শেক্সপিয়র যতই প্রশ্ন তুলুন, নাম কিন্তু সত্যিই বিভ্রাট তৈরি করতে পারে।
কেমন ভাবে? এর উদাহরণ স্বয়ং সুন্দর পিচাই। প্রযুক্তির দুনিয়ায় তাঁকে প্রায় চেনেন সক্কলে। সম্প্রতি গুগলের অ্যান্ড্রয়েড বিভাগের প্রধান হওয়ার পরে তাঁর পরিচিতি বেড়ে গিয়েছে বহু গুণ। কিন্তু কিম্ আশ্চর্যম্! সুন্দরকে প্রথমে চিনতেই পারেননি তাঁর প্রাক্তন শিক্ষকেরা। কেন? খড়্গপুর আইআইটি-র প্রাক্তনী তালিকায় সুন্দর পিচাই-এর অস্তিত্বই নেই! রয়েছে পি সুন্দরাজন। ১৯৯৩-এর সেই স্নাতকই যে আজকে গুগুলের অ্যান্ড্রয়েড বিভাগের প্রধান, নাম-বিভ্রাটের জেরে তা প্রথমে বুঝতেই পারেননি কেউ। পরে ইন্টারনেটে সুন্দরের ছবি দেখে শিক্ষকেরা চেনেন, ইনিই পি সুন্দরাজন। স্বাভাবিক ভাবেই গর্বিত শিক্ষকেরা।
১৯৮৯ সালে চেন্নাই থেকে খড়্গপুর আসেন সুন্দরাজন। থাকতেন নেহরু হল হস্টেলে। পড়েছিলেন মেটালার্জিক্যাল অ্যান্ড মেটিরিয়ালস সায়েন্স নিয়ে। সব ক্লাসেই প্রথম হতেন। কিন্তু সুন্দর সব চেয়ে উৎসাহী ছিলেন মেটিরিয়াল নিয়ে। এমনকী নিজের থিসিস পেপারটিও করেছিলেন ওই বিষয়ে।
আইআইটি-র পাঠ শেষ করে স্ট্যানফোর্ডে স্নাতকোত্তর স্তরের লেখা পড়া করেন সুন্দর। এর পর আমেরিকারই এক বিখ্যাত সংস্থায় কাজ করতে শুরু করেন। শেষমেশ ২০০৪ সালে গুগলে যোগ দেন সুন্দরাজন। তত দিনে অবশ্য তিনি সুন্দর পিচাই। গুগল ক্রোম তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যিনি হয়ে দাঁড়িয়েছেন গুগলের অন্যতম সদস্য। সাধে কি টুইটারে তাঁর চলে যাওয়া রুখতে সুন্দরকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বোনাস দেয় গুগল।
আইআইটিতে সুন্দরের শিক্ষকরা অবশ্য তাঁকে মনে রাখেন, ভদ্র ও বিনয়ী ছাত্র হিসেবে। যিনি পাঠ্যক্রমের বাইরেও চেষ্টা করতেন নতুন কিছু উদ্ভাবনের। সে প্রবণতা যে দিনে দিনে সুন্দরকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে, গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজের মন্তব্যই তাঁর প্রমাণ। সম্প্রতি নিজের ব্লগে ল্যারি লিখেছিলেন, “নতুন জিনিস যা কি না প্রযুক্তির দুনিয়ায় অসাধারণ অথচ সহজে ব্যবহার করা যায় এমন কিছু তৈরির বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে সুন্দরের..।”
সেই তাগিদেই ভর করে চেন্নাইয়ের শান্ত ছেলে পি সুন্দরাজন আজ সুন্দর পিচাই। নাম-বিভ্রাটে যাঁকে শিক্ষকরা না চিনতে পারলেও, চেনে আন্তর্জালের তামাম দুনিয়া। সুন্দর যে কাজের কৃতিত্বেই নাম-বিভ্রাটকে বহু পিছনে ফেলে দিয়েছেন। |