পায়ের জোরে
রাঙিয়ে দিয়ে যাওয়া
ন্ম থেকেই অকেজো দু’হাত। তাতে কী? পায়ের তুলির টানেই তাঁর ক্যানভাসে শরীর পাচ্ছেন অমিতাভ বচ্চন থেকে সচিন থেকে রবীন্দ্রনাথ। তিনি রঞ্জন কুর্মি, বয়স বছর একত্রিশ, ঠিকানা হাওড়ার পঞ্চাননতলা রোডের একচিলতে ঘর। মাত্র আড়াই বছর বয়সে বাবাকে হারান রঞ্জন। দাদা, দিদি ও মা-র অনটনের সংসারে মাধ্যমিকের পর আর পড়া হয়ে ওঠেনি তাঁর। বাঁচার তাগিদে ছবি আঁকার নেশাকেই পেশা করলেন। পা দিয়েই তুলি চলল ক্যানভাসে। স্বীকৃতিস্বরূপ অর্জন করেছেন নানা পুরস্কার। নেহরু চিলড্রেন্স মিশন ও বঙ্গীয় সঙ্গীত পরিষদ-আয়োজিত রাজ্যব্যাপী প্রতিযোগিতায় চার চার বার সেরার শিরোপা পেয়েছেন।
অ্যালবামের ছবি দেখে প্রয়াত বাবার একটা বড় ছবি এঁকেছেন তিনি। বললেন, “বাবাকে তো আর দেখাতে পারলাম না যে তাঁর পঙ্গু ছেলেও আঁকতে পারে। তাই বাবার ছবি আঁকলাম। যদি কোথাও থেকে দেখতে পান।” বলতে গিয়ে চোখে জল এল শিল্পীর। জানালেন, গ্যাসের ওভেন জ্বালানো থেকে শুরু করে চা তৈরি, ভাত রান্না সবই করেন পা দিয়ে। পা দিয়েই চালান মোবাইল ফোনও। বাড়ি বাড়ি গিয়ে আঁকা শিখিয়ে রোজগার করতে হয় রঞ্জনকে। সম্প্রতি একটি আঁকার স্কুলও চালু করেছেন। সংসারের খরচ চালাতে বৃদ্ধা মাকে আয়ার কাজ করতে হয়। দাদা বেসরকারি কর্মী। অভাব নিত্যসঙ্গী। তাঁর অভিযোগ, দরখাস্ত করে বহু আবেদনেও মেলেনি প্রতিবন্ধী ভাতা। মা কল্যাণী কুর্মি বললেন, “ছেলের জন্য গর্ব হয়, দুশ্চিন্তাও। চাকরি নেই, আমি না থাকলে কী হবে?” স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “ওই ব্যক্তি কেন ভাতা পাচ্ছেন না জানি না। আমার কাছে এলে অবশ্যই সাধ্যমতো চেষ্টা করব।”

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.