অনড় অবস্থান কিছুটা কাটিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘণ্ট স্থির করতে তৎপরতা শুরু হল প্রশাসনিক মহলে।
রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট দু’দফাতেই হোক, এখনও চাইছে রাজ্য। কিন্তু সেই দু’দফায় জেলাওয়াড়ি বিন্যাস প্রথমে তারা যে ভাবে করেছিল, এ বার তার কিছুটা অদল-বদল করার কথা ভাবা হচ্ছে। প্রথম দফায় মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর দিনাজপুর (যে তিন জেলায় কংগ্রেসের হাতে এখন জেলা পরিষদ রয়েছে) এবং পরের দফায় রাজ্যের বাকি সব জেলা এমন ভাগাভাগি আগে করা হয়েছিল। কিন্তু তা মানতে রাজি হয়নি রাজ্য নির্বাচন কমিশন। শাসক দল সূত্রের খবর, কমিশনের সঙ্গে সংঘাত আর বাড়াতে না-চেয়েই দু’দফায় জেলার ভাগাভাগি একটু অন্য রকম ভাবে করা হচ্ছে। পাশাপাশিই, কমিশনকে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, প্রতিটি বুথেই সশস্ত্র প্রহরার ব্যবস্থা রাখা হবে। তার জন্য প্রয়োজনে অন্য রাজ্য থেকে সশস্ত্র পুলিশ আনা হবে। কেন্দ্রীয় আধা-সামরিক বাহিনীতে এখনও আপত্তি রয়েছে রাজ্যের। কিন্তু তা নিয়ে কমিশন যাতে আর আপত্তি আঁকড়ে না-থাকে, তার জন্য তলে তলে রফার চেষ্টা চলছে বলেই তৃণমূল সূত্রের খবর।
বস্তুত, রাজ্যের তরফে ওই দুই বিষয়ে (ভোটের দিন ও নিরাপত্তা) মতামত জানিয়ে চিঠির বক্তব্যও তৈরি। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই চিঠি পাঠানো হয়নি কমিশনকে। একটি সূত্রের বক্তব্য, “কমিশন যাতে এর পরেও রাজ্যের প্রস্তাবে অসম্মত না-থাকে, তা ভাল করে বুঝে নিয়েই চূড়ান্ত বক্তব্য তাদের কাছে পাঠানো হবে। পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে মামলা আদালত পর্যন্ত গড়াক, এটা কাঙ্ক্ষিত নয়।” ওই সূত্রের মতে, রাজ্য সরকার নতুন করে দফাওয়াড়ি বিন্যাস এবং সশস্ত্র প্রহরা দিয়ে ভোটের ব্যবস্থা করবে, কমিশনও তিন দফায় ভোট এবং আধা-সামরিক বাহিনী চেয়ে অনড় থাকবে না এই রকমই সমঝোতার খোঁজ চলছে।
কমিশন সূত্রের খবর, এ দিন কর্তারা দফতর ছাড়ার আগে পর্যন্ত রাজ্যের কোনও চিঠি তাঁদের কাছে পৌঁছয়নি। দু’দফার ভোটের সিদ্ধান্ত কমিশন বিনা প্রতিবাদে মেনে নেবে কি না, তা নিয়ে প্রশাসনিক মহলে এখনও সংশয় আছে। আজ, শনিবার সব জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডের বৈঠক হওয়ার কথা। আগে মীরাদেবীর সঙ্গে বৈঠকে বেশির ভাগ জেলাশাসকই পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছেন। শনিবারও প্রসঙ্গটি উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ দিন সকালে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে তাঁর সঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট সংক্রান্ত অচলাবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পরে সুব্রতবাবু বলেন, “কমিশনকে জবাব দেওয়ার জন্য দফতরগত ভাবে আমরা প্রস্তুত। সেটাই মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর চূড়ান্ত মত পেলেই কমিশনকে চিঠি দেওয়া হবে।” তৃণমূলের একটি সূত্রের ইঙ্গিত, আগামী সপ্তাহে ফের জঙ্গলমহল সফরে যেতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। তার মধ্যে পঞ্চায়েত ভোটের ঘোষণা হয়ে গেলে জঙ্গলমহলে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কোনও নতুন ঘোষণা করতে পারবেন না। তাই জটিলতা এড়ানোর জন্যই আরও একটু সময় নিতে পারে রাজ্য। |