মান্য হবে পিএসসি-ই
চতুর্থ শ্রেণির অস্থায়ী
নিয়োগ বাতিল স্যাটে
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) প্যানেল এড়িয়ে চতুর্থ শ্রেণির অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের যে প্রক্রিয়া রাজ্য সরকার শুরু করেছিল, তা খারিজ করে দিল রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল (স্যাট)। স্যাটের মতে, রাজ্যের এই প্রয়াস আইনবিরুদ্ধ। ইতিমধ্যেই যে সব অস্থায়ী কর্মীর নিয়োগ হয়েছে, এ দিনের রায়ের জেরে তাঁদের নিয়োগ অবৈধ হয়ে গেল।
কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অলক বসু বর্তমানে স্যাট-এর বিচারক। তিনি এবং বিচারক কল্যাণ বাগচী শুক্রবার রায় দিয়েছেন, পিএসসি-র প্যানেল রাজ্য সরকার কোনও ভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না। রায়ে এ-ও বলা হয়েছে, ২০১১ সালে পিএসসি-র তৈরি করা প্যানেলে যাঁদের নাম রয়েছে, চার মাসের মধ্যে তাঁদের সবাইকে নিয়োগ করতে হবে।
প্যানেলে বর্তমানে ২৮০০ জনের নাম রয়েছে। তাঁদেরই একাংশ ‘অধিকার রক্ষা মঞ্চ’ গড়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন, স্যাট-এ মামলা করেছিলেন। স্যাটের রায়ে খুবই খুশি ওঁরা। মঞ্চের তরফে তীর্থ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সরকারের কাছে আমাদের বিনীত আর্জি, স্যাটের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চতর আদালতে যাবেন না।” বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের প্রতিক্রিয়া, “আশা করি, এর থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকার আর এমন কাজ করবে না।” এ ব্যাপারে সরকারের বক্তব্য কী? শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মামলার রায় সংক্রান্ত কাগজপত্র না দেখে বিশদে কিছু বলব না। তবে এটুকু বলা যায় যে, সরকার বেআইনি কিছু করেনি এবং করবেও না।”
২০১১ সালে রাজ্য সরকারের সাতটি দফতরে নিয়োগের জন্য সাতটি প্যানেল জমা দেয় পিএসসি। দফতরগুলি হল স্বাস্থ্য, সেচ, খাদ্য সরবরাহ, নগরোন্নয়ন, কৃষি, কৃষি বিপণন এবং স্কুলশিক্ষা দফতরের সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্প। সাতটি প্যানেলে নাম ছিল প্রায় চার হাজার জনের। বর্তমান রাজ্য সরকার কয়েকটি প্যানেল থেকে ১২০০-র মতো কর্মী নিয়োগ করেছে। কিন্তু অভিযোগ ছিল, স্বাস্থ্য-সহ দু’একটি দফতরে ওই প্যানেল থেকে কোনও নিয়োগ হয়নি। অন্য দফতরে যেখানে নিয়োগ হয়েওছে, সেখানেও নাম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সরকার পিএসসি তালিকার ক্রম মানেনি। নিজের পছন্দ মতো নিয়োগপত্র দিয়েছে।
শুক্রবার মামলাটির শুনানির সময় আবেদনকারীদের আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, রাজ্য সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে, স্বজনপোষণের জন্য ঘুরপথে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ শুরু করেছে। পিএসসি একটি স্বশাসিত সংস্থা। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের জন্য তাদের তৈরি প্যানেল রয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে সেখান থেকে নিয়োগ করাই যুক্তিযুক্ত এবং আইনসঙ্গত। রাজ্য সরকার ওই প্যানেল থেকে কিছু কর্মী নিয়োগ করেছে। কিন্তু তাতেও তালিকার ক্রম মানা হয়নি। রাজ্য সরকার বৈষম্য করেছে, যা আইনত করা যায় না। তার পরে আবার রাজ্য সরকার অনৈতিক ভাবে কিছু চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অস্বচ্ছ এবং বেআইনি।
কী সেই প্রক্রিয়া? ২০১২ সালের ৩০ মার্চ রাজ্য সরকার সদ্য প্রকাশিত একটি বাংলা দৈনিকে ছোট্ট একটি বিজ্ঞাপন দেয়। তাতে বলা হয়, সরকারি কিছু বিভাগে, সংস্থায়, সোসাইটিতে জরুরি ভিত্তিতে অস্থায়ী ভাবে কিছু চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নেওয়া হবে। বিজ্ঞাপন প্রকাশ হওয়ার সাত দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে। জমা দিতে হবে নির্দিষ্ট বক্স নম্বরে। বিজ্ঞাপন প্রকাশ হওয়ার কয়েক মাস পরে সেচ দফতরে ১০৯২টি, কৃষি ও কৃষি বিপণনে ১০১৫টি, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে ৪৬৭টি, শিল্প দফতরে ২০০টি, যুব দফতরে ৫৫টি এবং নগরোন্নয়ন দফতরে ৫০টি পদে নিয়োগের কথা ঘোষণা করা হয়। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিভিন্ন দফতরের সচিবকে একটি নোটশিট পাঠান। তাতে বলা হয়, ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর রাজ্য মন্ত্রিসভা তিন হাজার চতুর্থ শ্রেণির কর্মী অস্থায়ী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই অস্থায়ী কর্মীদের মাসে ৬৬০০ টাকা বেতন দেওয়া হবে। কারা নিযুক্ত হবেন? নামের তালিকা শিল্পমন্ত্রীর দফতর থেকে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
সরকারের এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ বলে মনে করেনি স্যাট-ও। তাদের নির্দেশ, এক মাসের মধ্যে প্যানেলে নাম থাকা ব্যক্তিদের নিয়োগের প্রাক্-প্রক্রিয়া (পুলিশ ভেরিফিকেশন) শেষ করতে হবে। পরের তিন মাসের মধ্যে সবাইকে নিয়োগপত্র দিতে হবে। এই একই বিষয়ে হাইকোর্টে আইনজীবী বাসবী রায়চৌধুরীর দায়ের করা একটি জনস্বার্থের মামলাও চলছে। প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে ১৫ দিনের মধ্যে হলফনামা দিয়ে তাদের বক্তব্য জানাতে বলেছে। প্রশাসনিক আদালত এবং হাইকোর্টের সাঁড়াশি চাপ থেকে মুক্তির জন্য সরকার আইনি পরামর্শ নিতে শুরু করেছে।
বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বলেন, “আমি যখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলাম, তখনই স্বাস্থ্য-সহ কয়েকটি দফতরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের তালিকা পাঠিয়েছিল পিএসসি। নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় তখন নিয়োগ করা যায়নি। পরে নতুন সরকার এসে প্যানেল মেনে নিয়োগ করলে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সমস্যা কিছুটা মিটত।” বর্তমান রাজ্য সরকার যে ভাবে কর্মী নিয়োগ করেছে, তা নিয়েও কটাক্ষ করেন সূর্যকান্তবাবু। তিনি বলেন, “কাদের নিতে হবে, মন্ত্রী তার লিখিত নির্দেশ দিচ্ছেন, এমন উদ্ভট ব্যাপার আগে দেখিনি!” সূর্যকান্তবাবুর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে পার্থবাবুর মন্তব্য, “নিয়োগই যদি করতে পারবে না, তবে প্যানেল তৈরি করতে গেল কেন আগের সরকার? ওরা তো জানতই ভোট আসছে!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.