শিশু সামলে কেন্দ্রে নয় পরীক্ষার্থী
রীক্ষা দিতে বসেও বার বার কান্নার আওয়াজ চলে আসছে কানে। কখনও ছুটে আসছেন মা। আবার কখনও বা পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরেই শিশুকে নিয়ে হাজির পরিবারের লোক। মাত্র ৫ দিনের সদ্যোজাতকে পরীক্ষাকেন্দ্রের চত্বরে রেখে এভাবেই পরীক্ষা দিচ্ছেন উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরের লোধন হাইস্কুলের ছাত্রী শবনম বেগম। শুধু তিনি একা নন, ইসলামপুর মিলনপল্লি হাইস্কুলে ঠিক একই ভাবে পরীক্ষা দিচ্ছেন গোয়ালপোখর লোধন হাইস্কুলের ৮ ছাত্রী। শুক্রবার ইসলামপুর শহরের মিলনপল্লি স্কুলে এ দৃশ্য দেখা গেল উচ্চমাধ্যমিকের দ্বিতীয় দিনেও।
গোয়ালপোখরের লোধন স্কুলের ছাত্রী ওঁরা। কারও শিশুর বয়স এক মাস। কারও দুমাস। তিন মাস কিংবা নয় মাসেরও বাচ্চা রয়েছে। ওই পরীক্ষা কেন্দ্রে সব থেকে ছোট শিশুটি শবনমের। মাত্র পাঁচদিন বয়স হয়েছে তাঁর শিশুটির। গোয়ালপোখর থানার পেঁয়াজপোখরের বাসিন্দা শবনমের মনে অত্যন্ত জোর। সেই মনোবল নিয়ে এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন। এ বছরটি নষ্ট করতে চান না তিনি। তাই শিশুকে তার দিদিমার কাছে রেখেই পরীক্ষা দিচ্ছেন তিনি। তাঁর মা সালেমা বেগম জানান, ৫ দিন আগে গোয়ালপোখরে লোধন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁর মেয়ের একটি ছেলে হয়েছে। তবে সাধারণ প্রসব হওয়ায় শবনম হাসপাতালে বসেই সিদ্ধান্ত নেয়, পরীক্ষা দেবে। সেই জেদের কাছে হার মেনেছেন পরিবারের লোকেরাও। সালমা বিবি বলেন, “মেয়ে চেয়েছিল এ বছরটা নষ্ট করবে না। তাই নাতির কথা ভেবে আমিও থাকছি। পরীক্ষার ঘরে বসেও কান্নার আওয়াজ পেয়ে ছুটে আসছে বার বার।” শবনম বলেন, “একটা পিছিয়ে গেলে সব থমকে যেতে পারে। সংসারের চাপে আর পড়াশোনা হবে কি না জানি না। তাই উচ্চ মাধ্যমিকটা দিচ্ছি।”
পরীক্ষাকেন্দ্রে মা ও শিশুরা। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
শবনম একা নন, ওই স্কুলে বসেই পরীক্ষা দিচ্ছেন খুশমারি, আজমারি, মেহেরবানু, সাবিনা, তারা, জামিনা, লাডলিরা। শবনমের মতো তারাও নিজের শিশুকে স্কুল চত্বরে পরিবারের লোকেদের কাছে রেখে ঘরে বসেই পরীক্ষা দিয়েছেন। সকলে এক স্কুলের ছাত্রী হওয়ায় একে অপরের খুবই পরিচিত। তবে বর্তমানে গোয়ালপোখরের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে তাদের বিয়ে হয়েছে। এদের প্রত্যকে অন্যান্য এলাকাতে থাকলেও প্রত্যকেই চেয়েছে এবার পরীক্ষা দিয়ে পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে। তাঁদের দাবি, “এক বার পড়াশোনা থেকে সরে গেলে মুশকিল। আর পড়াশোনা করতে মন চাইবে না।” অনেকের আবার পরিবারের কাজের চাপে পড়াশোনাও করতে পারবেন না। তাই পরিবারের লোকেদের বুঝিয়েই কোলের বাচ্চাকে নিয়েই পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজির হয়েছেন ওঁরা। তাই লিখতে লিখতে কান্নার আওয়াজ পেলেই ওরা। ছুটে যাচ্ছেন জি-১৩ নম্বর ঘরে। যেখানে রয়েছে শিশুরা। সাবিনা ইয়াসমিন, মেহরবানু বেগমরা বলেন, “গ্রামের দিকে চাকরির বেশ সুযোগ রয়েছে। তাই পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে চাই। স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকেদের সহযোগিতা পাচ্ছি বলেই এটা করতে পারছি।” দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষাটি ভালই হয়েছে ওঁদের। কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে প্রথমে শিশুকে নিয়ে প্রাণভরে বুকে জড়িয়ে নিচ্ছেন ওঁরা। স্কুলের এক শিক্ষক তপন ভৌমিক বলেন, “ওঁরা মন দিয়ে লেখে। আবার বাচ্চার কান্না শুনলে ছুটে যায়। শান্ত করিয়ে ফের ছুটে আসে। দারুণ মনের জোর ওঁদের।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.