মন্তেশ্বরে নিখোঁজ শিক্ষক
ছেলেকে খুন করেছে বাবাই, বলছে পুলিশ
প্রায় চার মাস ছেলে নিখোঁজ থাকার পরে জানা গেল ছেলেকে খুন করেছে বাবা। মন্তেশ্বরের এক শিক্ষক নিখোঁজের ঘটনায় এমনটাই দাবি পুলিশের। ধৃত তিন জনকে জেরা করে এমনটাই জানা গিয়েছে।
বেশ কয়েক মাস আগেই মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রাম তৈয়বা ইনস্টিটিউশনের শিক্ষক শেখ মহম্মদ ইব্রাহিমকে পরিকল্পনামাফিক খুন করার অভিযোগ উঠছিল তাঁর বাবার বিরুদ্ধে। ছেলেকে খুন এবং পরে তাঁর দেহ পাচারে
ইব্রাহিম।
আরও দু’জন জড়িত ছিল বলেও জানা গিয়েছে। তদন্তে নেমে মোবাইলের সূত্রে ধরে বৃহস্পতিবার লালু শেখ ওরফে লাল্টু নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে জেরা করেই ঘটনার কিনারা করা গিয়েছে বলে পুলিশের দাবি। শুক্রবার লাল্টুকে মহকুমা আদালতে তোলা হলে দশ দিনের পুলিশ হেফাজত হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর ঘটনার সূত্রপাত। কুসুমগ্রামে নিজের মোটর গ্যারেজে বাজার নেওয়ার নাম করে ছেলেকে ডেকে পাঠান বাবা শেখ আনিসুর আলি। স্কুলের কম্পিউটারের শিক্ষক ইব্রাহিম দাদার বছর তিনেকের মেয়ে রিফা খাতুনকে নিয়ে গ্যারাজে পৌঁছন। এরপর আর বাড়ি ফেরেননি তিনি। মা সাকিলা বিবি স্বামীর কাছে ছেলের খোঁজ করলে আনিসুর জানান তিনি কিছু জানেন না। এমনকী মন্তেশ্বর থানায় ছেলে নিখোঁজ বলে ডায়েরিও করেন তিনি। কিন্তু রিফার বয়ানে পরিস্থিতি বদলে যায়। সে জানায়, ওই দিন গ্যারাজের একটি ঘরে কাকাকে মারধর করে আটকে রাখা হয়। এরপরেই ক্যান্সার আক্রান্ত সাকিলা বিবি স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করতে যান। কিন্তু পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে বলে তাঁর অভিযোগ। পরে ৪ ডিসেম্বর কালনা মহকুমা আদালতের আইনজীবী জয়দেব করের সঙ্গে পরামর্শ করেন সাকিলা বিবি। সেই পরামর্শ অনুযায়ী মন্তেশ্বর থানায় লিখিত অভিযোগপত্র পাঠান তিনি। তাতে তিনি জানান, নাতনির কথা শুনে পরের দিনই গ্যারাজে গিয়ে তিনি দেখেন মেঝেতে রক্তের দাগ রয়েছে। স্বামী এবং গ্যারাজের কর্মী হাসেম শেখ সেই দাগ পরিস্কার করার চেষ্টা করছেন। তাঁর দাবি, ছেলেকে খুন করা হয়েছে। ৯ ডিসেম্বর থানায় অভিযোগপত্র পৌঁছনোর পরেই পুলিশ রাতে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। ৯১ দিন জেলে থাকার পরে সম্প্রতি আনিসুর এবং হাসিম ছাড়া পান। ইতিমধ্যে ছেলের খোঁজ না পেয়ে অসুস্থ সাকিলা বিবি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সিআইডি তদন্ত চেয়ে চিঠি পাঠান। মানবাধিকার কমিশন ও পুলিশ সুপারের কাছেও আবেদন করেন তিনি।

সেই গ্যারাজের সামনে।
শেষে অবশ্য জট খোলে মন্তেশ্বর থানার পুলিশ। পুলিশ খবর পায়, ওই শিক্ষকের মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে অন্য একজন। তাঁকে জেরা করে জানা যায় ফোনটি তিনি এলাকার লালু নামে এক যুবকের কাছ থেকে কিনেছেন। বৃহস্পতিবার লালুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জেরায় লালু জানায়, একটি বাসে খালাসির কাজ করে সে। সেই সুবাদেই আনিসুরের গ্যারাজে যাতাযাত ছিল তার। আনিসুর তাঁর ছেলেকে খুন করার জন্য তাকে এবং এলাকার আরেক যুবক রিটন শেখকে নিয়োগ করে বলে জানায় লালু। সে জানায়, ওই দিন গ্যারাজে ঢোকার পরেই ইব্রাহিমকে লোহার রড দিয়ে আঘাত করা হয়। পরে তাঁর দেহ বস্তায় পুড়ে গাড়িতে করে নবদ্বীপের গৌরাঙ্গ সেতুতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকেই বস্তাবন্দি দেহ ফেলে দেওয়া হয় গঙ্গার জলে। লালুর বয়ানের উপর নির্ভর করে বৃহস্পতিবার গৌরাঙ্গ সেতু থেকে ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ। তবে দেহ মেলেনি। পুলিশ ধৃতকে জেরা করেই লোহার রডটি উদ্ধার করেছে। নথিভুক্ত করা হয়েছে রিফার বয়ানও। মহকুমা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, লালুকে জেরা করে আমরা নিশ্চিত যে ঘটনাটি খুনের। দেহ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ঘটনার পর কোনও দেহ নবদ্বীপ বা শান্তিপুর এলাকায় ভেসে উঠেছিল কিনা তাও দেখা হচ্ছে।
প্রশ্ন উঠছে খুনের কারণ নিয়েও। পুলিশের দাবি, কয়েকটি কারণে বাবার সঙ্গে ইব্রাহিমের সম্পর্ক তিক্ত হয়েছিল। তার একটা, ব্যবসায় ক্ষতি হওয়ায় আনিসুর বাড়ি বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এ কথা জানতে পেরে বাড়ির দলিল লুকিয়ে রাখেন ইব্রাহিম। এছাড়া আনিসুর অন্য একজনকে বিয়েও করতে চেয়েছিলেন। তাতেও বাধা দেন ইব্রাহিম। শুক্রবার সাকিলা বিবি বলেন, “আমি ক্যান্সারে বাঁচবো না জেনেই ও আরেকটা বিয়ে করতে চেয়েছিল। আমি চাই স্বামীর এমন সাজা হোক যাতে ভবিষ্যতে কেউ একাজ না করে।” তবে পুলিশ যদি প্রথমেই তাঁর অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামত তাহলে ছেলের দেহ পেতে সমস্যা হত না বলে তাঁর দাবি।

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.