সঠিক হারে ভাড়া না বাড়ানোয় বেসরকারি বাস উঠে যাচ্ছে বলে এত দিন অভিযোগ ছিল বাস-মালিকদের। শুক্রবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বাস কমে যাওয়ার কথা স্বীকার করে নিলেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র স্বয়ং।
পরিবহণমন্ত্রী এ দিন বিধানসভায় স্বীকার করেছেন, “রাজ্যের বেসরকারি পরিবহণের ৭০% বাসই বসে গিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাম আমলের চেয়ে প্রতিদিন ৪০০ সরকারি বাস বেশি চালানো হচ্ছে।” মন্ত্রীর কথা শুনে বাস-মালিক সংগঠনের নেতাদের প্রতিক্রিয়া, “মন্ত্রী স্বীকার করেছেন, ভাল কথা। কিন্তু কী করলে আবার রাস্তায় বাস নামতে পারে, তা নিয়েও সরকার চিন্তাভাবনা করুক।”
নতুন সরকারের আমলে গত দু’বছরে কয়েক বার জ্বালানির দাম বেড়েছে। দাম বেড়েছে বাসের বিভিন্ন সরঞ্জামেরও। অথচ মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তিতে সেই তুলনায় বাসের ভাড়া বাড়েনি। পরিসংখ্যানই বলছে, সরকারের এই মনোভাবের জন্য বাস চালানোর ক্ষতি বেড়ে চলেছে দিন দিন। অভিযোগ, বাধ্য হয়ে অনেক রুটে বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন বাস-মালিকরা।
এত দিন বাস-মালিক সংগঠনগুলির পক্ষ থেকেই এই সব অভিযোগ উঠছিল। আর সেই অভিযোগ প্রকাশ্যে নস্যাৎ করে এসেছেন পরিবহণমন্ত্রী। এ দিন কিন্তু বিধানসভায় কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্রের প্রশ্নের উত্তরে বাস-মালিকদের অভিযোগ স্বীকার করে নিলেন পরিবহণমন্ত্রী। মদনবাবুর স্বীকারোক্তি শুনে বেসরকারি বাস-মালিকদের সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস-এর নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এত দিনে মন্ত্রীর কথায় এটুকু অন্তত প্রমাণিত হল যে, আমরা মিথ্যে বলিনি।”
মিনিবাস কো-অপারেটিভ কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা অবশেষ দাঁর কথায়, “প্রতি মাসেই ডিজেলের দাম বাড়ছে। বাড়ছে বিমা, যন্ত্রাংশ, গাড়ির মোবিলের খরচও। অথচ বাস থেকে কোনও আয়ই হচ্ছে না। এ রকম চলতে থাকলে বাকি বাস-মালিকরা আর কত দিন রাস্তায় বাস নামাতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।” |
বাস-মালিকদের যুক্তি, সরকারি পরিবহণে ভর্তুকি আছে। কিন্তু বেসরকারি বাস-মালিকদের ক্ষতির অর্থ পূরণ করতে হয় ঘর থেকে। মালিকরা তাই মনে করছেন, ভাড়া বাড়ানোর কথা না ভাবলে অচিরেই রাজ্য পরিবহণ ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়বে। তপনবাবুর দাবি, “এ রাজ্যে কৃষির পরেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ পরিবহণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। তাই পরিবহণ শিল্প মুখ থুবড়ে পড়লে বেকারের সংখ্যাও বাড়বে।”
সরকার এখন কী ভাবছে? পরিবহণমন্ত্রীর স্বীকারোক্তির প্রেক্ষিতে এই প্রশ্নটাই সবার আগে উঠছে। কিন্তু জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছের কথা মাথায় রেখে ভাড়া বাড়ানোর পথে হাঁটতে এখনও রাজি নয় রাজ্য পরিবহণ দফতর। তার বদলে মন্ত্রী বলছেন, “সরকার নতুন বাস কিনে চালাবে। আমরা ইতিমধ্যেই ৩০০ বাস কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এপ্রিল মাসের কেনার কাজ শেষ হবে।’’ বাম আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া রুটে ফের বাস চালানো হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
কিন্তু বাস কিনলেই সমস্যা কি মিটবে? এমনটা মনে করছেন না পরিবহণ দফতরের কর্তারা। তাঁদের একাংশের মতে, নতুন বাস কিনলে সরকারি পরিবহণের মান বাড়তে পারে। কিন্তু এ রাজ্যে পরিবহণ ব্যবস্থার বেশির ভাগটাই রয়েছে বেসরকারি হাতে। এই অবস্থায় সরকার নতুন কিছু বাস কিনেও বেসরকারি বাস বসে যাওয়ার ক্ষতি সামাল দিতে পারবে না। তার জন্য বেসরকারি পরিবহণ ব্যবস্থাকে লাভজনক করে তোলা প্রয়োজন। আর সেটা করার অন্যতম উপায় হল, ভাড়ার হার পুনর্বিন্যাস করা। ভাড়া না বাড়িয়ে সরকারি বাস নামিয়ে দীর্ঘমেয়াদে কোনও সমাধান হবে না বলেই তাঁদের মত। |