সম্প্রতি টাউন হলে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করেছিলেন ডা. গৌতম খাস্তগীর। অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিক ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শ্রাবণী সেন এবং আবৃত্তি শিল্পী শোভনসুন্দর বসু ও ঐশ্বর্যা বসু। আবৃত্তির ব্যান্ড ‘বৃষ্টি’-র কর্ণধার শোভনসুন্দর বসুর গভীর দ্যোতনাময় উচ্চারণ ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।” গভীর দৃঢ়তায় শ্রোতারা যেন উত্তেজনায় টানটান হয়ে বসলেন। শিল্পীর সার্থকতা সেখানেই। মঞ্চে চার জন যন্ত্রশিল্পীর যন্ত্রানুষঙ্গে ও শোভনসুন্দরের কণ্ঠে মূর্ত হয়ে উঠল সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ কবিতাটি। সেদিনের সন্ধ্যার মর্মস্পর্শী পরিবেশের মূল সুরটিই ধরা ছিল শোভনসুন্দর-ঐশ্বর্যার আবৃত্তিগুলির মধ্যে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে আয়োজকরা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন তা পূর্ণ হয়েছে শিল্পীদের আন্তরিকতায়। |
রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে নিয়ে লেখা ‘দুই বাংলা’ কবিতা শ্রোতাদের মন জয় করে নিল। মাত্রাবৃত্ত ছন্দের সঠিক রূপ কণ্ঠ ও তালবাদ্যের ব্যবহারে ‘ছাত্রদলের গান’ কবিতাটির ছান্দিক রূপ তালে-তালে মনোগ্রাহী হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথের ‘শিশু’ ও ‘শিশু ভোলানাথ’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলির নিবেদনে শোভনসুন্দর শিশুমনের যে স্বপ্নময় ছবি আঁকলেন তা সত্যিই অনবদ্য। ‘আমার দুর্গা’ ও ‘বেহালার ছেলেটা’ কবিতাগুলির আবৃত্তিতে ঐশ্বর্যা বসু ছিলেন সন্নিষ্ঠ ও স্বচ্ছন্দ। তাঁর অন্য আবৃত্তিগুলিতেও আন্তরিকতার অভাব ছিল না। বিশেষ করে ‘ভাল থেকো’ কবিতায়।
রাজা সেনগুপ্ত ও তাঁর সম্প্রদায়ের কবিতার সঙ্গে মঞ্চে সঙ্গীত সমারোহ মন্দ লাগে না। মঞ্চে আলোর ব্যবহারও প্রশংসনীয়। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে শ্রাবণী সেন শুরু করলেন ‘আলোকের এই ঝরনাধারায়’ দিয়ে। গানে গানে ফুটে উঠল প্রেমের আনন্দ, আকুতি, বিস্ময়, বিরহ ও বিচ্ছেদ। সে দিন শ্রাবণীর বাছাই করা প্রতিটি গানেই শ্রোতাদের সে কী উচ্ছ্বাস, উন্মাদনা। ‘ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি’, ‘দাঁড়িয়ে আছো তুমি’ গানে অননুকরণীয় ভঙ্গি ও নিজস্ব ভাবনায় রঙিন করে দিলেন শ্রোতাদের।
শেষ গান ছিল ‘পুরানো সে দিনের কথা’। এক অপূর্ব অনুভূতি। |