ফোনে যখন তাঁকে ধরা হল, দ্রুত বললেন “বৃহস্পতিবারই ফিরেছি কাজাখস্তান থেকে। আজই ভুবনেশ্বর রওনা হচ্ছি। এই টুর্নামেন্টটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট। ক্লান্ত থাকলেও যেতে হবে।” কথা শুনে কে বলবে ফোনের ওধারে সদ্য মেয়েদের বিশ্ব দলগত দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জজয়ী মেরি অ্যান গোমস। যাঁর কাছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ পদকের সমান গুরুত্বের কোনও আমন্ত্রণী টুর্নামেন্টও!
চব্বিশ বছরের মেরিকে অবশ্য যাঁরা চেনেন, তাঁরা বাংলার এই দাবাড়ুর এহেন ‘হেকটিক শিডিউল’-এ মোটেই অবাক হবেন না। তিন বারের যুব এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন পরিচিত এই রকম পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের জন্যই। কাজাখস্তানের প্রস্তুতির জন্যও তো বেশি সময় ছিল না তাঁর হাতে। বলছিলেন, “ফেব্রুয়ারিতেই তো জানতে পারলাম ওয়ার্ল্ড চেস টিম চ্যাম্পিয়নশিপে যেতে হবে। তার উপর আমাদের দেশের প্রথম তিন মেয়ে দাবাড়ু দলে ছিল না।” তবু রাশিয়া চিনের মতো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীর চ্যালেঞ্জে ঘাবড়াননি বাংলার মেরি। কাজাখস্তানে চতুর্থ বোর্ডে ব্যক্তিগত ব্রোঞ্জ জিতে শহরে ফেরার চব্বিশ ঘণ্টা পরেই ছুটলেন ভুবনেশ্বর ‘ইনভিটেশনাল প্লে-অফ টুর্নামেন্টে’।
২০০৫ থেকে দিব্যেন্দু বড়ুয়ার অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিং নিচ্ছেন মেরি। শিষ্যার আম্তর্জাতিক সাফল্যে স্বভাবতই খুশি দিব্যেন্দু এ দিন বলছিলেন, ‘‘নিঃসন্দেহে বড় কৃতিত্ব। খুব কঠিন টুর্নামেন্ট ছিল। মেরি মেয়েদের আই এম এবং জিএম টার্গেট আগেই পেরিয়েছে। কিছু দিন আগে পুরুষদের আইএম ধাপেও পা রেখেছে। এ বার পুরুষদের জিএম এর দিকেও এক ধাপ এগোল।”
মেরির ধারাবাহিকতা অসাধারণ। দাবা অলিম্পিয়াডে রুপো, পাঁচটি এশিয়ান খেতাব, বিশ্ব যুব দাবায় ব্রোঞ্জ, কমনওয়েলথ দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের ব্রোঞ্জ এবং দু’বারের জাতীয় মহিলা চ্যাম্পিয়ন। কী ভাবে একের পর এক লক্ষ্যভেদ করছেন? ফেডেরারের ভক্ত মেরির কথায়, ‘‘আমার সামনে যা-ই আসুক না কেন, এতটুকু ঘাবড়াই না। বিশ্ব টিম চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে বসেও চাপ নিইনি। তা ছাড়া টিমের সবাই আমরা একে অপরকে খুব ভাল চিনতাম। এতে মানসিক ভাবে খুব সুবিধে হয়েছিল। ন’টা ম্যাচই জিতেছি। প্রচুর আত্মবিশ্বাস ছিল।’’ তাঁর চূড়ান্ত লক্ষ্য জুডিথ পোলগার হওয়া। |