|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত |
বিপন্ন পাখি |
মরণঝাঁপ |
প্রসেনজিৎ পাঠক |
এ যেন মরণঝাঁপ!
এক দিন-দু’দিন নয়, বছরের পর বছর।
রাজারহাটের ডাকবাংলোয় পঞ্চায়েত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সাজাতে লাগানো হয়েছিল বিশেষ ধরনের কাচ। সেই কাচই পাখিদের জন্য কার্যত মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছরে ৫০-৬০টি পাখি ওই কাচে ধাক্কা খেয়ে মারা গেলেও এ নিয়ে সব মহলই উদাসীন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজারহাট ব্লকের আর বি-১ নম্বর পঞ্চায়েতের ডাকবাংলো বাসস্টপে ২০০১ নাগাদ উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের উদ্যোগে তৈরি হয় ‘সত্যজিৎ রায় ভবন’ নামে একটি প্রেক্ষাগৃহ ও পঞ্চায়েত প্রশিক্ষণকেন্দ্র। প্রেক্ষাগৃহের দোতলায় যাওয়ার সিঁড়ির বাইরের দিকে এবং ভবনের প্রবেশপথের উপর থেকে নীচে দু’পাশে দু’সারিতে লাগানো হয় ওই বিশেষ ধরনের কাচ (ওয়ানওয়ে গ্লাস)।
|
|
ওই কাচের ভিতর থেকে বাইরেটা দেখা গেলেও বাইরে থেকে ভবনের ভিতরের অংশ দেখা যায় না। দিনের বেলায় কাচগুলির বাইরে দিক আয়নার মতো হয়ে ওঠে। সত্যজিৎ রায় ভবনের সামনে রয়েছে বেশ কিছু বড় বড় গাছপালা। ভবনের পাঁচিলের মধ্যেও রয়েছে প্রচুর ফলের গাছ। দিনে ওই কাচগুলিতে আকাশ ও গাছপালার প্রতিবিম্ব স্পষ্ট ফুটে ওঠে। এতেই বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় পাখিদের মধ্যে। দূর থেকে উড়ে আসা এবং আশপাশের গাছে বসে থাকা পাখিরা গাছ ভেবে বসতে গিয়ে ওই কাচগুলিতে গিয়ে ধাক্কা মেরে মাটিতে পড়ে মারা যায়।
বাসিন্দারা জানান, অনেক ক্ষেত্রেই দ্রুত উড়ে আসার সময়ে শক্ত কাচে ধাক্কা লেগে মারা যায় পায়রা, ঘুঘু, হরিয়াল, কোকিল, বউ কথা কও, মাছরাঙা, বুলবুলি প্রভৃতি পাখি। এক বার একটি পেঁচার ধাক্কায় কাচে ফাটলও ধরে বলে এলাকাবাসীরা জানান। তাঁদের অভিযোগ, প্রায় প্রতি দিনই আলো ফোটার পর থেকে শুরু হয় পাখি মৃত্যুর ঘটনা। ফলের মরসুমেই বেশি পাখি মারা যায়।
সত্যজিৎ রায় ভবনের এক কর্মী জানালেন, গাছে বসে থাকা এবং দূর থেকে উড়ে আসা পাখিদের কাছে ওই আয়না-সদৃশ কাচগুলি উন্মুক্ত বলেই মনে হয়। ফলে তারা উড়ে গিয়ে সজোরে ধাক্কা খায় ওই কাচে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পাখিদের ঠোঁট, ঘাড় ও বুক ফেটে যায়। নীচে পড়ে গিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই মারা যায় তারা। ভবনের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের আক্ষেপ, বহু ক্ষেত্রেই পরিচর্যা করেও পাখিদের বাঁচানো যায় না। কাচের গায়ে কয়েকটি জায়গায় রক্তের দাগও লেগে আছে। |
|
স্থানীয় রণজিৎ মণ্ডলের বক্তব্য, “এই ধরনের কাচ পাখিদের কাছে বিভ্রান্তিকর। অনেক সময় বাড়ির জানলায় লাগানো এই ধরনের কাচের গায়ে কাক বা অন্য পাখিদের ঠোকরাতেও দেখা যায়। তাই ভবনের গায়ে জানলার জায়গায় লাগানো কাচগুলি পাখিদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক! এখন কিছু দিয়ে কাচগুলোকে ঢেকে দিলে অন্তত পাখিদের বাঁচানো যাবে।” সত্যজিৎ রায় ভবনের কেয়ারটেকার বিনয় মণ্ডল বলেন, “কাচে ধাক্কা লেগে পাখি মরার ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটে। এখন তবুও কিছুটা কম। কিন্তু এ বার ব্যাপক ভাবে ঘটনাটি ঘটলেই জেলা পরিষদে সবিস্তার রিপোর্ট দেওয়া হবে!”
পক্ষীবিশারদ কুশল মুখোপাধ্যায় বলেন, “বছরে ৫০ থেকে ৬০টি পাখির মৃত্যুর বিষয়টি যথেষ্ট আশঙ্কাজনক। পাখি অনেক সময়েই বুঝতে না পেরে জলে বা কাচে নিজের প্রতিবিম্বের সঙ্গে ঝগড়াও শুরু করে দেয়। জেলা পরিষদকে অনুরোধ জানাব, যাতে অবিলম্বে ওই কাচের উপরে কোনও আচ্ছাদন দেওয়া হয় বা অন্য কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের স্থানীয় সদস্য সিপিএমের আলপনা দাস বলেন, “আগে জানতাম না। জানলে আরও তৎপর হওয়া যেত। দ্রুত কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় দেখছি।” জেলা সভাধিপতি সিপিএমের ভরত দাস বলেন, “বিষয়টি জানতাম না। জেলা পরিষদের তরফে যাঁরা ওই ভবনের দায়িত্বপ্রাপ্ত তাঁরা এত দিন কিছুই জানাননি। দ্রুত কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় দেখছি।” |
ছবি: সুদীপ ঘোষ |
|
|
|
|
|