চালু হওয়ার পরেও প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে না তোলায় মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় বর্ষের ভর্তির অনুমোদন বন্ধ করে দেয়। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ও মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ দ্রুত পরিকাঠামো গড়ে তোলার মুচলেকা দিয়ে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার থেকে ২০১২ সালে দ্বিতীয় বর্ষের পঠন পাঠনের অনুমোদন আদায় করে। ২০১৩ সালে তৃতীয় বর্ষের পঠনপাঠনের অনুমোদন দেওয়ার আগে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার প্রতিনিধি দলের আসার কথা। তখনও পরিকাঠামো তৈরি না থাকলে অভাবে ফের আটকে যেতে পারে অনুমোদন। সেই কারণেই মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কাজকর্ম খতিয়ে দেখতে শুক্রবার মালদহে যান রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দোপাধ্যায়।
এ দিন কলেজ চত্বর অপরিস্কার ও অ্যাকাডেমিক ভবনের কাজ শেষ হয়নি দেখে ক্ষুব্ধ সুশান্তবাবু। হাসপাতাল তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কর্তাদের ডেকে রীতিমতো ‘ধমক দিয়ে’ তিনি বলেন, “কোনও কথা শুনতে চাই না। ১৫ দিনের মধ্যে অ্যাকাডেমিক ভবনের কাজ শেষ করতে হবে। যে কোনও দিন মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিরা আসবেন। তখন যদি তাঁরা দেখেন অ্যাকাডেমিক ভবন হয়নি তবে আমরা কী জবাব দেব। তৃতীয় বর্ষের অনুমোদন যদি আটকে যায় তবে আমরা কাউকে ছাড়ব না। বেশি বেশি লোক লাগিয়ে ভবনের কাজ দ্রুত শেষ করুন।” মেডিক্যাল হাসপাতাল চত্বর দেখে রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা প্রশ্ন তোলেন, মেডিক্যাল কলেজ কেন খানাখন্দে ভরে থাকবে। তিনি বলেন, “রাস্তাঘাট ঠিক করুন।”
ঠিকাদার সংস্থার প্রজেক্ট ডিরেক্টর জয়ন্ত সাহা বলেন, “মার্চ মাসের মধ্যে অ্যাকাডেমিক ভবনের দুই তলার কাজ শেষ করে আপনাদের হাতে তুলে দেবো। রাস্তাঘাট সব ঠিক করে দেওয়া হবে।” পরে সাংবাদিকদের সুশান্তবাবু বলেন, “মালদহ মেডিক্যালে কিছু অসুবিধে আছে। আপাতত ছাত্রদের হস্টেলে অ্যাকাডেমিক ক্লাস চালু করা হয়েছে। পরে তা স্থানান্তরিত করা হবে। তৃতীয় বর্ষের পঠন পাঠনের আগে যা যা করণীয় তা হয়েছে কি না তা দেখতে এসেছি। সেই কাজে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।”
শুধু অ্যাকাডেমিক ভবনই নয়, মেডিক্যাল কলেজের নবনির্মিত ওপিডি ভবনের কাজ বন্ধ দেখে রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হাসপাতালের অধ্যক্ষ উচ্ছল ভদ্রকে বলেন, “কী দেখব? কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে এই তো।” ঠিকাদার সংস্থার কর্তাদের ডেকে তিনি বলেন, “২-৩ দিনের মধ্যে ওপিডির কাজ শুরু করুন।” মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে মালদহ মেডিক্যাল হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে ঢুকে রোগীদের প্রেসক্রিপশন দেখে বেজায় চটে যান রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা। পাশাপাশি রোগীরা অভিযোগ করেন, “ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকানে সমস্ত ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি কাউন্টার থেকে ওষুধ কিনলে বাইরের ওষুধের দোকান ওষুধ দিচ্ছে না।”
শুনে নিজের ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সুশান্ত বন্দোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘মেডিক্যাল কলেজ কতৃপর্ক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চিকিৎসকরা রোগীদের কি প্রেসক্রিপশন করছে সেদিকে নজর রাখতে হবে। পাশাপাশি জেনেরিক ওষুধ লেখার জন্য চিকিৎসকদের বারবার বলতে হবে। মেডিক্যাল কলেজ কিংবা সরকারি হাসপাতাল থেকে ওষুধ কেনার জন্য যদি কোনও বাইরের ওষুধের দোকান রোগীদের পরিবারকে ওষুধ দিতে অস্বীকার করে সেই সমস্ত ওষুধের দোকানের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হবে। সরকার এটা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করবে না।” |