পঞ্চায়েত নির্বাচন
প্রতি বুথেই সশস্ত্র পুলিশ চান মীরা
প্রথমে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্যে একাধিক দিনে পঞ্চায়েত ভোট করানো নিয়ে যিনি অনড়। তার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মীরাদেবীর ঠিক বিপরীত প্রান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছেন যিনি। শনিবার এক দিনে দুই বৈঠক সারলেন রাজ্যের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারেরা। এবং দিনভর বৈঠক পর্বের শেষে প্রশাসনিক সূত্রের খবর, দুই শীর্ষ প্রশাসনিক নেত্রী নিজেদের পুরনো অবস্থানের কথা বলেছেন। কিন্তু কোথায় কিছুটা হলেও যেন সমঝোতার সুর শোনা গিয়েছে।
মীরা পাণ্ডে এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েই পঞ্চায়েত ভোট করাতে চান তিনি। শনিবার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি জানিয়ে দেন, প্রতি বুথে অন্তত দু’জন করে সশস্ত্র পুলিশ রাখতে হবে। এবং হোমগার্ড, গ্রিন পুলিশ বা ওই ধরনের চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত কর্মীদের কোনও ভাবেই বুথ পাহারায় লাগানো যাবে না।
এমন হলে ভোটের দিন পুলিশ মোতায়েন নিয়ে জটিলতা আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা। একাধিক এসপি-ডিএম বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটের আগে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে অস্থায়ী ‘পুলিশ’ নেওয়া অনেক দিনের প্রথা। গ্রামাঞ্চলের যেখানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত ভাল, সেখানে ওই যুবকদের হাতে লাঠি দিয়ে ভোটের দিন মোতায়েন করা হোত। কিন্তু কমিশনের এ দিনের নির্দেশের পরে সেই পথ বন্ধ হয়ে গেল।” এর ফলে যে ঘাটতি তৈরি হবে, সেটা কী ভাবে মিটবে? বাইরে থেকে পুলিশ আনা ছাড়া কোনও ভাবেই ওই ঘাটতি মেটানো যাবে না, বলছেন একাধিক পুলিশকর্তা। অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া গতি নেই।
প্রশাসন সূত্রের খবর, বৈঠকে কেউ কেউ এক দিনে ভোট রার প্রসঙ্গও তোলার চেষ্টা করেন। এমন বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেন যে, এক দিনে ভোট হলে আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা হবে না। কিন্তু রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সে কথা শুনতে চাননি। তিনি পাল্টা যুক্তি দিয়ে জানান, এই ভোট লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনের থেকে কোনও অংশে কম নয়। বরং এখানে রক্ত ঝরার আশঙ্কা বেশি।
তা হলে কত দিনে ভোট করাতে চাইছে কমিশন? এত দিন পর্যন্ত তিন দফায় অনড় ছিলেন মীরাদেবী। কিন্তু প্রশাসন সূত্রের খবর, শনিবার তিনি এই নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি।
মীরাদেবীর সঙ্গে আলোচনার পরেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে ছোটেন ডিএম-এসপিরা। মুখ্যসচিব সঞ্চয় মিত্র পরে বলেন, “দোলের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ওই বৈঠকে কথা হয়েছে। একই সঙ্গে উন্নয়নের কাজ জেলায় কেমন চলছে, সে কথাও জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী।”
কিন্তু প্রশাসনেরই অন্য একটি সূত্র জানাচ্ছে, কমিশনের বৈঠক সম্পর্কে অবহিত হতে চাইছিল মহাকরণ। সেই সূত্র আরও জানাচ্ছে, মমতাও কিন্তু এক দিনে ভোট করানো নিয়ে এ দিন স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।
কেন হঠাৎ এই সুর নরম? মহাকরণ সূত্রে বলা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজ্য সরকার যাতে বিষয়টি নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছতে পারে, সে জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন খোদ রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। কারণ, ভারতীয় সংবিধানের ২৪৩ (ক) ধারা অনুসারে, ভোট পরিচালনা নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও রকম মতভেদ হলে নির্বাচন কমিশন রাজ্যপালের দ্বারস্থ হতে পারে। রাজ্যপাল তখন সরকারকে কমিশনের কথা মতো কর্মী নিয়োগের জন্য বলতে পারেন। তার পরেও সরকার কথা না শুনলে কমিশন হাইকোর্টে যেতে পারে।
বস্তুত, রাজ্য সরকারের সঙ্গে বর্তমান সংঘাতের আবহে কী পদক্ষেপ করা উচিত, তা নিয়ে সম্প্রতি আইনি পরামর্শ নিতে শুরু করেছে কমিশন। মহাকরণ সূত্রে বলা হচ্ছে, রাজ্য সরকারের আশঙ্কা, আদালত যদি কমিশনের পক্ষে রায় দেয়, তা হলে সরকার ফের এক দফা অস্বস্তিতে পড়বে। এই পরিস্থিতিতে সমঝোতার পথে যাওয়াই কাজের প্রশাসনের শীর্ষ নেতৃত্বকে এ কথাই বোঝানো হচ্ছে। রাজ্যপালও সে জন্যই উদ্যোগী হয়েছেন। যাঁরা এ দিনের বৈঠকে হাজির ছিলেন, তাঁদেরও বক্তব্য, দু’টি বৈঠকেই সামান্য হলেও সেই সমঝোতার ইঙ্গিত মিলেছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.