বৃষ্টির দেখা নেই। জলের অভাবে শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে ফসলের মাঠ। বোরো ধান ও সবজি খেতের দশা দেখে চাষিদের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে। বৃষ্টিহীন এমন পরিস্থিতি কিছুদিন চললে কোচবিহার জেলায় কৃষি উৎপাদনে মার খাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি ও উদ্যান পালন দফতরের কর্তারা। জেলার মুখ্য কৃষি আধিকারিক প্রণবজ্যোতি পন্ডিত বলেন, “আবহাওয়ার দিকে নজর রাখা হচ্ছে। নদীর জল উত্তোলন কেন্দ্রগুলি থেকে সেচের জল সরবরাহ যেন বন্ধ না থাকে সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বৃষ্টি না হলে সমস্যা বাড়বে।” জেলা উদ্যান পালন দফতরের জেলা সহকারি আধিকারিক দীপক সরকার বলেন, “দু’সপ্তাহের মধ্যে বৃষ্টি না হলে সব্জি ফলন মার খাবে।”
কৃষি ও উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহার জেলায় কৃষি জমি রয়েছে ২ লক্ষ ৪৬ হাজার হেক্টর। তার মধ্যে ২ লক্ষ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়। প্রায় ৭০ শতাংশ জমি সেচের আওতার বাইরে থাকায় শীতের মরসুমে বোরো ধান চাষ হয় মাত্র ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত জেলায় গড়ে ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও এ বার মার্চ মাসের অর্ধেক গড়িয়ে গেলেও মাত্র ১২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অক্টোবর মাসের পরে বৃষ্টি হয়নি। ফলে বোরো ধান খেতে সেচের ব্যবস্থা করতে রীতিমতো হিমসিম খেতে হচ্ছে চাষিদের। ডিজেল ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই পাম্প লাগিয়ে সেচের ব্যবস্থা করতে পারছে না। জয় সাহা নামে এক চাষি বলেন, “সেচের জন্য যে বাজেট করেছিলাম বৃষ্টি না হওয়ায় কয়েকগুণ বেশি খরচ হয়েছে। বেশি দিন এভাবে চললে সেচ দেওয়া সম্ভব হবে না।”
জলের অভাবে ঝিঙের বীজতলা তৈরির কাজ চাষিদের অনেকে শুরু করতে পারেনি। সমস্যায় পড়েছেন পটল ও উচ্ছে চাষিরা। উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় প্রায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে ঝিঙে, ৭০০ হেক্টর জমিতে পটল, ৫৫০ হেক্টর জমিতে উচ্ছে চাষ হয়। বৃষ্টি না হওয়ায় এবার এখনও পর্যন্ত ৩০০ হেক্টর ঝিঙের বীজতলা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে বাকি বীজতলা তৈরি করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। বর্ষাতি লঙ্কার ফলনও মার খাওয়ার আশঙ্কা করছে চাষিরা। নাটাবাড়ির বাসিন্দা চাষি তথা কংগ্রেস নেতা শৈলেন বর্মা এই প্রসঙ্গে বলেন, “আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে ভাল রকম বৃষ্টি না হলে সবজির ফলন মার খাওয়ার সম্ভাবনা আছে।” |