বিধানসভা
মমতার ধমকে হাজিরার নির্দেশ তৃণমূলে
বিধানসভা কক্ষে দাঁড়িয়ে প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধী বেঞ্চ গমগম করছে। কিন্তু ট্রেজারি বেঞ্চে হাতে গোনা কয়েক জন! মন্ত্রীও মাত্র পাঁচ-ছ’জন! নেই ডেপুটি স্পিকার সোনালি গুহও।
বিধানসভা অধিবেশনের প্রথমার্ধে শুক্রবার নিজের দলের বিধায়ক-মন্ত্রীদের নামমাত্র হাজিরায় বেজায় কূপিত হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকার পক্ষের মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ডেকে জানতে চেয়েছেন, কেন ট্রেজারি বেঞ্চ এত ফাঁকা? কেন বেলা ১১টায় অধিবেশন শুরুর আগেই ট্রেজারি বেঞ্চের অধিকাংশ সদস্য নিয়মিত হাজির হচ্ছেন না?
মুখ্যমন্ত্রীর এই ক্ষোভের আঁচ একেবারে হাতে-গরম টের পেয়েছেন স্বনির্ভর প্রকল্পমন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোও। অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী গিয়েছিলেন স্পিকারের ঘরে। সেখান থেকে বেরোনোর সময় মুখ্যমন্ত্রীর মুখোমুখি পড়ে গিয়েছিলেন শান্তিরাম। মন্ত্রী জানান, বিকালে তাঁর অন্য একটি অনুষ্ঠান রয়েছে বলে বিধানসভা থেকে বেরিয়ে যেতে চান। শুনেই মুখ্যমন্ত্রীর তিরস্কার, “জানেন না বাজেট অধিবেশন চলছে! আজ অর্থ বিল রয়েছে। সভা শেষ না-হওয়া পর্যন্ত কোথাও যাবেন না।” পাশে দাঁড়ানো শোভনদেববাবুকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, “কারা কারা আসছেন না, দেরি করে আসছেন আমাকে তালিকা দেবেন।” এর পরে শান্তিরাম আর বিকালে অধিবেশন ফুরনোর আগে পর্যন্ত বিধানসভা ছাড়েননি! মুখ্যমন্ত্রীর রাগের খবর পেয়ে স্যালাইনের বোতল তড়িঘড়ি খুলে বিধানসভায় হাজির হয়েছিলেন ডেপুটি স্পিকারও। পরে এক মন্ত্রীকে সোনালিদেবী বলেছেন, “কাল থেকে পেটের সমস্যায় ভুগছি। স্যালাইন চলছিল। ওঠার ক্ষমতা ছিল না। দিদি আসছেন শুনে স্যালাইন খুলে সাড়ে ১১টা নাগাদ সভায় এলাম।”
আর সরকারি মুখ্য সচেতককেও ঘনিষ্ঠ মহলে বলতে শোনা গিয়েছে, সদস্যদের হাজিরা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বিজ্ঞপ্তি জানানোর সময় ঘনিষ্ঠ মহলে শোভনদেববাবুও বলছিলেন, “এ বার থেকে চাবুক নিয়ে ঘুরব! যে দেরি করে আসবে বা এসেও সই করে চলে যাবে, চাবুক মারব!”
মুখ্যমন্ত্রীর ‘মুড’ অবশ্য মোটেও রসিকতার ছিল না! বিধায়কদের গরহাজিরার কোনও সন্তোষজনক জবাব তিনি শোভনদেব, পার্থবাবুদের কাছে পাননি। সঙ্গে সঙ্গে শোভনদেবের প্রতি তাঁর নির্দেশ, তৃণমূলের বিধায়কদের জন্য দলনেত্রীর নামে কড়া হুইপ জারি করতে হবে। দিনের শেষে ফোন, এসএমএস, নোটিস বোর্ডে বিজ্ঞপ্তি টাঙানোর পাশাপাশি তৃণমূল নেত্রীর নির্দেশ সব বিধায়কের নামে চিঠি দিয়েও জানানো হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, ‘অধিবেশন চলাকালীন বেলা ১১টায় সকলকে সভায় হাজির হতে হবে। দিনের অধিবেশন শেষ না-হওয়া পর্যন্ত কোনও মন্ত্রী, পরিষদীয় সচিব, বিধায়ক কক্ষ ছেড়ে যেতে পারবেন না। এই নির্দেশ তৃণমূলের চেয়ারপার্সনের নির্দেশ’।
নিজের দলের সদস্যদের ঢালাও গরহাজিরায় ক্ষুণ্ণ মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ১২টা নাগাদ রাগত মুখে অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরিয়ে চলে যান নিজের ঘরে। ছুটে যান শোভনদেব, পার্থবাবু, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যেরা। তৃণমূল সূত্রের খবর, সেখানেই মমতা বেজায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন সভায় দলীয় বিধায়কদের নিষ্ক্রিয় আচরণ নিয়ে। কেন তাঁরা আরও বেশি করে প্রশ্ন করছেন না, কেন আরও তথ্যনিষ্ঠ বিতর্কে অংশ নিচ্ছেন না, তা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন মমতা। শোভনদেবকে অবিলম্বে কড়া হুইপের নির্দেশ দেওয়ার পরেই স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে গিয়ে খতিয়ে দেখেন মন্ত্রী, পরিষদীয় সচিব এবং বিধায়কদের হাজিরা-খাতাও। এর পরেই শোভনদেব বিধায়ক-মন্ত্রীদের হাতে হাতে চিঠি ধরান, এসএমএস পাঠান পার্থবাবু। পরে পার্থবাবুর মন্তব্য, “দলের সব সদস্য যাতে নিয়মিত সভায় হাজির থাকেন, মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশ পরিষদয়ী মন্ত্রী হিসেবে অধিবেশনের শুরুতেই জানিয়েছিলাম। তার পরেও মুখ্যমন্ত্রী দেখলেন, তিনি থাকা সত্ত্বেও এত কম হাজিরা! আশা করব, নিজের নিজের এলাকায় তেমন কোনও অঘটন না-ঘটলে আগামী সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অধিবেশনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দলের সকলে উপস্থিত থাকবেন।”
তৃণমূলের মন্ত্রী-বিধায়কদের কেউ যে কথা প্রকাশ্যে বলতে পারেননি, সেটাই বলেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর মন্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী নিজের দলের মন্ত্রী-বিধায়কদের বিধানসভায় হাজির থাকতে বলেন। কিন্তু নিজে থাকেন না! আজ বিধানসভার শুভ দিন! কারণ, মুখ্যমন্ত্রী এই প্রথম প্রশ্নের জবাব দেওয়ার শুভ উদ্বোধন করেছেন! আশা করি, এই ইতিবাচক পরিবর্তন জারি থাকবে!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.