে সাহিত্য-সংস্কৃতি এমনকী ক্রীড়াক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ সম্মানের অভিজ্ঞান হিসেবে দেওয়া হতো লরেল পাতার মুকুট। ইতালি, আমেরিকা বা সুইডেনের মতো কিছু কিছু দেশেও সদ্য স্নাতক, স্নাতকোত্তর বা ডক্টরেটদের সম্মানিত করার সময়ে লরেলের ব্যবহারের নজির পাওয়া যায়। এর ব্যবহার ছিল ভারতের তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়েও।
লোগো নিয়ে সুগতবাবুর ব্যাখ্যা, “প্রদীপের শিখাকে তিনটি খণ্ডে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রেসিডেন্সির অতীতের ঐতিহ্যের পাশাপাশি ভবিষ্যতের উত্তরণের কথা মাথায় রেখে শিখাটিকে খণ্ডে খণ্ডে ব্যবহার করা হয়েছে।” যদিও লোগোর রং নিয়ে তাঁদের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হচ্ছেন না অনেকেই। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্রোক্তি: “অপেক্ষা করছি। ট্র্যাফিক আলোগুলো কবে সাদা-নীল হবে!” প্রাক্তনীদের অনেকেও লোগোর রং নিয়ে ক্ষুব্ধ। তাঁদের অন্যতম, কংগ্রেসের অরুণাভ ঘোষ সূর্যবাবুর ঢঙেই বলেছেন, “অপেক্ষা করছি কবে মেন্টর গ্রপের সদস্যেরা গালে নীল-সাদা রঙ লাগিয়ে আসবেন!” আর এক প্রাক্তনী নকশাল নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “ঐতিহ্য নিয়ে ছেলেখেলা করা যায় না।” শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সংক্ষিপ্ত জবাব, “বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজের ইচ্ছেতেই ওই লোগো হয়েছে। এ নিয়ে আমার কোনও প্রতিক্রিয়া নেই।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সংসদের কর্মসচিব বিভাস চৌধুরী বলেন, “কোনও রাজনৈতিক কারণে লোগোতে এই রঙ ব্যবহার করা হয়েছে বলে আমি মনে করি না। রং নয়, প্রতীকটি কী রয়েছে সেটাই প্রধান বিবেচ্য। রং নিয়ে যদি এমন বিতর্ক হয়, তা হলে তো লরেল পাতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠা উচিত। দেশি না বিদেশি সেই বিতর্কও ওঠা উচিত।”
সূর্যবাবু অবশ্য বলছেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ঐতিহ্য রয়েছে। স্রেফ নতুন কিছু করতে হবে বলেই তা বদলে দেওয়া সব সময় সমর্থনযোগ্য নয়। এই সরকারের আমলে কোনও প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্যই মানা হচ্ছে না বলে তাঁর অভিযোগ।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.