উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
শিলান্যাস
সেতুবন্ধের প্রত্যাশায়
কটির বয়স চল্লিশ, আর একটির পঁয়ত্রিশ। দু’টিরই অবস্থা জরাজীর্ণ। বিপজ্জনক জেনেও প্রতিনিয়ত গড়ে কয়েক হাজার মানুষ ব্যবহার করতেন বরাহনগর ও দক্ষিণ দমদম পুরসভা এলাকায় বাগজোলা খালের উপর ওই দু’টি কাঠের সেতু। কেননা, পারাপারের আর কোনও সুবিধাজনক বিকল্প ছিল না। ভাঙাচোরা সেতুতে প্রায়ই ঘটত দুর্ঘটনাও। অথচ দীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানালেও কাঠের সেতুর পরিবর্তে কংক্রিটের পাকা সেতু তৈরির জন্য উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি স্থানীয় বা রাজ্য প্রশাসনকে, এমনই অভিযোগ স্থানীয় মানুষের।
অবশেষে রাজ্য সেচ ও জলপথ দফতর কাঠের বদলে এক লেনের পাকা সেতু তৈরির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
সম্প্রতি দুই জায়গাতেই পাকা সেতু তৈরির শিলান্যাসও করলেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় এবং সেচ ও জলপথ মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেচমন্ত্রী বলেন, “আপার বাগজোলা খালের সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৭০ শতাংশ পলি তোলার কাজ হয়ে গিয়েছে। সৌন্দর্যায়ন ও অন্যান্য কাজও হবে। সেই সঙ্গে খালের উপরে যে সমস্ত কাঠের সেতু রয়েছে সেগুলিকেও পাকা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।” সেচ ও জলপথ দফতরের মেট্রোপলিটন ড্রেনেজ ডিভিশন-২-এর এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সোমনাথ দেব জানিয়েছেন, ফুটপাথহীন এই সেতু দিয়ে বড় লরি ও বড় বাস বাদে যাবতীয় গাড়ি যাতায়াত করতে পারবে। বর্ষায় জল জমার সমস্যা এড়াতে খালের সর্বোচ্চ জলতল থেকে ৩ ফুট উচ্চতায় সেতু দু’টি তৈরি হবে।
বরাহনগর পুরসভার কালীমাতা কলোনি এলাকায় বাগজোলা খালের উপর রয়েছে ৩৫ বছরের পুরনো ‘কালীমাতা কলোনি কাঠ পোল’। সেতুর এক দিকে রয়েছে বরাহনগরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কালীমাতা কলোনি-সহ সতীন সেন নগর ও নিরঞ্জন সেন নগর এবং অন্য দিকে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের রবীন্দ্রনগর, লেকভিউ পার্ক, সুভাষপল্লি ও বনহুগলি এলাকা। দীর্ঘ দিন ধরে সেতুর অবস্থা ছিল বেহাল। দুই ওয়ার্ডের সংযোগকারী এই সেতু দিয়ে কোনও গাড়ি যাতায়াত করতে পারত না।
অনেক পথ ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছতে হত যানবাহনকে। ডানলপ মোড় থেকে রবীন্দ্রনগর রোড ধরে ওই কাঠের সেতু পার হয়ে ১ নম্বর ওয়ার্ডে ঢোকার সুবিধা রয়েছে। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স, দমকল কিংবা বড় গাড়িকে ডানলপ মোড় থেকে দক্ষিণেশ্বর গিয়ে তারপর বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে তবেই গন্তব্যে পৌঁছতে হত। স্থানীয় বাসিন্দা অমর রায় বর্ধন বলেন, “সব থেকে বেশি সমস্যা হত বর্ষায়। বাগজোলার জলে সেতু ডুবে গেলে চলাচল করা যেত না।” আবার কাঠের সেতুর স্তম্ভ গুলিতে বিভিন্ন আবর্জনা আটকে জল জমার সমস্যা আরও বেড়ে যেত বলেও জানিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা অঞ্জন পাল।
বেদিয়াপাড়ার প্রস্তাবিত সেতুর শিলান্যাস অনুষ্ঠানে (বাঁ দিক থেকে) জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক,
তাপস রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্রাত্য বসু, সুজিত বসু, সৌগত রায় প্রমুখ।
অবশেষে বরাহনগরের মানুষের সুবিধার্থে ওই কাঠের সেতু সরিয়ে সেচ ও জলপথ দফতর একটি এক লেনের কংক্রিটের সেতু তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দফতর সূত্রে খবর, ১৬ মিটার লম্বা এই সেতু তৈরির জন্য ৮৭ লক্ষ ৩১ হাজার ৬৯৮ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। আগামী জানুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ হবে বলেও জানিয়েছেন দফতরের কর্তারা। বরাহনগরের পুরপ্রধান তৃণমূলের অপর্ণা মৌলিক বলেন, “পাকা সেতুর জন্য বাম আমলে বহু বার দাবি জানিয়েও কিছু হয়নি। পাকা সেতু হলে লক্ষাধিক মানুষ উপকৃত হবেন।”
দক্ষিণ দমদম পুরসভার বেদিয়াপাড়ায় বাগজোলা খালের উপরে রয়েছে ৪০ বছরের পুরনো একটি কাঠের সেতু। স্থানীয়েরা জানান, সেতুটির এক দিকে রয়েছে ১১ নম্বর ওয়ার্ড এবং অন্য দিকে ১ থেকে ৬ নম্বর ওয়ার্ড। দমদম ক্যান্টনমেন্টের সঙ্গে মাঠকল, প্রমোদনগর, দুর্গানগর এবং বেদিয়াপাড়া এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ রক্ষা করছে এই কাঠের সেতুটি। স্থানীয় তৃণমূল নেতা দয়াময় ভট্টাচার্য জানান, ’৭৩ সালে স্থানীয় মানুষের দাবিতে বাগজোলা খালের উপরে কাঠের সেতুটি তৈরি করেন তৎকালীন কংগ্রেসের বিধায়ক লালবাহাদুর সিংহ। এর পরে বহু বার সেতুটির ভগ্ন দশা হলেও প্রশাসনের তরফে জোড়াতাপ্পি দিয়ে মেরামতি ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি।
বাসিন্দারা আরও জানান, বর্ষায় খালের জল বেড়ে গেলে সেতু পারাপার করা বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। মাস ছয়েক আগে সেতুর একধার ভেঙে একটি ভ্যানরিকশা খালে পড়ে এক জন মারা যান। বরাহনগরের মতো এখানেও ২৬ মিটার লম্বা কংক্রিটের সেতু তৈরি করবে সেচ দফতর। কাজের জন্য ১ কোটি ৮ লক্ষ ২৫ হাজার ২২২ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক ব্রাত্য বসু বলেন, “আগের সেচমন্ত্রীকে বহু বার বলেছিলাম পাকা সেতুর জন্য। কিন্তু কাজ হয়নি।”

ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.