আপাতত ঠিকাদারদের টাকা নয় এসজেডিএ-তে |
শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (এসজেডিএ) বরাত প্রাপ্ত ঠিকাদারদের একাংশকে কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই টাকা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তা জানতে পেরে আপাতত কোনও ঠিকাদারকে টাকা দেওয়া যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছেন এসজেডিএ-এর সদ্য নিযুক্ত চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। শুক্রবার সকালে এসজেডিএ-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান জানিয়ে দেন, তিনি নির্দেশ না-দেওয়া পর্যন্ত আপাতত নতুন করে কোনও ঠিকাদারকে টাকা দেওয়া যাবে না। গৌতমবাবু বলেন, “আমি দায়িত্বগ্রহণের পরে এখনও এসজেডিএ দফতরে যেতে পারিনি। আগামী সপ্তাহে যাব। সব নথিপত্র ভাল করে দেখে বুঝে নেওয়ার ব্যাপার রয়েছে। তাই আপাতত ঠিকাদারদের কাউকে টাকা দিতে নিষেধ করেছি।” এসজেডিএ-এর এক অফিসার জানান, নির্দেশ পেয়ে তা সংস্থার অর্থ বিভাগকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এসজেডিএ সূত্রের খবর, গত ২০ মাসে কোন প্রকল্পে কী কাজ হয়েছে, কত টাকা ঠিকাদার সংস্থাগুলি পেয়েছে, কোন কাজ কী অবস্থায় আছে তা নিয়ে তথ্য-পরিসংখ্যান চেয়েছেন মন্ত্রী। এমনকী, যে সব ক্ষেত্রে কয়েকজন ঠিকাদার অস্বাভাবিক দরে কাজ পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে, তা নিয়েও পৃথক রিপোর্ট চেয়েছেন তিনি। সরকারি সূত্রের খবর, যে সব ক্ষেত্রে বিপুল অঙ্কের সরকারি টাকা নয়ছয়ের আশঙ্কা ও অভিযোগ রয়েছে, তা নিয়ে কী করণীয় সেই ব্যাপারে রাজ্য নগরোন্নয়ন দফতরের পরামর্শ নেওয়ার কথা ভাবছেন নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান গৌতমবাবু। তিনি বলেন, “এসজেডিএ-এর কোন প্রকল্প, কী অবস্থায় রয়েছে সেই ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ তৈরি করতে বলেছি। সেগুলি দ্রুত শেষ করতে হবে। অন্য অভিযোগ, সমস্যা, আশঙ্কার বিষয়গুলি নিয়ে নগরোন্নয়ন দফতরের পরামর্শ নেওয়া হবে।”
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফরের শেষ দিনে চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারিত হন রুদ্রনাথবাবু। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন গৌতমবাবু। গত বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের ‘ডিন’ পদ থেকে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে রুদ্রনাথবাবু তৃণমূলে যোগ দেন। ভোটে জয়ের পরে এসজেডিএ-এর চেয়ারম্যান হন। ক্রমশ তৃণমূলের গোষ্ঠী রাজনীতিতে গৌতমবাবুর বিরুদ্ধ শিবিরের কাছের লোক হিসেবে চিহ্নিত করা হয় রুদ্রনাথবাবুকে। তৃণমূলের অন্দরের খবর, রুদ্রনাথবাবু এসজেডিএ-এর নানা উন্নয়ন প্রকল্পকে কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে তৃণমূল সংগঠনে নিজের কর্তৃত্ব বাড়াতে সচেষ্ট হন।
এমতাবস্থায়, গৌতমবাবুর অনুগামীরা এসজেডিএ-এর নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের গতিপ্রকৃতির দিকে কড়া নজরদারি শুরু করেন। তখনই তাঁরা জানতে পারেন, ত্রিফলা আলোয় বিনা টেন্ডারে এক ঠিকাদারকে বহু কোটি টাকার কাজ পাইয়ে দেওয়া নিয়ে দলের অন্দরেই প্রশ্ন ওঠে। ওই ঠিকাদার তৃণমূলের এক নেতার ঘনিষ্ঠ হওয়ায় দলে বিভাজনের চেষ্টা হচ্ছে কি না তা নিয়েও তৃণমূল মহলে জল্পনা শুরু হয়। ইতিমধ্যেই এসজেডিএ শিলিগুড়ি শহর জুড়ে ক্লোজ সার্কিট টিভি বসানোর জন্য প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়। কয়েকদিনের মধ্যে তিনটি বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর জন্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করে এসজেডিএ। জোড়াপানি নদীর মাটি তুলে গভীরতা বাড়ানোর জন্য প্রায় ৮ কোটি টাকা স্রেফ কোটেশনের মাধ্যমে খরচ করা হয়। যা নিয়ে দলীয় বৈঠকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা দলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি গৌতমবাবু ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রুদ্রনাথবাবু সেই সময়ে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জানিয়ে দেন, তাঁকে অন্ধকারে রেখে ওই কাজ করা হয়েছে। এমনকী, ওই ঘটনার পরে এগডিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র মৃগাঙ্ক সরকারকে বদলি করা হয়েছে বলে দাবি রুদ্রনাথবাবুর। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের পদস্থ ইঞ্জিনিয়রের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়। তৃণমূল সূত্রের খবর, এসজেডিএ-এর ওই সব ব্যাপারে তিনি যে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল তা বোঝাতেই প্রথমে ঠিকাদারদের টাকা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন গৌতমবাবু। |