রাজ্যে শিশুদের জন্য নির্ধারিত রক্তের ব্যাগের আকালের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ মেনেও নিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। জানিয়েছেন, এর ফলে বড়দের রক্তের ব্যাগই দিতে হচ্ছে শিশু রোগীকে। অতটা রক্ত কোনও শিশুরই কাজে লাগে না। তাই প্রতিটি ব্যাগে অনেকটা রক্ত নষ্ট হচ্ছে।
শুক্রবার বিধানসভার উল্লেখ পর্বে শিশুদের রক্তের ব্যাগ নিয়ে সমস্যার প্রসঙ্গ তোলেন এসইউসি-র বিধায়ক তরুণ নস্কর। তিনি বলেন, “বাচ্চাদের জন্য ৭৫-১০০ মিলিলিটারের ব্লাডব্যাগ লাগে। অন্য সব রাজ্য জাতীয় এড্স নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কাছ থেকে এই ব্যাগ পায়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ পায় না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিষয়টি দেখুন। কারণ এতে অনেক রক্ত নষ্ট হচ্ছে।”
ব্লাডব্যাঙ্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য দফতরের টেকনিক্যাল সেলের সহ-অধিকর্তা কল্যাণ মুখোপাধ্যায় শিশুদের ব্লাডব্যাগের অভাবের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি জানান, জাতীয় এড্স নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বা ন্যাকো প্রায় এক বছরে ব্লাডব্যাগ সময়ে পাঠানো নিয়ে টালবাহানা করছে। শিশুদের ব্যাগ তো একেবারেই আসছে না। রাজ্যের হাতেও এত ব্যাগ কেনার টাকা নেই। তাই বড়দের ব্যাগই ছোটদের দেওয়া হচ্ছে। বড়দের ব্লাডব্যাগ হয় ৩৫০ মিলিলিটারের। ছোটদের ব্যাগে রক্ত থাকে ১০০ বা ১৫০ মিলিলিটার। বড়দের ব্যাগ শিশুদের দেওয়ায় ব্যাগ-প্রতি ২০০ থেকে ২৫০ মিলিলিটার রক্ত নষ্ট হচ্ছে। কল্যাণবাবুর কথায়, “আমাদের রাজ্যে এখন বহু সরকারি হাসপাতালে আলাদা শিশু বিভাগ, এসএনসিইউ খোলা হচ্ছে। সেখানে অনেক বেশি রক্তের দরকার হচ্ছে। অথচ রক্তের ব্যাগ মিলছে না। কোন হাসপাতালে কত শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে, তাদের গড়ে কত রক্তের ব্যাগ লাগছে, সেই তথ্যব্যাঙ্কও আমাদের নেই। আমি প্রতিটি হাসপাতালকে অবিলম্বে সেই তথ্য পাঠাতে বলেছি।” এসএসকেএম হাসপাতালের অধ্যক্ষ প্রদীপ মিত্রও শিশুদের রক্তের ব্যাগের আকালের কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “হাসপাতালগুলি ব্লাডব্যাগ এবং শিশু রোগীদের নিয়ে কী কী সমস্যায় পড়ছে, সেটা স্বাস্থ্য দফতর এর আগে আমাদের কাছে জানতে চায়নি। রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের কোনও বৈঠকে হাসপাতালের অধ্যক্ষ বা সুপারদের ডাকা হত না। ফলে সমস্যাটা কোনও দিন তেমন ভাবে সামনে আসেনি।”
শিশুদের রক্তের ব্যাগ নিয়ে সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য এডস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থার কর্তারা জানাচ্ছেন, বড়দের রক্তের ব্যাগেরও চরম আকাল দেখা দিয়েছে। চলতি আর্থিক বর্ষে ন্যাকো ব্লাডব্যাগ পাঠিয়েছে নামমাত্র। গরমের সময় রক্তসঙ্কট বাড়ে। ব্লাডব্যাগের অভাবে বেশি করে রক্তদান শিবিরেরও আয়োজন করা যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে করেও বাতিল করতে হচ্ছে। |