কাজ সেরে সাইকেলে ফেরার পথে বাড়ির অদূরে গুলিতে খুন হলেন এক প্রোমোটার। বৃহস্পতিবার রাতে ত্রিবেণীর মনসাতলার ঘটনা। নিহতের নাম কমল দাস (৫২)। বাড়ি শিবপুর গাঁধী কলোনিতে। জমি সংক্রান্ত একটি বিবাদ মেটাতে যাওয়ায় তাঁকে খুনের অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশী তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে শুক্রবার সকালে গ্রেফতার করা হয়েছে জীবন মণ্ডল এবং বাপন মণ্ডল নামে দু’জনকে। আর এক ভাই রতন মণ্ডলকে আগের রাতেই মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় জনতা। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
|
কমল |
হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) তথাগত বসু বলেন, “জমি নিয়ে একটি সমস্যা মেটাতে গিয়েই ওই প্রৌঢ় খুন হয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। নিহতের ভাইয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে দুই ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযুক্ত অপর জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সুস্থ হলে তাকেও গ্রেফতার করা হবে। খুনের পিছনে আর কেউ জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই মণ্ডল পরিবার বেশ কিছু দিন ধরেই একটি জমি নিজেদের দাবি করে বিক্রির চেষ্টা করছে। গাঁধী কলোনির একটি ক্লাব জমিটির একাংশ কেনার সিদ্ধান্ত নেয়।
কিন্তু মণ্ডল পরিবার রাজি হয়নি। এ নিয়ে দু’পক্ষের বিবাদ চলছিলই। কমলবাবু ক্লাবের পক্ষ নিয়ে বিবাদ মেটাতে উদ্যোগী হন। এ জন্য মণ্ডল পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে হুমকিও দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টা নাগাদ বাড়ি ফেরার সময়ে তিন যুবক কমলবাবুর পথ আটকায় মনসাতলায়। তিনি পাশ কাটিয়ে বেরোতে গেলে পিছন থেকে তাঁকে লক্ষ করে দু’টি গুলি ছোড়া হয়। একটি গুলি কমলবাবুর ডান কাঁধের নীচে লাগে। অন্যটি পিঠে লেগে বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান কমলবাবু। |
গুলির শব্দ এবং কমলবাবুর চিৎকারে এলাকার লোকজন বেরিয়ে আসেন। দুষ্কৃতীরা পালাতে থাকে। জনতা ধাওয়া করে রতন মণ্ডলকে ধরে ফেলে। তার পরে শুরু হয় মার। শেষে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠায়। রতনকেও ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শুক্রবার সকালে তিন ভাইয়ের তিনটি বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় জনতা। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকতেন কমলবাবু। মেয়ে এম এ পাশ করেছেন। ছেলে এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। কমলবাবুর স্ত্রী শেফালিদেবী শুক্রবার বলেন, “স্বামী ক্লাবের পক্ষ নেওয়ায় জীবন-বাপনেরা হুমকি দিচ্ছিল। ওরা যে খুনই করে ফেলবে ভাবিনি।” ক্লাবের সভাপতি সুধামা দাস বলেন, “আমরা দাম দিয়েই জমির একাংশ কিনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মণ্ডল ভাইয়েরা রাজি হয়নি। কমলবাবু গোলমাল থামাতে চেয়েছিলেন। এ জন্যই ওরা ওঁকে খুন করল।” কমলবাবুকে যে এ ভাবে খুন হতে হবে, তা মানতে পারছেন না তাঁর পড়শিরাও। তাঁরা জানান, এলাকার সকলের বিপদে-আপদে কমলবাবু ঝাঁপিয়ে পড়তেন। |